কুমড়ো বড়ি কি এবং কুমড়ো বড়ি বানানোর সহজ পদ্ধতি

বাংলাদেশে কুমড়ো বড়ির চাহিদা নতুন করে বলার কিছু নেই। শীতের শুরু থেকেই শুরু হয়ে যায় এই বড়ি তৈরির প্রস্তুতি। প্রায় প্রতিটি সবজির সাথেই কুমড়ো বড়ির সংযোগ, রান্নার স্বাদে এনে দেয় এক অতুলনীয় মাত্রা। তবে অনেকেই হয়ত এই কুমড়ো বড়ি বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন না।
কুমড়ো বড়ি কি এবং কুমড়ো বড়ি বানানোর পদ্ধতি
এই পোষ্টে মূলত এই কুমড়ো বড়ি কি এবং কুমড়ো বড়ি বানানোর সহজ পদ্ধতি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

ভুমিকা

শীতকালের ভিন্নধর্মী এবং বেশ মুখরোচক খাবার হলো কুমড়ো বড়ি। এ বড়ি বানানোর জন্য শীতকালে নতুন মাসকালাই ডাল উঠলে চারদিকে যেন হিড়িক পড়ে যায়। মাসকালাই ডাল আর কুমড়ো বড়ি বিক্রি করে অনেকেই শীতকালের এই মৌসুমে বেশ ভালই লাভের মুখ দেখেন।

কেউ কেউ আবার বাড়ির উঠোনেই চারা লাগিয়ে চাল কুমড়ো সংরক্ষণ করে রাখেন শীত আসলে বড়ি বানাবে বলে। কুমড়ো বড়ি কি এবং কুমড়ো বড়ি বানানোর পদ্ধতি জানেনা এমন কম মানুষ পাওয়া যাবে। তবুও নতুন জেনারেশন কুমড়ো বড়ি খেতে পছন্দ করলেও তা বানানোর পদ্ধতি অনেকেরই জানা নাও থাকতে পারে। তাই আপনাদের সুবিধার জন্য আজকে আমরা কুমড়ো বড়ি কি লিখলাম।

অনেকেই আবার বিভিন্ন ধরনের সবজি ব্যবহার করেও বড়ি বানায় এবং তা সস্তায় বাজারে বিক্রি করে। কিন্তু কুমড়ো বড়ির স্বাদ এই সকল বড়ির সবটাকেই হার মানাবে।

কুমড়ো বড়ি কি

বড়ি কে এক কথায় এক ধরনের পুডিং বলা যায়। যার উৎপত্তিস্থল ভারত এবং অঞ্চল বলতে গেলে পূর্ব মেদিনীপুর পশ্চিমবঙ্গ। সাধারণত চাল কুমড়ো এবং মাসকালাইয়ের ডাল মিশিয়ে তৈরি হয় সুস্বাদু বড়ি।বিভিন্ন ধরনের মাছ দিয়ে বড়ির তরকারি খেতে খুবই দারুণ লাগে অথবা বড়ি ভেজে জলখাবার হিসেবেও খাওয়া যেতে পারে। বড়ি দেখতে সাধারণত ছোট ছোট গোল আকৃতির অথবা একটু মুকুটের মত হয়ে থাকে।

কুমড়ো বড়ি বানানোর প্রধান উপকরণ

আমরা নাম শুনেই বলতে পারি এ বড়ি বানাতে কুমড়ো তো অবশ্যই প্রয়োজন সাথে এই মিশ্রণের জন্য আরো কিছু উপকরণ প্রয়োজন হয়। নিচে কুমড়ো বড়ি বানানোর প্রধান দুটি উপকরণের নাম দেয়া হলো-
  • চাল কুমড়ো
  • মাসকালাই ডাল

চাল কুমড়ো

আমাদের দেশে চালকুমড়ো খুব জনপ্রিয় একটি সবজি। ঘরের চালেই এসব ফলানো সম্ভব বলেই এর নাম চাল কুমড়ো। তবে চাল কুমড়ো শুধু চালেই নয়, আজকাল জমিতে এবং মাচাতেও চাষ করা হচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন মিনারেল এবং ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি হল চাল কুমড়ো।দিন দিন বড়ি বানাতে চাল কুমড়োর চাহিদা বেড়েই চলেছে। 

মাত্র ১০০ দিনেই এই কুমড়ো চাষ করা সম্ভব এবং প্রতি বিঘাতে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার কুমড়ো কেনাবেচা করা সম্ভব। সারা বছর অনেকেই কুমড়োবড়ি বানানোর জন্য কুমড়ো কিনে থাকেন সে ক্ষেত্রে বাণিজ্যিকভাবে এ চাল কুমড়োর চাষ করলে ভালই লাভ করা সম্ভব। 

অনাবাদি এবং পতিত জমিতে ও এ কুমড়ো চাষ করা যায়। অনেকে আবার এই চাল কুমড়ো দিয়ে মোরব্বা বানিয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রে চাল কুমড়ো বাজারে বেশ ভালোই চাহিদা রয়েছে।

মাসকালাই ডাল

উপমহাদেশীয় একটি শস্য হচ্ছে মাসকালাই ডাল।রুচি কর বলবর্ধক এবং বেশ জনপ্রিয়ও বটে । এ ডাল ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ, স্নায়বিক রোগ, ব্যথা নাশক, হজম শক্তি বাড়ানোর সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ প্রতিরোধে বেশ ভালো কাজ করে। এটেল মাটিতে এ ডাল বেশ ভালো ফলন হয়। 

একটু অগভির চাষা জমিতেই বেশ ভালো ফলন দেয় ৮০ থেকে ১২০ দিনের মধ্যে ফল পাকে এবং বলা যায় যে হেক্টর প্রতি প্রায় ৭১৪ কেজি শুকনো ডাল পাওয়া যায়।

কুমড়ো বড়ি বানানোর পদ্ধতি

আগে মাসকালাই ডাল হাতে পিষে বেশ কষ্ট করে বড়ি বানানো হতো। কিন্তু বর্তমানে ডাল মেশিনে পিষে এনে কষ্ট একটু কম করেই বড়ি বাড়ানো সম্ভব হয়। সব থেকে দারুন ব্যাপার হচ্ছে এ বড়ি প্রায় এক বছর রেখেও খাওয়ার সম্ভব।

আসুন তাহলে কুমড়ো বড়ি বানানোর পদ্ধতি সম্পর্কে জানা যাক -

যা যা লাগবে কুমড়ো বড়ি বানাতে

  • চাল কুমড়ো একটার অর্ধেক
  • এক কাপ মাসকালাইয়ের ডাল
  • পাঁচফোড়ন গুড়া হাফ চা চামচ
  • কালোজিরা অল্প পরিমাণে

তৈরি পদ্ধতি

  • প্রথমে মাসকালাই ডালটাকে ভালো করে ধুয়ে সারারাত ভিজিয়ে রাখতে হবে, এক্ষেত্রে ডালের যে খোসা থাকে তা সারারাত ভিজে থাকার পরে হাত দিয়ে ভালোভাবে ধুলে খোসাগুলো উঠে আসবে। অথবা আপনারা চাইলে বাজারে খোসা ছাড়ানো মাসকালাই ডাল কিনতে পাওয়া যায়, সেটাও ব্যবহার করতে পারেন। এক্ষেত্রে ডালের খোসা উঠানোর ঝামেলাটা দূর হবে।
  • সকালে মিহি করে চাল কুমড়োটি গ্রেট করে নিতে হবে এবং ভালো করে ধুয়ে চাল কুমড়োর কষ বের করে নিতে হবে।
  • এরপর ভেজানো ডাল পাটায় মিহি করে পিষে নিন অথবা ব্লেন্ড করে নিন।
  • এখন একটি বড় পাত্রে পাঁচফোড়ন হাফ চামচ অল্প পরিমাণ কালোজিরা এবং বেটে রাখা মাসকালাইয়ের ডাল নিন এবং এতে অল্প অল্প করে গ্রেট করা চাল কুমড়ো দিয়ে খুব ভালোভাবে মাখাতেই থাকুন। মিশ্রনটি ততক্ষণ পর্যন্তই মাখাতে থাকতে হবে যতক্ষণ না খুবই হালকা বা ফ্লাফি না হয়ে যাচ্ছে।
  • আপনি চাইলে ফ্লাফি ভাবটা হচ্ছে কিনা এটা যাচাই করে নিতে পারবেন, এর জন্য একটি পাত্রে পানি নিন এবং মিশ্রণটি অল্প পরিমাণে এখানে ছেড়ে দেন। যদি দেখেন মিশ্রণটি পাত্রে তলাতেই পরে আছে তাহলে বুঝবেন যে এখনো মিশাতে থাকতে হবে, আর যদি মিশ্রণটি পানির ওপরে ভেসে আসে তাহলে বুঝবেন যে আপনার মাখানো শেষ এখন বড়ি দেবার পালা।
  • এরপর একটি পাতলা কাপড়ের ওপরে আপনার পছন্দমত ছোট বা বড় সাইজের আপনার পছন্দের সেইপ বা গঠন অনুযায়ী বড়ি বসিয়ে দিতে পারেন। তবে মনে রাখতে হবে যে এই কাজটি অবশ্যই টানা রোদের মধ্যেই করতে হবে। কারণ রোদ না হলে বড়ি শুকাবে না সে ক্ষেত্রে বড়ি গুলো লাল হয়ে যাবে এবং খেতে মোটেও ভালো হবে না আর একটু টক গন্ধ চলে আসবে। তাই অবশ্যই চেষ্টা করবেন রোদের দিন বড়ি দেওয়া।
  • এবারে বড়ি গুলোকে টানা ৫-৬ দিন রোদে শুকিয়ে নিন। দেখবেন যে বড়িগুলো দেওয়ার সময় থেকে শুকনো হওয়ার পরে বেশ হালকা হয়ে যাবে। এরপর এয়ার টাইট বক্সে করে সংরক্ষণ করতে পারবেন দীর্ঘ এক বছর যাবত পর্যন্ত। আপনি চাইলে পরে মাঝে মাঝে বড়ি গুলোকে রোদে দিতে পারেন।

মন্তব্য

এই কুমড়ো বড়ি আপনি সবজি, ভর্তা বা মাছ এর তরকারিতে বিভিন্নভাবেই খেতে পারবেন। যদিও বড়ি ভর্তা আমার খুবই পছন্দের একটি খাবার। বড়ি আপনার রান্নার তরকারিতে সাদ বাড়িয়ে তুলবে দ্বিগুণ। আপনি চাইলে এই বড়ি বানিয়ে বাণিজ্যিকভাবে ইনকাম/আয় করতে পারবেন। আপনার আয় বাড়াতে এই কুমড়ো বড়ির জুড়ি মেলা ভার।

এই পোস্টটি ভালো লাগলে অবশ্যই জানাবেন এবং আপনাদের কোন কিছু জানার থাকলে জিজ্ঞেস করবেন কমেন্ট করে।


ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url