হামাসের উদ্ভব-কি চায় তারা?

বর্তমানে সারাবিশ্বের অন্যতম প্রধান শিরোনাম "হামাস"। ৭ই অক্টোবার ২০২৩ ইং ইসরাইলের উপর ফিলিস্তিনের অন্যতম সশস্ত্র গোষ্ঠী "হামাস" এর বড় ধরনের রকেট হামলা পুরো বিশ্বকে অবাক করে দেয়।


ইসরাইলের আধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা- "আয়রন ডোমকে" কিছু বুঝতে না দিয়েই পাঁচ হাজার রকেট হামলা পুরো বিশ্বকে আরও একবার ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের দিকে মনোযোগ কাড়তে বাধ্য করে। আবারও ফিলিস্তিনকে মুক্তির পথ দেখাতে ও তাদের দাবি আদায়ে "হামাস" এর হামলা তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

হামাস শব্দের অর্থ কি?

হামাস একটি ইসলামি শব্দ। আরবিতে "হামাস" এর অর্থ সাহস বা উদ্যম। আবার অনেক ক্ষেত্রে "হামাস" অর্থ গভীর দেশপ্রেম হিসাবেও পরিচিতি পায়।

হামাস কি এবং কেন?

মূলত হরকাত আল-মুকাওয়ামা আল ইসলামিয়া নামে ফিলিস্তিনের একটি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠি যা হামাস নামে পরিচিত। ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর এ ইসরাইলিদের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনের প্রথম বিদ্রোহ শুরু হয় যা "ইন্তিফাদা" নামে পরিচিত। "ইন্তিফাদা" মূল দাবি ছিল গাজা ও ফিলিস্তিন এর পশ্চিম তীর হতে ইসরাইলি দখলদারিত্ব হতে মুক্তি। এবং এই দাবি থেকেই হামাসের যাত্রা শুরু।

ফিলিস্তিনে দুটি দল হামাস ও ফাতাহ বেশ সক্রিয়। ২০০৬ সালে ইয়াসির আরাফাত মৃত্যুবরণ করলে এই দুইটি দেশের মধ্যে দন্দ তৈরি হয়। ২০০৬ সালের নির্বাচনের পর এই দ্বন্দ চরম আকার ধারন করে। ২০০৬ সালে হামাস নির্বাচনে জয়ী হয় এবং ২০০৭ সালে গাজার নিয়ন্ত্রণ পায়। এখান থেকেই দলটি এখন পর্যন্ত তাদের আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে।
হামাসের প্রতিষ্ঠাতা কে?

ইসরাইলি দখলদারিত্বে বাস্তুচ্যুত অনেক ফিলিস্তিনি মিশরে আশ্রয় গ্রহণ করেন। এসব ফিলিস্তিনের মধ্যে অনেকেই "মুসলিম ব্রাদারহুড" নামে পরিচিত মিশরিয় একটি ইসলামী রাজনৈতিক দলের আদর্শে দীক্ষা নেয়।


আহমেদ ইয়াসিন ও আব্দেল আজিজ আল-রানতিসি এমনই দুজন ফিলিস্তিনি, যারা ১৯৮৭ সালে হামাস প্রতিষ্ঠা করেন।

হামাসের বর্তমান প্রধান কে?

২০১৭ সাল থেকে ইসমাইল হানিয়া হামাসের প্রধান হিসাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০২১ সালে সংগঠনের অভ্যন্তরীন ভোটাভুটিতে তিনি ২য় বারের মতো হামাসের প্রধান হিসাবে পুননির্বচিত হন।

তিনি মূলত শেখ আহমেদ ইয়াসিনের নিকটস্থ সঙ্গী ছিলেন। ২০০৪ সালে আহমেদ ইয়াসিন বিমান হামলাতে নিহত হলে ইসমাইল হানিয়া প্রভাব আরও বিস্তৃত হয়। ২০০৬ সালের ফিলিস্তিনের নির্বাচনের পর হামাস জয়ী হলে ইসমাইল হানিয়া ফিলিস্তিনের প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু অনেক প্রভাবশালী দেশ যেমনঃ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইসরাইল সহ আরও অনেকে "হামাস" কে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে আখ্যা দেয়। ফলে হামাস শুধুমাত্র ফিলিস্তিন এর পশ্চিম তীর ও গাজা উপত্যকায় নিয়ন্ত্রন ধরে রাখতে সক্ষম হয়।

হামাসের উদ্দেশ্য কি?

হামাস মূলত দুইটি উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়- একটি হল ইসরাইল এর বিরুদ্ধে তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখা এবং ফিলিস্তিনের বিভিন্ন সমাজকল্যানমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করা। মূলত ফিলিস্তিনিদের আত্নরক্ষা, স্বাধীনতা ও সার্বিক উন্নয়নই হামাসের প্রধান উদ্দেশ্য।

হামাসের মূল কথা হল- যদি ইসরাইল ১৯৬৭ এর পূর্বের সিমান্তে চলে যায় এবং ফিলিস্তিনি শরনার্থীদের ফিরে যেতে দিলে যুদ্ধবিরতি মেনে নিবে এবং মুসলিম ব্রাদারহুডের সাথে সম্পর্কের সমাপ্তি করবে।

হামাসের সমর্থক কারা?

হামাসের একটি সাংস্কৃতিক শাখা রয়েছে যা দাওয়াহ নামে পরিচিত। এছাড়াও "ইজ আদ দিন আল কাসাম বিগ্রেড" নামক একটি সামরিক শাখাও রয়েছে। হামাস মূলত ইরান দ্বারা সমর্থিত এবং সিরিয়া ও লেবাননের ইসলামপন্থি দল হিজবুল্লাহ অন্তর্ভুক্ত একটি ব্লকের অংশ। ফিলিস্তিন অঞ্চল এবং মধ্যপ্রাচ্যের ইরান, ইয়েমেন এবং সিরিয়া হামাসের সমর্থনে রয়েছে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url