ডায়াবেটিস কি, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জাম কীভাবে কাজ করে?
ডায়াবেটিস শব্দটি আমাদের সবার কাছেই পরিচিত একটি শব্দ। পুরো বিশ্ব জুড়ে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। ২০০১ সালের জরীপ অনুযায়ী পৃথিবীতে প্রায় ৫৩৭ মিলিয়ন জনসংখ্যা যাদের মধ্যে ২০ থেকে ৭৯ বছর বয়সের প্রায় মানুয়ের এই রোগ বেশি দেখা যায়। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে জাম খুবই উপকারী একটি ফল।
জামে অ্যান্টি ডায়াবেটিক প্রোপার্টিজ থাকায় রক্তে শর্করা পরিমান নিয়ন্ত্রন রাখতে সহায়তা করে থাকে। এই পোষ্টে মূলত আমরা জানবো যে ডায়াবেটিস কি এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে জাম কীভাবে কাজ করে।
ভূমিকা
মানুষের শরীর যখন নিজ থেকে ইনসুলিন উৎপাদন করতে পারেনা অথবা উৎপাদিত ইনসুলিন দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারেনা তখন যে রোগ দেখা যায় তাই ডায়াবেটিস নামে পরিচিত। ডায়াবেটিস মেলিটাস নামেও পরিচিত।
মানুষের শরীরে রক্তে যখন শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় এবং শরীরের ইনসুলিন যখন এই শর্করাকে ভেঙ্গে গ্লকোজে পরিণত করতে পারেনা তখনই ডায়েবেটিস হয়ে থাকে। ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘস্থায়ী চিকিৎসা ব্যবস্থা যা রক্তে গ্লকোজে (চিনি) উচ্চ মাত্রা মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়।
শর্করা নিয়ন্ত্রণে ইনসুলিন হল অগ্ন্যাশয় দ্বারা তৈরী একটি হরমোন যা রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ভূমিকা পালন করে থাকে। জাম মানুষের শরীরের এই ইনসুলিনকে আরও এ্যাক্টিভ করে শর্করা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
ডায়াবেটিস কি
বিশ স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনযায়ী বর্তমানে ডায়াবেটিস এখন একটি মারাত্মক একটি মহামারি রোগ হয়ে ওঠেছে। ডায়াবেটিস হচ্ছে একপ্রকার মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। এই রোগ মানুয়ের শরীরে এমন একটি গুরুতর অবস্থা সৃষ্টি করে যে শরীরের নিজ থেকে ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না অথবা তৈরী হওয়া ইসসুলিন দক্ষতা সাথে কার্যকরভাবে ব্যবহার করতে পারেনা।
যার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে থাকে।মানুষের শরীরের কোষগুলোতে ইনসুলিন শর্করা প্রবেশে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এক কথায় বলা যায় যে, ইনসুলিন মানুষের শরীরে চাবি হিসাবে কাজ করে। ডায়াবেটিস এমনই একটি রোগ যে এই রোগ থেকে কখনও মুক্তি পাওয়া যায় না তবে এই রোগকে সহজে নিয়ন্ত্রন করা যায়।
আইরিশ ইনডিপেনডেন্টের খবর এ বলা হয়েছে যে মানুষ যখন কার্বোহাইড্রেট বা সাধারণ শর্করাজাতীয় খাবার খাই তখন খাবার ভেঙে গ্লকোজে পরিণত হয়। আর ইনসুলিন হচ্ছে একধরনের হরমোন। হরমোনের কাজ হল গ্লকোজকে মানুষের শরীরের কোষগুলোতে পৌঁছে দেওয়া। এই গ্লকোজের মাধ্যমে শরীরের কোষগুলো শক্তি পেয়ে থাকে। সেই শক্তি দিয়েই একজন মানুষ তার দৈনিক কাজ কর্ম করে থাকে।
ডায়াবেটিস কেন হয়
বাংলাদেশসহ বিশ্বে প্রতি সাত সেকেন্ডে একজন মানুষ ডায়াবেটিস নামক মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। যেহেতু ডায়াবেটিস এক প্রকার মেটাবলিক ডিজঅর্ডার যার ফলে শরীরে পর্যাপ্ত ইনসুলিন তৈরি ও তার ব্যবহার করতে পারেনা। অনেক মানুয়ের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ইনসুলিন একেবারেই কার্য ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান এর এক জরিপে জানা গেছে যে বাংলাদেশে মোট ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা প্রায় এক কোটি ১০ লাখের মত। আমরা সারাদিন যে প্রকার খাবার আহার করে থাকি তা থেকে শরীর শর্করাকে ভেঙে চিনি বা গ্লকোজে এ রুপান্তরিত করে থাকে। অগ্ন্যাশয় থেকে ইনসুলিন নামের যে হরমোন নিসৃত হয় সেই হরমোন গুলোই শর্করাকে ভেঙে চিনি বা গ্লকোজে এ রুপান্তরিত করে থাকে।
আর এই চিনি শরীরের জ্বালানী বা শক্তি হিসেবে কাজ করে। শরীরে যখন ইনসুলিন সঠিক মাত্রায় উৎপাদন করতে না পারে অথবা ঠিক মতো কাজ না করে তখনই একজন মানুষের ডায়াবেটিস ধরা পড়ে। আর শরীরে রক্তের মধ্যে চিনি বা গ্লকোজের পরিমান বৃদ্ধি পায়। যার ফলে মানুষের দেহ আস্তে আস্তে দুর্বল হতে থাকে।
জাম কি এবং জামের বৈশিষ্ট্য
জাম একধনের ফল। এর ইংরেজি নাম Java plum বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium cumini. গাছ ১৪-৬০ ফিটের বেশি লম্বা হয়ে থাকে। সাধারণত এপ্রিলে ফুল ফোটে এবং মে মাসে ফল বড় হয়। ফল পাকলে কালো বা বেগুনী রঙ এর হয়ে থাকে।
জাম সাধারণত টক মিষ্টি ও সুস্বাদু প্রকৃতির হয়ে থাকে । প্রায় সকল শ্রেণির মানুষই এই জাম খেতে পছন্দ করে। বিভিন্ন রোগ নিয়ন্ত্রন এ, জাম অত্যন্ত গুরুত্ব ভূমিকা পালন করে থাকে। গবেষণা থেকে জানা যায় জাম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী একটি ফল।
জামের মধ্যে কম পরিমাণে চর্বি, জিরো কোলেস্টেরল, মাঝারি পরিমাণ ক্যালোরি ও উচ্চ পরিমাণে পানি রয়েছে। জামের মধ্যে থাকা আয়রন মানুষের শরীরের রক্ত বিশুদ্ধ করতে সাহায্য করে। জামের গ্লিসামিক ইনডেক্স কম থাকার কারণে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভালো বলে ভৈজ্ঞানিকভাবে প্রামাণিত। জামের ডায়াবেটিক বিরোধী গুন আছে। জামের বীচি রক্তের সুগার লেভেল ৩০% পর্যন্ত হ্রাস করার ক্ষমতা রাখে।
ডায়াবেটিস প্রতিরোধে জাম কিভাবে কাজ করে
বর্তমানে ডায়াবেটিস রোগে আকান্ত হওয়ার কোন বয়স লাগছে না। ডায়াবেটিসের সমস্যা থাকলে বাড়তে থাকে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ও কিডনির সমস্যার সম্ভাবনাও। সুস্থ থাকতে হলে জাম খাওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে। জাম রক্তে শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। তবে জাম শাঁসের চেয়ে অনেক বেশি উপকারি হল জামের বীজ।
জামের বীজে থাকে জাম্বোলিন। যা স্টার্চকে সুগারে পরিণত করতে সাহায্য করে। যার ফলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রন রাখে জাম। চিকিৎসকরা প্রতিদিন ডায়াবেটিস রোগীদের জাম খাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ছোটবেলা থেকে জাম খাওয়ার অভ্যাস থাকলে ডায়াবেটিস হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা কমে যায়।
ফল ও বীজ উভয়েই উপস্থিত জাম্বোলাইন। জামের বীজও অত্যন্ত ভাল ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রনে কাজ করে থাকে। জামের বীজগুলো রোদে শুকিয়ে ভালভাবে গুড়ো করে প্রতিদিন খালি পেটে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
ডায়াবেটিস রোগীরা কিভাবে জামের বীজ ব্যবহার করবে
- ভাল পাকা জাম পরিষ্কার করে একটি পরিষ্কার পাত্রে রাখতে হবে।
- ফল থেকে বীজ ভালভাবে ছাড়িয়ে পানি দিয়ে ভালভাবে ধুয়ে নিতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন বীজে শাঁস না লেগে থাকে।
- বীজগুলো ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে।
- ভালভাবে রোদে শুকানোর পর ভালো ভাবে গুড়ো করতে হবে।
- গুড়া করার পর চালুনিতে চেলে বায়ু নিরোধক কাচের পাত্রে রাখতে হবে এবং প্রতিদিন এক গ্লাস পানিতে এক চা চামচ জামের বীজের গুড়া মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে পান করতে হবে।
মন্তব্য
উপরিক্ত আলোচনা থেকে আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারছি যে একজন ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জাম কতটা উপকারী একটি ফল। জামের বিচির গুড়া সংরক্ষণ করে প্রতিদিন সেবনে সহজেই ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। তবে খেয়াল রাখতে হবে যেন পরিমাণ বেশি না হয়ে যায়। দৈনিক ১ চামচই যথেষ্ট। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করে মাত্রা কম বেশি করা যেতে পারে।
ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো।
সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url