যে ৫টি ভেষজ উদ্ভিদের রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির গুণাবলী

মানুষের সাথে উদ্ভিদের সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে বেঁচে থাকার জন্য প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ ব্যবহার করে আসছে তার নিকটতম এবং সবচেয়ে নিরীহ প্রতিবেশী বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ, যা ভেষজ উদ্ভিদ নামে পরিচিত। এমন ৫টি ভেষজ উদ্ভিদ আছে যেগুলো মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অভাবনীয়ভাবে কাজ করে।
যে ৫টি ভেষজ উদ্ভিদের রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির গুণাবলী
মানুষের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে, লক্ষ লক্ষ ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া, জীবাণু, ভাইরাস, টক্সিন এবং পরজীবী আক্রমণ করতে পারে। ফলে হতে পারে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকারক রোগ। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সচেতন থাকা আবশ্যক। তাই চলুন যেনে নেওয়া যাক ৫টি ভেষজ উদ্ভিদ সম্পর্কে যেগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কাজ করে।

ভূমিকা

দৈনন্দিন জীবনের সাথে জীবের এবং জীবের সাথে পরিবেশের সম্পর্ক খুবই গভীর ও নিগূড়। তাছাড়া এই সম্পর্ক যেমন পরস্পর নির্ভরশীল তেমনি গতিশীল। জন্মলগ্ন থেকেই মানবজাতি প্রতিনিয়ত প্রতিকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ ও বৈরী প্রতিবেশের বিরুদ্ধে বিভিন্নভাবে সংগ্রাম করে আসছে। বিভিন্ন সংগ্রামের মধ্যে অন্যতম সংগ্রাম হলো বিভিন্ন রোগব্যাধি থেকে বেঁচে থাকার সংগ্রাম।

আর এই সংগ্রামের অন্যতম হাতিয়ার ভেষজ উদ্ভিদ। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর প্রায় সর্বত্রই যুগ যুগ ধরে বিভিন্নভাবে মানুষের স্বাস্থ্য পরিচর্যায় ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহার হয়ে আসছে। এই ভেষজ উদ্ভিদ্গুলোর মধ্যে এমনকিছু উদ্ভিদ আছে যারা মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে খুব ভাল কাজ করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে বাইরের জীবানু খুব সহজেই আমাদের শরীরে আক্রমণ করতে পারে। যার ফলে হতে পারে বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকারক রোগ। বিভিন্ন ভাবেই আমরা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে থাকি। আমাদের প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাধারণত তিনটি অন্যতম প্রধান উপায় হল- নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্য এবং মেডিকেশন।

মেডিকেশন এর ক্ষেত্রে অনেক সময়ই এ্যালপাথিক ঔষধের দীর্ঘমেয়াদি কোর্স শরীরে বিভিন্ন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। তাই এর বিকল্প হতে পারে এইসকল ভেষজ উদ্ভিদ। সৃষ্টির শুরু থেকেই এই পৃ্থিবীতে মানুষের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে ভেষজ এর গুরুত্বপূর্ন অবদান আছে। 

অ্যালোপ্যাথিক ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বিবেচনায় এনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবায় ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছে।

ইমিউনিটি (Immunity) বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কি

প্যাথোজেন আক্রমণ প্রতিরোধ করার জন্য শরীরের স্বাভাবিক ক্ষমতাকেই ইমিউনিটি (Immunity) বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বলা হয়। প্রতিদিন আমাদের শরীর বিভিন্ন রোগজীবাণুর সংস্পর্শে আসে, কিন্তু খুব কম সময়ই আমরা রোগে আক্রান্ত হই।

কারণ হল, আমাদের শরীরে এই রোগজীবাণুগুলির বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি নিঃসরণ করার ক্ষমতা রয়েছে এবং শরীরকে রোগ থেকে রক্ষা করে। এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে বলা হয় ইমিউনিটি (Immunity) বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।

এই ইমিউনিটি (Immunity) বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেই আমাদের শরীর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে থাকে। তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভাল রাখা খুবই প্রয়োজন।

যে ৫টি ভেষজ উদ্ভিদের রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির গুণাবলী

নিম

পরিচিতি

ইংরেজিতে নিম গাছ কে Margosa Tree বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম- Azadirachta indica. বাংলাদেশ সহ উপ-মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে নিম গাছ বিনা যত্নে জন্মে থাকে। নিম একটি দ্রুত বর্ধনশীল গাছ যা সাধারণত ৪৯-৬৬ ফুট উচু হয়। গাছ সরল এবং শাখা-প্রশাখা চারদিকে বস্তৃত।
নিম, Margosa

ব্যবহার্য অংশ

সাধারণত নিমের পাতা ব্যবহার করা হয়। তবে নিমের মুল, ডাল এবং ফলও ব্যবহার করা যায়।

মাত্রা

পাতা ২ থেকে ৯ গ্রাম পর্যন্ত এবং ফল ২ থেকে ৪.৫ গ্রাম পর্যন্ত সেবন করা যায়। (সূত্রঃ ইউনানী মেটেরিয়া মেডিকা)

রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা

অনাদিকাল থেকে, নিমকে ব্যাপকভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে আসছে।ক্ষতিকারক প্যাথোজেনের আক্রমণ থেকে শরীরকে সুরক্ষিত রাখতে এটি অত্যন্ত কার্যকর, এর অ্যান্টি-ভাইরাল, অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এবং অ্যান্টি-ফাঙ্গাল বৈশিষ্ট্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নিম শরীরের রক্তের টক্সিন দূর করে রক্তকে বিশুদ্ধ করে।

ব্যবহারের পদ্ধতি

  • নিমের পাতার জুস- ১ কাপ পরিমাণ নিমপাতা নিয়ে ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর অল্প অল্প পানি মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে ছেকে নিলেই নিমের জুস তৈরি হয়ে যাবে।
  • নিম পাতার গুড়া- প্রয়োজনীয় নিমপাতা গুলো ধুয়ে ভালভাবে রোদ্রে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর গ্রিন্ডারে দিয়ে পাউডা করে নিতে হবে। এরপর এক টেবিল চা চামচ এক কাপ পানিতে মিশিয়ে জুস করে খেতে হবে।
  • এছাড়াও নিমের তেল, প্রলেপ সহ আরও অনেক রকম ভাবে ব্যবহার করা যায়। তবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য জুস অথবা পাউডার কে জুস বানিয়ে সেবন করাই উত্তম।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

অতিরিক্ত মাত্রায় নিম সেবনে রুক্ষতা বৃদ্ধি করে।

তুলসী

পরিচিতি

ইংরেজিতে তুলসীকে Holy Basil বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম- Ocimum tenuiflorum. তুলসী অর্থ যার তুলনা নাই। তুলসী গাছ সুগন্ধ যুক্ত গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। গাছ দেখতে মরিচ গাছের মত ২-৩ ফুটের বেশী বড় হয় না। বাংলাদেশ সহ উপ-মহাদেশের প্রায় সর্বত্র তুলসী জন্মে থাকে।
তুলসী

ব্যবহার্য অংশ

সাধারণত তুলসীর পাতা ব্যবহার করা হয়।

মাত্রা

তাজা তুলসীর পাতা ৩-৪ গ্রাম পর্যন্ত সেবন করা যায়। শুষ্ক পাতা ০.৫-১.৫ গ্রাম পর্যন্ত সেবন করা যায়। (সূত্রঃ ইউনানী মেটেরিয়া মেডিকা)

রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা

তুলসীতে শক্তিশালী ইমিউনোমোডুলেটরি বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার অর্থ এটি ইমিউন সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ এবং শক্তিশালী করতে সহায়তা করে। এতে বায়োঅ্যাকটিভ যৌগ রয়েছে, যেমন ইউজেনল, রোম্যারিনিক অ্যাসিড এবং ফ্ল্যাভোনয়েড, যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল হিসাবে কাজ করে। 

এই বৈশিষ্ট্যগুলি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে সুরক্ষার জন্য মারাত্মক ভাবে কাজ করে।

ব্যবহারের পদ্ধতি

  • তুলসী পাতার জুস- ১ কাপ পরিমাণ তুলসী পাতা নিয়ে ভালভাবে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরপর অল্প অল্প পানি মিশিয়ে ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে ছেকে নিলেই তুলসীর জুস তৈরি হয়ে যাবে।
  • তুলসী পাতার গুড়া- প্রয়োজনীয় তুলসী পাতা গুলো ধুয়ে ভালভাবে রোদ্রে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর গ্রিন্ডারে দিয়ে পাউডা করে নিতে হবে। এরপর এক টেবিল চা চামচ এক কাপ পানিতে মিশিয়ে জুস করে অথবা চা এর সাথে মিশিয়ে খেতে হবে।

পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া

অধিক মাত্রায় তুলসী সেবনে গুরুপাক ও মাথা ব্যথা হতে পারে।

আদা

পরিচিতি

ইংরেজিতে আদাকে Ginger বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম- Zingiber officinale. আমরা দৈনন্দিন কাজে আদাকে মসলা হিসাবে ব্যবহার করে থাকি। আদা নিয়ে অনেক উপমা রচিত আছে। যেমন- "আদার বেপারী জাহাজের খবর", "আদা জল খেয়ে নামা", "আদায় কাঁচ কলা" ইত্যাদি।
আদা
আদাকে শুষ্ক অবস্থায় শুঠ বলা হয়। আদা এক প্রকার কন্দ জাতীয় উদ্ভিদ। গাছ হলুদ গাছের মত ৩ থেকে ৪ ফুট লম্বা হয়। পাতাগুলো সবুজ ও সুন্দর ভাবে সাজানো এবং সুবিন্যস্ত ৫ থেকে ১০ ইঞ্চি লম্বা হয়। ফুল প্রায় দেখায় যায়না এবং ফলও হয়না। হলুদের মত এর কন্দ বা শিকড় ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশ সহ উপমহাদেশের প্রায় অঞ্চলে ও চীন সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আদা জন্মে। বাংলাদেশে দিনাজপুর ও রংপুরে আদার চাষ করা হয়।

ব্যবহার্য অংশ

আদার কন্দ বা শিকড় ব্যবহার করা হয়।

মাত্রা

আদা ২-১২ গ্রাম পর্যন্ত সেবন করা যায়। (সূত্রঃ ইউনানী মেটেরিয়া মেডিকা)

রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা

আদার মধ্যে ৬০ টিরও বেশি মিনারেল রয়েছে যেগুলো অ্যান্টিস্পাসমোডিক বৈশিষ্ট বহন করে। এছাড়াও ৩০ টিরও বেশি অ্যামাইনো এসিড এবং ৫০০ টিরও বেশি এনজাইম পাওয়া যায়। আদা স্ট্রেস কমানো, ডিএনএ পুনর্গঠন, শরীরের B১২ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য খুব সহায়ক।

আদার মধ্যে অ্যান্টিভাইরাল এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা আপনাকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করতে পারে।

ব্যবহারের পদ্ধতি

আমরা প্রতিদিনই আমাদের প্রায় সব তরকারীতেই আদার পেষ্ট বা একটি গোটা আদার অংশ ব্যবহার করে থাকি। এছাড়াও আরও যেভাবে আদা ব্যবহার করা যায় তা হল-
  • গরম চা- সাধারণত শীতকালে প্রচুর চা খাওয়া হয়। এর চা এর সাথে শুধু এক টুকরো তাজা আদা কেটে (খোসা ছাড়ানোর দরকার নেই) দিয়ে দিতে হবে। এছাড়াও এর সাথে যদি একটু মধু এবং একটু লেবু দেওয়া যায় তবে চমৎকার একটি টনিক তৈরি হবে।
  • স্যুপ- টাটকা আদা মিশ্রিত স্যুপে বিস্ময়কর প্রাণবন্ততা নিয়ে আসে। ইন্ডিয়ান স্পাইসি গাজর স্যুপের সাথে অথবা মিষ্টি আলুর স্যুপের সাথে মিসো (সয়াবিনের পেষ্ট) এবং আদা ব্যবহার করে খেতে পারেন।
  • আদার পাউডার- আদা শুকিয়ে পাউডার করেও দৈনিক নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবন করা যায়।
  • বিভিন্ন শরবতের সাথে- বিভিন্ন শরবত যেমন- লেবুর শরবত, আনারসের শরবত, কমলার শরবত ইত্যাদির সাথে আদা মিশ্রিত করে খাওয়া যায়।

পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া

অধিক মাত্রায় আদা সেবনে এটি হালকা অম্বল, ডায়রিয়া এবং মুখের জ্বালা সৃষ্টি করতে পারে।

কাল জিরা

পরিচিতি

কাল জিরা কে ইংরেজিতে Black caraway বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম-Nigella sativa. কাল জিরা গুল্ম জাতীয় ২ থেকে ৩ ফুট লম্বা গাছ যা বহু ক্ষুদ্র ও সরল শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট হয়। ফুল গুচ্ছবদ্ধ এবং বীজ সাদা জিরা অপেক্ষা সরু ছোট এবং কাল ও সুগন্ধযুক্ত হয়। জিরার গুন সাত বছর পর্যন্ত স্থায়ী থাকে। কাশ্মিরের কাল জিরা সবচেয়ে উত্তম।
কালো জিরা

ব্যবহার্য অংশ

কাল জিরার বীজ ব্যবহার করা হয়।

মাত্রা

কাল জিরা ৩-৭ গ্রাম পর্যন্ত সেবন করা যায়। (সূত্রঃ ইউনানী মেটেরিয়া মেডিকা)

রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা

কালো জিরার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং কার্যকারিতার ক্ষেত্রে বহুমুখী উপকারিতা রয়েছে। এর একাধিক পুষ্টি এবং ফাইটোকেমিক্যাল উপাদানগুলি মানুষের শরীরের সহজাত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং অর্জিত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এর মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে।

কালো জিরা অত্যধিক নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন এবং এর সংশ্লেষণকে বাধা দিয়ে প্রদাহজনক প্রক্রিয়ার মধ্যস্থতা করতে সহায়তা করে। এছাড়াও কালো জিরার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এনজাইম ক্যাটালেস এবং গ্লটাথিয়নের কার্যকলাপকে উন্নত করে।

এটি প্রদাহজনক প্রক্রিয়াগুলির ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করে যা গুরুত্বপূর্ণ ইমিউন কোষগুলিকে সক্রিয় এবং উদ্দীপিত করে।

কালো জিরা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক এবং পরজীবীর বিরুদ্ধে সরাসরি অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল প্রভাব সৃষ্টি করে।

মানব শরীরে ইমিউন সিস্টেমের কাজ জটিল। Natural killer (NK) নামে একধরণের কোষ আছে যারা শরীরে রোগ প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে। এরা সংক্রামিত কোষ গুলোকে সরাসরি আক্রমণ করে ধবংশ করে ফেলতে পারে। কালো জিরা এই সকল Natural killer (NK) কোষের কার্যকারিতাকে ত্বরান্বিত করে।

ব্যবহারের পদ্ধতি

  • কালো জিরা সাধারণত সরাসরি খাওয়া যায়
  • অনেকেই তরকারিতে কালো জিরা ব্যবহার করে
  • কালো জিরার ভর্তা খুবই সুস্বাদু খাদ্য
  • কালো জিরা তেল করেও ব্যবহার করা যায়

পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া

অতিরিক্ত মাত্রায় কাল জিরা সেবন করলে শরীর হলুদ বর্ণ ধারণ করে এবং ফুসফুস ও অন্ত্রনালীর পক্ষে ক্ষতিকর।

মৌরি

পরিচিতি

ইংরেজিতে মৌরিকে Sweet Fenel বলা হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Foeniculum vulgare. মৌরি ক্ষুপ জাতীয় বর্ষজীবী উদ্ভিদ। গাছ ১ গজ পরিমাণ লম্বা সূক্ষ লোমযুক্ত হয়। সাধারণত পাতা হয় না, কখন হলেও ছোট ছোট সরু গুলফা পাতার ন্যায় হয়। ফুল বা ফল ছত্রাকার বা ছাতার মত হয়। বীজ সরু ঈষৎ হলুদ বর্ণের হয়। ফলের মস্তকের উপর টুপীর ন্যায় ক্ষুদ্র আবরণ থাকে।
মৌরি

ব্যবহার্য অংশ

মৌরির মূল, বীজ, পাতা ও বীজের তেল ব্যবহার করা হয়।

মাত্রা

মৌরি বীজ ৪-৯ গ্রাম পর্যন্ত সেবন করা যায়। (সূত্রঃ ইউনানী মেটেরিয়া মেডিকা)

রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা

সুগন্ধি মৌরি বীজে ট্রান্স-অ্যানেথোল (trans-anethole) পাওয়া যায় যা বিভিন্ন ধরণের ভাইরাসকে নিরপেক্ষ করতে পারে। মৌরির বীজ ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং বিটা ক্যারোটিন সমৃদ্ধ, এই উপাদানগুলি তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিকারী বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। এটি সংক্রমণের ঝুঁকিও কমাতে পারে এবং শ্বাস প্রশ্বাসের পথ পরিষ্কার করতে পারে।

ব্যবহারের পদ্ধতি

  • ফ্রী টাইমে মৌরি খেতে অনেকেই পছন্দ করে। বিশেষ করে বিয়ের অনুষ্ঠানে বা খাবার হোটেল এ খাবার পর অনেকেই আমরা মৌরি খেয়ে থাকি।
  • প্রতিদিন রাতে একগ্লাস পানিতে এক চা চামচ মৌরি ভিজিয়ে সকালে খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে।
  • অনেক সময় মৌরির তেল ব্যবহার করা হয়। বাষ্প পাতন পদ্ধতি ব্যবহার করে চূর্ণ মৌরি বীজ থেকে তেল বের করা হয়।

পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া

অতিরিক্ত মাত্রায় মৌরি সেবনে শ্বাসকষ্ট ও বমি বমি ভাব হতে পারে। কিছু লোকের মৌরিতে ত্বকের অ্যালার্জি হতে পারে।

মন্তব্য

উদ্ভিদ প্রকৃতির এক অমূল্য সম্পদ। প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মানুষ রোগযন্ত্রণার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ভেষজ উদ্ভিদ  ব্যবহার করে আসছে। বিভিন্ন ভেষজ উদ্ভিদে নানা রকম রাসায়নিক উপাদান আছে। বিশেষ রাসায়নিক পদার্থের উপস্থিতির কারণে এসব উদ্ভিদের রোগ উপশমকারী ধর্ম দেখা যায়। 

দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারত বৈচিত্র্যময় অঞ্চল এবং এখানকার জলবায়ু ভেষজ উদ্ভিদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। কিন্তু কালপরিক্রমায় পশ্চিমা বহুমাত্রিক চিকিৎসা প্রযুক্তি ও মুনাফা বাণিজ্য গোষ্ঠীর উদ্ভাবনের ফলে আজ প্রকৃ্তি নির্ভর এসব চিকিৎসা পদ্ধতি বিলুপ্তির পথে। তাই আমাদের এইসব উদ্ভিদ সম্পর্কে আগ্রহ দিন দিন কমতির দিকে।

কিন্তু যেখানে আমরা খুব সহজেই কোনরকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ভেষজ উদ্ভিদের ব্যবহারের মাধ্যমে আমদের অনেক রোগ এর চিকিৎসা করতে পারি সেখানে ভেষজ উদ্ভিদ সম্পর্কে মানুষের অনাগ্রহতা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং বিপদজনক। তাই আসুন ভেষজ উদ্ভিদ সম্পর্কে জানতে চেষ্টা করি এবং অন্যকেও জানাতে অনুপ্রাণিত করি।   

ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url