সহজেই গোবর থেকে জৈব সার তৈরি পদ্ধতি

বর্তমানে রাসায়নিক সারের ব্যবহারের ফলে মাটি তার উর্বরা শক্তি হারাচ্ছে। তাই গুনগত মানের ফসল পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রাসায়নিক সারের অধিক ব্যবহার একদিকে যেমন উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে, তেমনি জমির গুনগত মানও কমিয়ে দিচ্ছে। তাই মাটির গুনগত মান ঠিক রাখার জন্য জৈব সারের বিকল্প নেই। বর্তমানে চাষিরা চাইলে খুব সহজেই গোবর থেকে জৈব সার তৈরি করতে পারেন। 


জৈব সার প্রস্তুতে এবং এর সংরক্ষণে চাষিদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে। এই পোষ্টে মূলত কিভাবে সহজেই গরুর গোবর থেকে জৈব সার তৈরি করা যায় তার বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ভূমিকা

বর্তমনে অনেকেই বাণিজ্যিক ভাবে খামারে গরু পালন করছেন। আবার অনেকে তার নিজ বাসাবাড়িতেও গরু পালন করছেন। তারা যেমন গরুর গোবর থেকে জৈব সার তৈরি করে নিজেদের আবাদি জমিতে বিনে খরচে ব্যবহার করতে পারেন তেমনি অন্যের কাছে এই সার বিক্রির মাধ্যমে বাণিজ্যিক ভাবেও লাভবান হতে পারেন।

তাই গোবরের জৈব সার এবং এর সংরক্ষণের সঠিক পদ্ধতি জানা আবশ্যক। তথ্য নির্ভর প্রচারনাও পারে এইসব কৃষককে জৈব সার তৈরিতে উদ্ভুদ্ধ করতে।

জৈব সার কাকে বলে

উদ্ভিদ ও প্রানীর দেহাংস বা রেচন পদার্থ থেকে যে সার প্রস্তুত করা হয় তাই জৈব সার। যেমন- গরুর গোবর, সবুজ সার, খৈল, হাড়গুড়া, কাঠের ছাই ইত্যাদি। জৈব সার কার্বন সমৃদ্ধ সার।

বিভিন্ন প্রকার জৈব সার

জৈব সারের অনেক রকম ধরন দেখা যায়। যেমন-
  • পচা গোবার সার- মানুষের মল, গরুর গোবর, হাস-মুরগীর বিষ্ঠা ইত্যাদি।
  • কম্পোষ্ট সার- ফসলের অংশবিশেষ, আগাছা, কচুরিরপনা, সবজি, ময়লা আবর্জনা ইত্যাদির পচনের ফলে তৈরি সার।
  • সরিষার খৈল সার
  • ধৈঞ্চা সবুজ সার

জৈব সার এ কি কি উপাদান আছে

জৈব সারের পুষ্টিগুন অনেক বেশি হওয়ার কারনে উদ্ভিদের জন্য তা খুবই উপকারী। বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা কাউন্সিলের (BARC) মতে বিভিন্ন রকম জৈব সার এ নিম্নলিখিত উপাদানগুলি বিদ্যমান-
  • গোবারের জৈব সার এ ৩৫% আর্দ্রতা, ১.২% নাইট্রোজেন, ১.০% ফসফরাস, ১.৬% পটাশিয়াম এবং ০.১৩% সালফার
  • মুরগীর বিষ্ঠা সার এ ৫৫% আর্দ্রপ্তা, ১.৯% নাইট্রোজেন, ০.৫৬% ফসফরাস, ০.৭৫% পটাশিয়াম এবং ১.১ সালফার
  • কম্পোষ্ট সার এ ৪০% আর্দ্রপ্তা, ০.৭৫% নাইট্রোজেন, ০.৬% ফসফরাস এবং ১.০% পটাশিয়াম
  • সরিষার খৈল এ ১৫% আর্দ্রপ্তা, ৫% নাইট্রোজেন, ১.৮% ফসফরাস এবং ১.২% পটাশিয়াম

গোবর থেকে জৈব সার তৈরির পদ্ধতি

গরুর গোবর পচিয়ে যে সার তৈরি করা হয় তাই গোবর সার। যেসব বাড়িতে বা খামারে গরু আছে সেখানে গোবরের উৎপাদন অনেক বেশি। কিন্তু উপযুক্ত পদ্ধতিতে সংরক্ষণ না করায় দেখা যায় এর বেশির ভাব অংশই নষ্ট হয়ে যায়। অনেকেই এই গোবর গুলি একটি নির্দিষ্ট জায়গায় জড় করে রাখেন। আবার অনেকেই গর্ত করে গোবর রাখলেও উপরে কোন আচ্ছাদন দেয় না। ফলে রোদ এবং বৃষ্টিতে এর গুনগত মান নষ্ট হয়ে যায়।

তাই উপযুক্ত পদ্ধতিতে যদি প্রতিদিন এই গোবরগুলি সংরক্ষোণ করা যায় তবে ভাল মানের গোবরের জৈব সার তৈরি সম্ভব। উন্নত পদ্ধতিতে গোবরের জৈব সার তৈরিতে যে পদ্ধতিগুলো অনুসরন করতে হবে তা হল-
  • গোয়াল ঘরের কাছা কাছি ৫ (১.৫ মিটার) ফুট চওড়া, ১০ ফুট (৩ মিটার) লম্বা এবং ৩ ফুট ৩ ইঞ্চি (১ মিটার) গভীরের একটি গর্ত তৈরি করতে হবে।
  • গর্তের দেওয়ালগুলো ভাল ভাবে সমান রাখতে হবে।
  • গর্তের নিচে পিটিয়ে সমান করতে হবে এবং সেখানে বালি, খড় বিছিয়ে দিতে হবে যেন সহজেই পানি শুষে নেয়।
  • গর্তের চারপাশে মাটি দিয়ে উচু করে রাখতে হবে যেন বৃষ্টির সময় সহজে পানি প্রবেশ করতে না পারে।
  • গর্তটির উপর উচু করে অবশ্যই চালা দিয়ে দিতে হবে। এতে করে রোদে শুকিয়ে যাবেনা এবং বৃষ্টিতেও ধুয়ে যাবে না।
  • গর্তটিকে দুইটি ভাগে ভাগ করতে হবে। যেন একটি গর্ত ভরাট হয়ে গেলে অপর গর্তে গোবর ফেলা যায়। টিন দিয়ে বা শক্ত কিছু দিয়ে এই ভাগ করা যায়।
  • প্রতিদিনের গোবর গর্তের যেকোন একটি ভাগে ফেলতে হবে। মাঝে মাঝে এর সাত্থে মিহি মাটি ফেলতে হবে। এতে করে গোবরের গ্যাস উড়ে যাবার সম্ভাবনা কম থাকে।
  • গর্ত ভরাট হলে প্রায় দেড় মাস পর এই গোবর ওলোট পালোট করে দিতে হবে। এর সাথে পরিমাণমত টি.এস.পি মিশানো যেতে পারে।
  • এই গোবর ২ মাস পর গোবর সার এ পরিনত হবে এবং ব্যবহার উপযোগী হবে।

শেষ কথা

অতিরিক্ত রাসায়নিক সারের ব্যবহার জমির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এতে জমির মধ্যে বসবাসরত পোকামাকড় সহ অন্যান্য অনুজীব বিনষ্ট হয়। তাই পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে এবং স্বাস্থ্যসম্মত ফসল পেতে অবশ্যই জৈব সারের ব্যবহার বাড়াতে হবে। তাই আসুন সঠিক পদ্ধতিতে জৈব সারের সংরক্ষণের পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন হই এবং অন্যকেও এই বিষয়ে উদ্ভুদ্ধ করি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url