প্রোস্টেট বড় হওয়ার লক্ষণ ও কারণ, যা করতে হবে

প্রবীন বয়সের পুরুষদের জন্য প্রোষ্টেট এর বৃদ্ধি একটি অন্যতম বড় সমস্যা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই গ্রন্থির বৃদ্ধি পেতে থাকে। লজ্জার জন্য অনেকেই এটি গোপন রাখে। ফলে সমস্যা আরোও জটিল আকার ধারন করে। প্রতিটি মানুষেরই প্রোস্টেট বড় হওয়ার কারণ ও লক্ষণ সম্পর্কে সাধারণ ধারনা থাকা ভাল। 
প্রোস্টেট বড় হওয়ার লক্ষণ ও কারণ, যা করতে হবে
সঠিক সময়ে প্রোষ্টেট বড় হওয়ার চিকিৎসা না করলে সমস্যা বাড়তেই থাকবে। দেরিতে চিকিৎসা অনেক সময়ই কঠিন হয়ে যায়। তাই এই রোগ সম্পর্কে আমাদের সব সময়ই সচেতন থাকতে হবে। রোগের লক্ষণ গুলো জানা থাকলে দ্রুতই এর ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়। এই পোষ্টে মূলত এই প্রোস্টেট বড় হওয়ার লক্ষণ, কারণ এবং এর প্রতিকারে করনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ভূমিকা

প্রোস্টেট হল পুরুষ প্রজনন ব্যবস্থার একটি গ্রন্থি। এটি একটি ছোট এবং আখরোটের আকৃতির অঙ্গ যা শ্রোণীতে অবস্থিত। এটি মূত্রথলির নীচে বসে এবং মূত্রনালীকে ঘিরে রাখে। এটি সমস্ত পুরুষ স্তন্যপায়ী প্রাণীর মধ্যে পাওয়া যায়। এটি বীর্যে তরল যোগ করে এবং এর পেশী মানুষের মূত্রনালী দিয়ে বীর্য ঠেলে দিতে সাহায্য করে।

প্রোস্টেটের ব্যাধিগুলির মধ্যে রয়েছে প্রোস্টেট বড় হওয়া, প্রদাহ, সংক্রমণ এবং ক্যান্সার। প্রোষ্টেট বড় হওয়াতে অনেক ধরনের সমস্যা তৈরি হয়। যেমন- প্রস্রাব না ধরে রাখতে পারা, প্রস্রাবে জ্বালা যন্ত্রণা হওয়া, ফোটা ফোটা প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি। 

প্রাথমিক দিকে এটি তেমন জটিল না হলেও সঠিক সময় এ এর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যত এ জটিল আকার ধারন করবে। ডাক্তারের চিকিৎসার পাশাপাশি রোগীর দৈনন্দিন জীবনযাপনেও আনতে হবে পরিবর্তন, মেনে চলতে হবে সঠিক নিয়ম।

প্রোষ্টেট বড় হওয়ার কারণ

প্রোস্টেট বড় হওয়ার প্রকৃত কারণ অজানা। বার্ধক্য এবং অণ্ডকোষের কোষে পরিবর্তনের সাথে যুক্ত কারণগুলি গ্রন্থির বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে, সেইসাথে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা। সাধারণত প্রোস্টেট গ্রন্থির বড় হওয়ার গুরুত্বপূর্ন তথ্যগুলো হল-
  • বয়সের সাথে সাথে বর্ধিত প্রস্টেট বিকাশের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
  • সাধারণত বলা হয়ে থাকে সে সমস্ত পুরুষের প্রস্টেট বড় হবে যদি তারা দীর্ঘকাল বেঁচে থাকে।
  • ৪০ বছরের বেশি বয়সী অনেক পুরুষের মধ্যে অল্প পরিমাণে প্রোস্টেট বড় হওয়ার লক্ষণ পাওয়া যায়। ৮০ বছরের বেশি বয়সী পুরুষদের ৯০% এরও বেশি এই অবস্থা রয়েছে।

প্রস্টেট বড় হওয়ার লক্ষণ

অর্ধেকেরও কম পুরুষদের মধ্যে প্রোস্টেট বড় হওয়ার লক্ষণ গুলি পরিলক্ষিত হয়। এই রোগে সাধারণত যেসব উপসর্গ দেখা দেয় তা হল-
  • প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়া। প্রস্রাবের কারণে কাপড় নষ্ট হয়ে যাওয়া।
  • সম্পুর্ন প্রস্রাব না হওয়া। প্রস্রাবের পরও প্রস্রাবের অনুভুত হওয়া।
  • প্রস্রাবের সময় রক্ত যেতে পারে।
  • প্রস্রাবের সময় ব্যাথা অনুভুত হওয়া।
  • তলপেটে তীব্র ব্যাথা হতে পারে এবং প্রচন্ড প্রস্রাবের চাপ অনুভূত হতে পারে।

প্রোস্টেট বড় হওয়ার রোগ নির্নয়

রোগের উপসর্গ দেখে সাধারণত রোগ সম্পর্কে একটি ধারনা করা যায়। DRE (digital rectal exam) এর মাধ্যমে প্রোষ্টেট গ্রন্থির আকার আকৃতি দেখেও এই রোগ নির্নয় করা হয়ে থাকে। এছাড়াও যে বিষয়গুলি দেখা হয় তা হল-
  • প্রস্রাব প্রবাহ হার
  • প্রস্রাব করার পরে মূত্রাশয়ে কতটা প্রস্রাব বাকি আছে তা দেখতে Post-void residual urine test- পরীক্ষা
  • প্রস্রাব করার সময় মূত্রাশয়ের চাপ পরিমাপ করার জন্য চাপ-প্রবাহ পরীক্ষা
  • রক্ত বা সংক্রমণ পরীক্ষা করার জন্য ইউরিনালাইসিস
  • সংক্রমণ পরীক্ষা করার জন্য ইউরিন কালচার
  • সিস্টোস্কোপি
  • রক্তের ইউরিয়া নাইট্রোজেন (BUN) এবং ক্রিয়েটিনিন পরীক্ষা কম কিডনির কার্যকারিতা পরীক্ষা করার জন্য

প্রোস্টেট বড় হওয়ার চিকিৎসা

উপসর্গগুলি কতটা খারাপ এবং সেগুলি আপনাকে কতটা বিরক্ত করে তার উপর ভিত্তি করে সাধারণত চিকিৎসা পদ্ধতি নির্নয় করা হয়। চিকিৎসার বিকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে "অপেক্ষা",“জীবনধারা পরিবর্তন” এবং ওষুধ বা অস্ত্রোপচার।বয়স ৬০ বছরের বেশি হলে লক্ষণগুলি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

কিন্তু বর্ধিত প্রস্টেট সহ অনেক পুরুষেরই সামান্য লক্ষণ থাকে। স্ব-যত্ন পদক্ষেপগুলি প্রায়শই ভাল বোধ করার জন্য যথেষ্ট। প্রোষ্টেট বড় হওয়ার লক্ষণগুলি নিরীক্ষণ করার জন্য একটি বার্ষিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে এবং চিকিৎসার পরিবর্তন প্রয়োজন কিনা তা দেখতে হবে।

প্রোস্টেট বড় হওয়াতে নিজের যত্ন

প্রাথমিক লক্ষণগুলির ক্ষেত্রে-
  • যখনই প্রস্রাবের প্রথম তাগিদ পাবেন তখনই প্রস্রাব করতে হবে। এছাড়াও প্রস্রাব করার প্রয়োজন অনুভব না হলেও একটি নির্দিষ্ট সময়সূচীতে বাথরুমে যেতে হবে।
  • অ্যালকোহল এবং ক্যাফেইন এড়িয়ে চলতে হবে বিশেষ করে রাতের খাবারের পরে।
  • একসাথে অনেক পানি পান পান করা যাবে না। দিনের বেলা পানি পান কমিয়ে ফেলতে হবে। শোবার সময় ২ ঘন্টার মধ্যে তরল পান করা এড়িয়ে চলতে হবে।
  • ঠান্ডা এবং সাইনাসের ওষুধ না খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে কারণ এতে ডিকনজেস্ট্যান্ট বা অ্যান্টিহিস্টামিন থাকে। এই ওষুধগুলি প্রোস্টেট গ্রন্থি বৃদ্ধির উপসর্গ বাড়াতে পারে।
  • গরম থাকতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। ঠান্ডা আবহাওয়া এবং শারীরিক কার্যকলাপের অভাব লক্ষণগুলিকে আরও খারাপ করতে পারে।
  • মানসিক চাপ কমাতে হবে। স্নায়বিকতা এবং উত্তেজনার কারণে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।

মন্তব্য

“প্রোস্টেট বড় হওয়া” একটি সার্বজনীন সমস্যা। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই রোগের লক্ষণ দেখা দিবে এটাই স্বাভাবিক। তাই সঠিক সময়ে এর চিকিৎসা নেওয়াটাও আমাদের কর্তব্য। আমাদের পিতা মাতা, দাদা দাদি, নানা নানি এরকম পরিবারের অনেক বয়স্কদের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ দেখা দিলে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। 

তাই আসুন আমরা প্রোস্টেট বড় হওয়ার লক্ষণ গুলি দেখা দিলে অবহেলা না করি। সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপই পারে এইসব মানুষকে স্বাভাবিক জীবন যাপনে সহায়তা করতে।

ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url