প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা- যেগুলো খুব সহজেই পাওয়া যায়

প্রোটিন মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি উপাদান। বিশেষ করে গর্ভবতী মা এর গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে অর্থাৎ তৃতীয় ত্রৈমাসিক এ এই প্রোটিনের প্রয়োজন অনেক বেশি হয়। তাই "প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা- যেগুলো খুব সহজেই পাওয়া যায়" সম্পর্কে এই পোষ্টে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা- যেগুলো খুব সহজেই পাওয়া যায়
চলুন জেনে নেওয়া যাক খুব সহজেই পাওয়া যায় এরকম প্রোটিন জাতীয় খাবারগুলো কি কি।

প্রোটিন কি

প্রোটিন হল একটি পুষ্টি উপাদান যা আপনার শরীরের কোষ বৃদ্ধি ও মেরামত করতে এবং সঠিকভাবে কাজ করার জন্য প্রয়োজন। এটি বৃহৎ জৈব অণু এবং ম্যাক্রোমোলিকুল, যা অ্যামিনো অ্যাসিডের অবশিষ্টাংশের এক বা একাধিক দীর্ঘ চেইন নিয়ে গঠিত।

প্রোটিনগুলি অ্যামিনো অ্যাসিড নামক বিল্ডিং ব্লক দিয়ে তৈরি। বেশিরভাগ প্রোটিন ২০ টি ভিন্ন ভিন্ন L-α- অ্যামিনো অ্যাসিডের সিরিজ থেকে নির্মিত রৈখিক পলিমার নিয়ে গঠিত। সমস্ত প্রোটিনোজেনিক অ্যামিনো অ্যাসিডের সাধারণ কাঠামোগত বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যার মধ্যে একটি α-কার্বন রয়েছে, যার সাথে একটি অ্যামিনো গ্রুপ, একটি কার্বক্সিল গ্রুপ এবং একটি পরিবর্তনশীল পার্শ্ব চেইন বন্ধন রয়েছে।

মানুষের শরীর এগুলিকে নতুন প্রোটিন যেমন পেশী এবং হাড় এবং অন্যান্য যৌগ যেমন এনজাইম এবং হরমোন তৈরি করতে ব্যবহার করে । মানব শরীর এগুলিকে শক্তির উৎস হিসাবেও ব্যবহার করতে পারে। কিছু অ্যামিনো অ্যাসিড মানুষের শরীর দ্বারা তৈরি হয় - এর মধ্যে ১১ টি রয়েছে যা অ-প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড হিসাবে পরিচিত। 

৯ টি অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে যা মানষের শরীর তৈরি করতে পারে না এবং সেগুলি অপরিহার্য অ্যামিনো অ্যাসিড হিসাবে পরিচিত। তাই আপনার খাদ্যতালিকায় এগুলোর যথেষ্ট পরিমাণ অন্তর্ভুক্ত করতে হবে যাতে আপনার শরীর ঠিকভাবে কাজ করতে পারে।

প্রোটিনের মূল উপাদান কি

প্রোটিন ব্যতীত কোনো প্রকার জীবন্ত প্রাণী এর অস্তিত্ব চিন্তা করা অসম্ভব। তাই প্রোটিনকে সমস্ত প্রাণের মুখ্য উপাদান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণত নাইট্রোজেন হল প্রোটিনের মূল উপাদান। সমস্ত প্রোটিনই সাধারণত হাইড্রোজেন, কার্বন, অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন দ্বারা গঠিত। 

প্রোটিনকে ছোট ছোট অংশে ভাঙলে প্রথমেই অ্যামিনো এসিড এবং পরে হাইড্রোজেন, কার্বন ইত্যাদি পদার্থ পাওয়া যায়।

প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা- যেগুলো খুব সহজেই পাওয়া যায়

নিচে প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা- যেগুলো খুব সহজেই পাওয়া যায়, সে সম্পর্কে আলোচনা করা হল-

ডিম

প্রোটিন এর অন্যতম উতকৃষ্ট উৎস হল একটি সম্পূর্ণ ডিম। ডিমের মধ্যে ভিটামিন, খনিজ, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। একটি বিষয় সবার জানা উচিত যে, ডিমের সাদা অংশের পুরোটাই বিশুদ্ধ প্রোটিন এবং কুসুম অন্তর্ভুক্ত পুরো ডিম ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং স্বাস্থ্যকর চর্বি সহ আরও অনেক পুষ্টির উতকৃষ্ট উৎস।

একটি ৫০ গ্রাম ওজনের পুরো ডিমে সাধারণত ৬.৩ গ্রাম প্রোটিন বিদ্যমান থাকে।

মুরগির মাংস

মুরগির মাংস প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস। প্রোটিন ছাড়াও মুরগির মাংস, ভিটামিন বি এবং জিঙ্ক ও সেলেনিয়ামের মতো খনিজ সরবরাহ করে থাকে। ১০০ গ্রাম ওজনের একটি মুরগির মাংসে সাধারণত ৩০-৩১ গ্রাম প্রোটিন থাকে।

কটেজ পনির (Cottage cheese)

কটেজ পনির এমন একধরণের পনির যেখানে ক্যালোরি এবং চর্বির পরিমাণ অনেক কম থাকে, কিন্তু প্রোটিন অনেক বেশি পরিমাণে থাকে। প্রোটিন ছাড়াও কটেজ পনির এর মধ্যে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি ১২, রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি ২) এবং অন্যান্য বিভিন্ন পুষ্টি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়।

এক কাপ অর্থাৎ ২২৬ গ্রাম কটেজ পনিরে সাধারণত ২৮ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। এছাড়াও মজেরেলা পনিরে প্রতি ২৮.৩৫ গ্রামে ৬.২৯ গ্রাম প্রোটিন এবং চেডার পনির এ প্রতি ১৭ গ্রাম স্লাইসে ৩.৯৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।

গরুর দুধ

শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পুষ্টি উপাদানই আপনি গরুর দুধ থেকে পেতে পারেন। গরুর দুধ প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস। এছাড়াও এতে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি ২) এর মতো ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ রয়েছে।

এক কাপ অর্থাৎ ২৪৬ মিলি দুধে ৮.৩২ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।

মসুর ডাল

মসুর ডাল উদ্ভিদ জাতীয় প্রোটিনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উতকৃষ্ট উৎস। আপনি যদি নিরামিষ খাবার বেশি পছন্দ করেন তবে প্রোটিন এর জন্য মসুর ডাল অন্যতম ভাল নির্বাচন। প্রোটিন ছাড়াও মসুর ডাল, ফাইবার, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, আয়রন, তামা এবং ম্যাঙ্গানিজ সহ অন্যান্য পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে যারা নিয়মিত মসুর ডাল এবং অন্যান্য ডাল খান তাদের হৃদরোগ এবং ফ্যাটি লিভার রোগের মতো স্বাস্থ্যগত অবস্থার বিকাশের ঝুঁকি কম থাকে।

১০০ গ্রাম রান্না করা মসুর ডালে সাধারণত ৯.০২ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।

চর্বিহীন গরুর মাংস

চর্বিহীন গরুর মাংস প্রোটিনের একটি সমৃদ্ধ উৎস। এছাড়াও এতে আয়রন, জিঙ্ক, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন বি ১২ এবং বি ৬ ও বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়।

লাল মাংস একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্য, তবে খাবার পরিমাণ পরিমিত হওয়া ভাল। উচ্চ পরিমাণে লাল মাংস খাওয়ার সাথে সাথে কোলোরেক্টাল, ক্যান্সার এর মত বিভিন্ন রোগ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৮৫ গ্রাম চর্বিহীন গরুর মাংস এ সাধারণত ২৪.৬ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।

মাছ

মাছ প্রোটিনের একটি চমৎকার উৎস। এছাড়াও এতে আয়োডিন, সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন বি ১২ এর মতো বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন এবং খনিজ পাওয়া যায়। সব ধরণের মাছে প্রোটিন বেশি পরিমাণে পাওয়া যায়। নিচে কয়েকটি মাছে প্রোটিন এর পরিমাণ দেওয়া হল-
  • রুই মাছ- প্রতি ১০০ গ্রামে ১৬.৪ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
  • শোল মাছ- ১০০ গ্রামে ১৬.২ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
  • টাকি মাছে- ১০০ গ্রামে ১৭.১৮ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
  • পুটি মাছ- ১০০ গ্রামে ১৮.১ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।
  • টেংরা মাছ- ১০০ গ্রামে ১৬.২ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।

মিষ্টি কুমড়ার বীজ

মিষ্টী কুমড়ার বীজ আয়রন, ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম এবং জিঙ্কের মতো খনিজগুলির একটি দুর্দান্ত উৎস। এছাড়াও, এর মধ্যে উদ্ভিদ-ভিত্তিক প্রোটিন এবং ফাইবার পাওয়া যায়।

১/৪ কাপ অর্থাৎ ২৯.৫ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ার বীজ এ ৮.৮ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।

চিনাবাদাম এবং চিনাবাদামের মাখন (Peanuts and peanut butter)

চিনাবাদাম এবং চিনাবাদামের মাখন প্রোটিন, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম এবং ভিটামিন ই এর মতো পুষ্টিতে ভরপুর থাকে। ২৮.৩৫ গ্রাম চিনা বাদামে ৭.৩১ গ্রাম প্রোটিন এবং ৩২ গ্রাম চিনাবাদাম মাখনে ৭.২ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।

ডালিম

ডালিম ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপাদান এ ভরপুর। একটি ডালিমে সাধারণত ৪.৭ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়।

প্রোটিন এর কাজ কি

  • টিস্যু বৃদ্ধি এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য শরীরের প্রোটিন প্রয়োজন।
  • এনজাইমগুলি হল একধরণের প্রোটিন যা কোষের ভিতরে এবং বাইরের হাজার হাজার জৈব রাসায়নিক বিক্রিয়ায় সাহায্য। যেমন- হজম, শক্তি উৎপাদন, রক্ত জমাট বাধা, পেশী সংকোচন ইত্যাদি।
  • ফাইব্রাস প্রোটিন নামে পরিচিত এক শ্রেণীর প্রোটিন আপনার শরীরের বিভিন্ন অংশকে কাঠামো, শক্তি এবং স্থিতিস্থাপকতা প্রদান করে।
  • প্রোটিনগুলি একটি বাফার সিস্টেম হিসাবে কাজ করে, আপনার শরীরের রক্ত এবং অন্যান্য শারীরিক তরলগুলির সঠিক pH মান বজায় রাখতে সহায়তা করে।
  • আপনার রক্তে প্রোটিন আপনার রক্ত এবং পার্শ্ববর্তী টিস্যুর মধ্যে তরল ভারসাম্য বজায় রাখে।
  • প্রোটিন আপনার শরীরে জীবানুর আক্রমণকারীদের থেকে রক্ষা করতে অ্যান্টিবডি তৈরি করে।
  • কিছু প্রোটিন আপনার পুরো শরীর জুড়ে পুষ্টি পরিবহন করে, অন্যরা সেগুলি সঞ্চয় করে।

মন্তব্য

"প্রোটিন জাতীয় খাবার তালিকা- যেগুলো খুব সহজেই পাওয়া যায়" সম্পর্কিত কোন প্রশ্ন থাকলে অবশ্যই নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করে জানাতে পারেন। অথবা আমাদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।

ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url