বাণিজ্যকভাবে ছাগলের খামার করতে যে যে বিষয়গুলো জানা জরুরী

বাণিজ্যিক ভাবে ছাগল পালনের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই প্রাথমিক অবস্থায় বাণিজ্যিকভাবে ছাগলের খামার করতে আমাদের বেশ কিছু বিষয়ে জ্ঞান থাকা খুবি জরুরী।
প্রাথমিক অবস্থায় বাণিজ্যিকভাবে ছাগলের খামার করতে যে যে বিষয়গুলো জানা জরুরী
এই পোষ্টে মূলত প্রাথমিক অবস্থায় বাণিজ্যিকভাবে ছাগলের খামার করার পদ্ধতি গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশে কেন ছাগল পালন করবেন

বর্তমানে বাংলাদেশে ছাগল পালন একটি প্রতিষ্ঠিত এবং লাভজনক ব্যবসায়িক মডেল। বাংলাদেশে ছাগল পালনের সুবিধাগুলো হল-
  • বাংলাদেশে উচ্চ উৎপাদনশীল ছাগলের জাত পাওয়া যায় এবং এর আবহাওয়া ও জলবায়ু ছাগল চাষের জন্য উপযুক্ত।
  • মহিলা এবং শিশুরা তাদের নিয়মিত কাজের পাশাপাশি খুব সহজেই ছাগলের লালন পালন এবং যত্ন নিতে পারেন। 
  • যেহেতু ছাগল ছোট গবাদি পশু, তাই অন্যান্য গবাদি পশুর তুলনায় তাদের জন্য তুলনামূলক অল্প জায়গার প্রয়োজন হয়। অন্যান্য গবাদি পশুর তুলনায় তাদের যত্নও কম করতে হয়।
  • ছাগলের পরিচর্যা ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি খুবই সহজ। মহিলারা তাদের নিয়মিত গৃহস্থালী কাজের পাশাপাশি ছাগল পালন করতে পারে। আর ছেলেমেয়েরাও তাদের পড়ালেখার পাশাপাশি তাদের ভালোভাবে যত্ন নিতে পারে।
  • বর্তমানে বাংলাদেশ সরকার ক্ষুদ্র পরিসরে ছাগলের খামার স্থাপন এবং ছাগল পালনের জন্য প্রয়োজনীয় অনেক সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে জনগণকে অনুপ্রাণিত করছেন।
  • ছাগল বহুমুখী ছোট আকারের পশুসম্পদ এবং বাণিজ্যিক ভাবে দুধ, মাংস, চামড়া এবং সার উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত।
  • ছাগল পালনের অবকাঠামো, খাবার, চিকিৎসাসহ অন্যান্য উৎপাদন খরচ অনেক কম।
  • ছাগলের মাংস এবং দুধ খাওয়ার জন্য কোন ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা বা নিষেধাজ্ঞা নেই।
  • স্থানীয় বাংলাদেশী ও আন্তর্জাতিক বাজারে ছাগলের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ছাগলের দুধ মানুষের জন্য খুবই উপকারী এবং ছাগলের দুধের জনপ্রিয়তা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
  • ছাগল পালন বাংলাদেশের বেকার শিক্ষিত মানুষের আয় ও কর্মসংস্থানের একটি বড় উৎস হতে পারে।

কিভাবে ছাগলের খামার শুরু করবেন

ছোট আকারের ছাগলের খামার স্থাপন করা খুবই সহজ কিন্তু বৃহৎ আকারের বাণিজ্যিক উৎপাদনের জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা এবং সেগুলোর সঠিক প্রয়োগ। প্রাথমিক অবস্থায় ছাগলের পালনের জন্য নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে-

সঠিক অবস্থান নির্বাচন

ছাগলের খামারের জন্য স্থান নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খামার স্থাপনার সময় প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধাগুলো মাথায় রাখতে হবে। সর্বাধিক উৎপাদনের জন্য বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্থান নির্বাচনের জন্য যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে তা হল- 
  • গ্রামাঞ্চলে খামারের স্থান নির্বাচন করাই শ্রেয়। কারণ জমি তুলনামূলক কম খরচে পাওয়া যাবে। শহরে করলে জমির মূল্য বেশি হবে। এক্ষেত্রে মূলধন অনেক বেশি লাগবে।
  • খামার এমন জায়গাতে স্থাপন করতে হবে যেখানে পরিবেশ অবশ্যই স্যাঁতস্যাঁতে হবে না।
  • ছাগলের জন্য প্রয়োজনীয় চারনস্থান থাকতে হবে।
  • স্থানটি অবশ্যই ফসল, ঘাস এবং অন্যান্য সবুজ উদ্ভিদ উৎপাদনের উপযোগী হতে হবে। এগুলো ছাগলের খাওয়ার খরচ কমাতে সাহায্য করে।
  • আশেপাশে যেন খুব সহজেই পশু চিকিৎসক পাওয়া যায় তা নিশ্চিত করতে হবে।
  • ভাল পরিবহণ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • খামারের কাছাকাছি মার্কেট থাকতে হবে যেন প্রয়োজনীয় খাবার খুব সহজেই সংগ্রহ করা যায়।
  • সব সময় বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা থাকতে হবে। কেউ যদি শহরে থেকে গ্রামে জমি কিনে ছাগলের খামার করতে চান তবে অবশ্যই ইন্টারনেট ব্যবস্থা নিশ্চিত করে সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে দূর থেকেও অনেক বিষয় মনিটর করা সুবিধা হয়।

ছাগলের জাত

ছাগল ব্যবসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ছাগলের সঠিক জাত নির্বাচন করা। সঠিক জাত নির্বাচনের আগে আপনি কি ধরণের ছাগল পালন করতে চান তা ঠিক করতে হবে। এজন্য নিকটস্থ বাজার পরিদর্শন করতে হবে এবং কি ধরণের ছাগলের ব্যপক ছাহিদা রয়েছে তা বোঝার চেষ্টা করতে হবে। যদি ছাগলের দুধের চাহিদা বেশি থাকে তবে দুগ্ধজাত ছাগল পালন শুরু করা যেতে পারে।

বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাইরের বাজারে ছাগলের মাংসের ব্যাপক চাহিদা আছে। তাই বাণিজ্যিক ভাবে পালনের জন্য, উচ্চ মাংস উৎপাদনশীল ছাগলের জাত নির্বাচন করা যেতে পারে।

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল একটি স্থানীয় বাংলাদেশী ছাগলের জাত। এটি একটি মাংস উৎপাদনশীল দেশী ছাগলের জাত। ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের মাংস খুবই সুস্বাদু। বাংলাদেশ এবং বাংলাদেশের বাইরের বাজারে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এছাড়াও বোয়ার এবং সিরোহি এই দুইটিও মাংস উৎপাদনশীল জাত।

দুগ্ধ উৎপাদনশীল ছাগলের মধ্যে সানেন, যমুনাপারি ইত্যাদি ছাগল অত্যন্ত জনপ্রীয় জাত। এইসব বিদেশী জাতের ছাগল বাংলাদেশে বাণিজ্যকভাবে পালনের জন্য খুবই উপযোগী। তবে আপনার পছন্দসই উৎপাদন অনুযায়ী সঠিক জাত নির্বাচন করতে হবে।

ছাগলের ঘর তৈরি

বাংলাদেশের ক্ষুদ্র পরিসরের ছাগল খামারিদের অধিকাংশই তাদের ছাগল অন্যান্য গবাদি পশুর সাথে পালন করে থাকেন। তবে বাণিজ্যকভাবে উৎপাদনের জন্য আপনাকে অবশ্যই আলাদা অবকাঠামো নির্মান করতে হবে। একটি উপযুক্ত অবকাঠামোর ব্যবস্থা করা ছাগল পালনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একটি ভাল ঘর ছাগলকে সব ধরনের প্রতিকূল পরিবেশ থেকে নিরাপদ ও মুক্ত রাখে।

ছাগলের ঘরের নকশা, ছাগলের জাত ও উৎপাদনের ধরনের উপর নির্ভর করে। সুতরাং ছাগলের ঘরের নকশা, ছাগলের জাত ও উৎপাদনের ধরন অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের হতে পারে। ছাগলের জন্য ঘর তৈরি করার সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলি বিবেচনা করতে হবে-
  • ছাগলের ঘর তুলনা মূলক উচু জায়গায় স্থাপন করতে হবে। নিচে ফাকা রাখতে হবে, যেন ছাগলের মল মূত্র খুব সহজেই জমে না থাকে। এইসব মলমূত্র যেন সহজেই সংগ্রহ করা যায় এবং সার হিসাবে ব্যবহার করা যায়। শীতের সময় মেঝে দিয়েও ঠান্ডা উঠতে শুরু করে। যদি ছাগলের ঘর উচু করে নিচে ফাকা না রাখা হয় তবে ছাগলের ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  • ছাগলের ঘর সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। স্যাঁতস্যাঁতে ঘর ছাগলের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।
  • ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • ছাগলের ঘর এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন বৃষ্টির পানি ঢুকতে না পারে।
  • ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা রাখতে হবে। ঠান্ডা আবহাওয়া ছাগলের জন্য ক্ষতিকর। এক্ষেত্রে অনেকেই ঘরের মধ্যে পর্যাপ্ত লাইটের ব্যবস্থা রাখতে পারেন।

ছাগলের ঘর তৈরির পদ্ধতি

  • ছাগলের ঘর দক্ষিন মুখি হতে হবে। ঘরটির দৈর্ঘ্য পূর্ব পশ্চিম বরাবর এবং প্রস্থ উত্তর দক্ষিণ বরাবর হতে হবে। ঘরে প্রবেশের মুখটি দক্ষিণ দিক বরাবর করতে হবে।
  • যদিও বলা হয় ছাগলের ঘর চারদিকে উম্মুক্ত রাখলে ভাল হয়, তবে বাংলাদেশের আবহাওয়ার কথা চিন্তা করে সবদিক ফাঁকা না রাখাই উত্তম। এক্ষেত্রে উত্তর এবং পশ্চিম পাশের অংশ ফাঁকা না রাখাই ভাল। দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকে ফাঁকা রাখলে ভাল।
  • নিচে ৫ ফিট ফাকা রেখে মাচা থেকে ৮ ফিট উচ্চতা বিশিষ্ট ৪৫০ স্কয়ারফিটের একটি ঘর তৈরি করা ভাল। ঘরটি দৈর্ঘ্য ৩০ ফিট এবং প্রস্থ ১৫ ফিট করা যেতে পারে। একটি পূর্নবয়স্ক ছাগলের জন্য সাধারণত ৮-১০ স্কয়ার ফিট জায়গার প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে এখানে ৪০-৫০ টি ছাগল পালন করা যেতে পারে।
  • এক্ষেত্রে ১৪ ফিটের সিমেন্টের খুটির উপর ঘরটি তৈরি করতে হবে।
  • দুই পাশে ৭ টি করে ১৮ ফিটের মোট ১৪ টি খুটির উপর ঘরটি তৈরি করা যেতে পারে। আর মাঝখানে ৭-৮ ফিট এর আরোও ৭ টি খুটি বসাতে হবে। মাঝখানের এই ৭টি খুটি মাটির নিচে এমন ভাবে বসাতে হবে যেন মাটির উপরে ৫ ফিট উচ্চতা হয়। এই মোট ২১ টি খুটি।
  • ১৮ ফিটের প্রতিটি খুটি তৈরির সময় ১০ ফিট উচ্চতায় একটি নাট ঢুকানোর মত ফুটা করে নিতে হবে। এই ১০ ফিটের উপরের মাচাটি তৈরি করা হয়। আর মাঝখানের খুটি তৈরির সময়ও উপরের দিকে নাট ঢুকানোর মত ফুটো করে নিতে হবে।
  • ১৮ ফিটের খুটি গুলো ৫ ফিট গভীরে বসাতে হবে।
  • ছাগলের ঘরের মেঝে কাঠ বা বাঁশ দুইটি দিয়েই তৈরি করা যায়। তবে কাঠ দিয়ে তৈরি করাই ভাল। কারণ বাঁশ এর থেকে কাঠ বেশিদিন টিকসই হয় এবং পরিবেশও আরামদায়ক হয়।
  • এখন কাঠের মোট ৭ টি ডাঁশা বানাতে হবে যার উপর কাঠগুলো বসবে। এই ডাঁশাগুলো খুটির সাথে নাট দিয়ে আটকায় দিতে হবে। এমনভাবে ডাঁশাগুলো আটকাতে হবে যেন এর মাথা এবং মাঝখানের খুটিগুলোর মাথা একই লেভেলে থাকে। এক্ষেত্রে বাকি খুটিগুলোতে ডাঁশার অন্যমাথা যুক্ত হবে। ডাঁশা লেভেল করার জন্য প্রয়োজনে মাঝখানের খুটিগুলোর গভীরতা কম বেশি করা যেতে পারে।
  • এরপর মাচা করার জন্য এই ডাঁশাগুলোর উপরের ১ ইঞ্চি ফাঁক রেখে পরপর কাঠের পাটাতন বসাতে হবে, যেন ছাগলের বিষ্টা খুব সহজেই নিচে পড়ে যায়। এতে মাচা পরিষ্কার এবং জীবানুমুক্ত থাকে।
  • মাচার নিচে মেঝে মাটির হলে সেখানে পর্যাপ্ত পরিমাণ বালু মাটি দিয়ে রাখতে হবে। আর মেঝে পাকা হলে দুই পাশে ঢালু (২%) রাখতে হবে যেন সহজেই বিষ্টাগুলো সংগ্রহ করা যায়।
  • শীত কালে মাচার উপর অবশ্যই ৪-৫ ইঞ্চি পুরো খড়ের বিছানা বিছিয়ে দিতে হবে, যেন ছাগলের ঠান্ডা না লাগে।
  • মাচা হয়ে গেলে চারপাশের দেয়াল টিন দিয়ে ঘিরে দেওয়া যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে দক্ষিণ এবং পূর্ব দিকে মাঝখানের অংশ পুরোটাই ফাঁকা থাকে। এই ফাঁকা অংশে নেট দিয়ে ঘিরে দিতে হবে এবং পর্দার ব্যবস্থা থাকতে হবে। শীতের সময় রাতে এবং বর্ষাকালে প্রয়োজনে পর্দাগুলো যেন নামানো যায় তার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • ঘরের চালা টিন দিয়ে করা যেতে পারে, তবে বৃষ্টির পানি যেন না ঢুকতে পারে সে জন্য ঘরের চালা ৩-৪ ফুট ঝুলিয়ে দিতে হবে।
  • ঘরের মধ্যে একটি খাঁচা তৈরি করতে হবে যা কাঠের বা বাঁশের তৈরি হতে পারে। একে ব্রুডার বক্স (Brooder box) বলা হয়। এর চারপাসে চটের বস্তা দিয়ে ঘিরে দিতে হবে। শীতের সময় বাচ্চাকে মায়ের সাথে অবশ্যই এই ব্রুডার বক্সে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। ব্রুডার বক্সের মেঝেতে ৩-৪ ইঞ্চি পুরো খড় বিছান থাকতে হবে।
  • ঘরে প্রবেশের জন্য একটি কাঠের সিড়ির ব্যবস্থা করতে হবে। সিড়িটি মাচার মত ১ ইঞ্চি ফাঁক রেখে কাঠের পাটাতন দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে।

খাদ্য ব্যবস্থা

  • ছাগলকে সবসময় সুষম ও পুষ্টিকর খাবার খাওয়াতে হবে। খাবারে সব ধরনের প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল, লবণ ইত্যাদি যোগ করতে হবে। ছাগলের খাদ্যে প্রোটিনের সঠিক পরিমাণ নিশ্চিত করতে হবে। পর্যাপ্ত ঘাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। না হলে শুধু দানাদার খাবারে বেশি লাভ করা সম্ভব হবে না।
  • উন্নতমানের পুষ্টিকর খাবার দেওয়ার পাশাপাশি ছাগলের জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থাও থাকতে হবে।
  • বাচ্চা প্রসবের পরপরই আধা ঘণ্টার মধ্যেই বাচ্চাকে ছাগীর শালদুধ খেতে দিতে হবে। দৈনিক ৮-১০ বার করে তিন মাস পর্যন্ত শালদুধ খেতে দিতে হবে। বাচ্চা অনেক সময় জন্মের পর মায়ের বাট চিনতে পারে না। তখন তার মুখ বাটের কাছে নিয়ে যেতে সাহায্য করতে হয়। দুধ খেতে না পারলে চামচে করে বা ফিডারের মাধ্যমে দুধ খাওয়ানো যেতে পারে। মূল কথা বাচ্চার দুধ খাওয়ানো নিশ্চিত করতে হবে।
  • বাচ্চাকে জন্মের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ঘাসের সাথে পরিচিত করে তুলতে হবে। দূর্বা, নেপিয়ার, রোজি ইত্যাদি ঘাসের সরবারাহ থাকলে ভাল হয়।
  • সাধারণত ৩-১২ মাস সময়কে ছাগলের মূল বাড়ন্ত সময় বলা হয়। এসময় ছাগলের পুষ্ট চাহিদার দিকে ভালভাবে নজর দিতে হবে। এসময় দানাদার এবং আঁশ জাতীয় খাবার দিতে হবে।
  • গম, চাল, ভুট্টা, মাষকলাই, হাড়ের গুড়া, খেসারি, সয়াবিন খৈল, তিলের খৈল, সরিষার খৈল, শুটি মাছের গুড়া ইত্যাদি দানাদার খাবার খাওয়ানো যেতে পারে। এর সাথে লবন এবং খনিজ মিশ্রন যোগ করা যেতে পারে।
  • একটি পূর্নবয়স্ক ছাগলের জন্য দানাদার খাবার সাধারণত প্রতি কেজিতে আনুমানিক ২৫ গ্রাম হারে সরবারাহ করতে হবে। অর্থাৎ একটি ছাগলের ওজন ৫ কেজি হলে এর দানাদার খাবার প্রয়োজন ১২৫ গ্রাম দানাদার খাবার।
  • দানাদার খাবারের মধ্যে ২০ ভাগ ছোলাভাঙ্গা, ২০ ভাগ গম ভাঙ্গা, ৩৫ ভাব তীলের খৈল, ২০ ভাগ গমের ভূষি, ৪ ভাগ খনিজ মিশ্রণ ও ১ ভাগ লবন দেওয়া যেতে পারে।

চিকিৎসা সেবা

বাণিজ্যিক ছাগল পালনের জন্য, পর্যাপ্ত চিকিৎসা সেবা আবশ্যক। ছাগল পালন ব্যবসা শুরু করার আগে, আপনাকে অবশ্যই সমস্ত ধরণের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবার প্রাপ্যতা সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হবে। আপনার খামারে সব সময় কিছু প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ভ্যাকসিন মজুদ রাখতে হবে এবং ডাক্তারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে হবে।

বিশেষ যত্ন ও ব্যবস্থাপনা

সব সময় আপনার ছাগলের ভালো যত্ন নিতে হবে। নিয়মিত তাদের সকল কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার চেষ্টা করতে হবে। তারা সুস্থ কিনা বা কোন রোগ দ্বারা সংক্রামিত কিনা তা নির্ধারণ করার চেষ্টা করতে হবে।

তাদেরকে কখনই খামারের এলাকার বাইরে যেতে দেবেন না। সম্ভব হলে, আপনার খামারের চারপাশে একটি বেড়া তৈরি করুন। তাদের সবসময় পুষ্টিকর খাবার এবং বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করুন। তাদের সব ধরনের রোগ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে মুক্ত রাখতে সময়মতো টিকা দিন।

ছাগলের বাজারজাতকরণ

ছাগলের বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া খুবই সহজ। আপনি সহজেই আপনার নিকটস্থ হাটে আপনার ছাগল বিক্রি করতে পারেন। বাংলাদেশে ছাগলের দুধের চাহিদা কিছুটা কম হলেও তা দিন দিন বাড়ছে। যাদের ছাগলের দুধের চাহিদা আছে তাদের খুঁজে বের করুন এবং প্রয়োজনে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করুন। ছাগলের দুধ মজুদ রাখার জন্য ফ্রিজের ব্যবস্থা করুন।

স্থানীয় বাজারে ছাগলের মাংসের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। এমনকি আপনি আন্তর্জাতিক বাজারে ছাগলের মাংস বিক্রি করার চেষ্টাও করতে পারেন।

ছাগলের অন্যান্য পণ্য যেমন চামড়া, আঁশ এবং সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তা বাইপ্রোডাক্ট হিসাবে ছাগলের বিষ্টাগুলো সংগ্রহ করে সার তৈরির ব্যবস্থা করুন। সাধারণত মাছ চাষিরা তাদের মাছের খাবার হিসাবে এই বিষ্টাগুল সংগ্রহ করে। প্রয়োজনে তাদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করুন। 

এছাড়াও আম বাগানের ব্যবসায়ী, নার্সারির মালিক, সবজি চাষী, ধান চাষী এদের সাথেও যোগাযোগের চেষ্টা করা যেতে পারে।

মন্তব্য

অন্যান্য সম্ভাব্য আয়ের উৎসের মতো বাংলাদেশে ছাগল পালনেরও দারুণ সুযোগ রয়েছে। আপনি যদি বাণিজ্যিকভাবে ছাগল পালনের কথা ভাবছেন, তাহলে বাণিজ্যিকভাবে ছাগল পালনের প্রক্রিয়া, আবাসন, খাওয়ানো, ওষুধ, পরিচর্যা, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি এবং ছাগল পালনের মৌলিক বিষয়গুলো সম্পর্কে আরও জানার চেষ্টা করুন।

ভালো হবে যদি আপনি বাংলাদেশে ছাগল পালনের উপর সরকারীভাবে বা বেসরকারি পশুসম্পদ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে একটি প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করেন। 


ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url