২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস রচনা
২৬ শে মার্চ হল মহান স্বাধীনতা দিবস। বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্রগ্রামের কালুরঘাট স্বাধীনতা বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের জনগণের উদ্দেশ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণের দাওয়াত বা ঘোষণা দেয়া হয়। আজকে আমরা জানবো ২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে।
২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস রচনা বর্ণনা করতে গেলে নিম্নের বিষয়বস্তু গুলোর বর্ণনা জরুরি।
ভূমিকা
যে কোন স্বাধীনতা এত সহজে অর্জন করা যায় না। তেমনি বাঙালিদের লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে এই স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে। ২৬ শে মার্চ এই দিনটি জাতি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেছে শুধু মাত্র শহীদদের জন্য। বাংলাদেশের মানুষের কাছে মুক্তির প্রতিজ্ঞা হিসেবে উদ্দীপ্ত হল এই স্বাধীনতা দিবস। পুরো জাতি প্রতি বছর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হৃদয়ে ধারণ করে দিবসটি উদযাপন করে থাকে।
আমরা শ্রদ্ধা জানায় মহান স্বাধীনতা রূপকার বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ভাষার জন্য নৃশংস গনহত্যার শিকার লাখো সাধারণ মানুষ ও সব কিছু হারানো মা-বোনের প্রতি। আমরা এখন বুক ফুলিয়ে যে ভাবে চলাফেরা করছি তা আর সম্ভব ছিলনা যদি না লাখো লাখো মানুষ এক হয়ে যুদ্ধ না করত।
২৬ শে মার্চ ১৯৭১ এর ইতিহাস
২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস। লক্ষ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনা হয়েছে এই স্বাধীনতা, এই দিনে জাতি অতি মর্যাদার সাথে স্মরণ করেছে বীর শহিদদের। ২৬ শে মার্চ ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা ইতিহাস লিখতে হলে পিছনের দিকে যেতে হবে অর্থাৎ ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু করতে হবে।
ইংরেজদের শক্তি চলে যাওয়ার আগে এই উপমহাদেশকে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুইটি দেশে ভাগ করা যায়। যদিও ধর্মভিত্তিক এই ভাগাভাগিতে কোনো প্রকার সমস্যা বোঝা না গেলেও কিছুদিন যেতে না যেতেই খোলস পাল্টে আসল রূপটি ধরা পড়তে থাকে। বর্তমান বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের উপর অর্থনৈতিক, রাজনৈতিকভাবে শাষণ শোষণ চালাতে থাকে পশ্চিম পাকিস্তানিরা।
বাঙালিদের মাতৃভাষা ছিল বাংলা। ১৯৫২ সালে সর্বপ্রথম মাতৃভাষার ওপর আঘাত হানে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানাতে যখন বাংলার দামাল ছেলেরা রক্ত দিল রাজপথে ঠিক তখন থেকেই বলতে গেলে বাঙালিরা বুঝে গিয়েছিল যে স্বাধীনতায় হল আসল মুক্তি। তাছাড়া এই অত্যাচার চলতেই থাকবে। সরকারি, সামরিক, বেসামরিক সব ক্ষেত্রেই নজির বিহীন বৈষম্যের শিকার হতে থাকে বাঙালিরা।
এমনি বাংলাকে উর্দু হরফে লেখার পর্যন্ত চেষ্টা করেছিল। এই সব কিছুর কারনে বাঙালিরা ভেতরে ভেতরে ফুঁসতে থাকে। ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ৬৬ সালের ৬ দফা, ৬৯ সালের গনঅভ্যুথুনা তারই ইঙ্গিত করে। বাঙালিরা বুঝতে পারে যে প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন কোনো ভাবেই হস্তান্তর করবে না পাকিস্তানি সামরিক শাসকরা।
যার ফলে ৭০ সালে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জিতার পরও ক্ষমতায় বসতে দেয়া হয়নি। আলোচনার নামে টালবাহানা করছিল সকল বুদ্ধিমান মানুষরা বুঝতে পারছিলো যে সামনে কি আসতে চলেছে। আর এই ভাবেই বাঙালিরা এগিয়ে যেতে থাকে সেই রক্তক্ষয়ী ২৬শে মার্চ এর ইতিহাস এর দিকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৭ই মার্চের ভাষনে এক বুদ্ধিদীপ্ত কাজ করে ফেললেন যা ইতিহাসের পাতায় বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাস এর একটি গুরুত্ব পূর্ণ অংশ হিসেবে থাকবে। ভাষণে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছিল যে বাঙালিকে এবার স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করতে হবে, কিন্তু সরাসরি দেশকে স্বাধীন ঘোষণা করেননি।
কারন সেই সময় তার নিজের এবং উপস্থিত জনতার জীবনের ঝুঁকি ছিল। আর সেই ভাষন এখনও প্রতিটি বাঙালির কানে কানে বাজে। ভাষনের মূল স্লোগান ছিল “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। জয় বাংলা।”
পাকিস্তানিরা যখন শান্তির পথ বেছে নিল না , ২৫ মার্চে জেনারেল নিয়াজি, জেনারেল রাও, টিক্কা কান এদের মাষ্টার প্ল্যানে বাঙালিদের হত্যা করার মহাউৎসবে মেতে উঠেছিল। ওই রাতের বঙ্গবন্ধুকে গ্রেপ্তার করার পূর্বে বেতারের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন।
পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর হয়ে ২৬ শে মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। এরপর ২৭ মার্চ মেজর জিয়াউর রহমান কালুরঘাট বেতারকেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। তারপর থেকেই শুরু হয়ে যাই ভাষা আন্দোলনের সেই রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ।
২৬ শে মার্চ কেন স্বাধীনতা দিবস
২০০ বছরের অবসান ঘটিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে বিদায় নেয় ব্রিটিশরা। তবে দীর্ঘ সময় শোষনের ইতিহাস শেষ হয়েও যেন শেষ হলো না। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে বাঙালিদের উপর হামলা করে পাকিস্তানি বাহিনী। যা অপারেশন সার্চলাইট নামে পরিচিত। রাত ১১.৩০ মিনিটের দিকে শুরু হয়।
এই অপারেশনে পরিকল্পনা ছিল বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা এবং বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে দুর্বল করে দেওয়া। পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরহ বাঙালিদের ওপর হামলা চালানোর পর, সেই রাতেই ২৬ শে মার্চ রাত ১.৩০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়। তবে গ্রেফতার হওয়ার কিছু সময় আগেই বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন যে আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন।
অর্থাৎ সেদিন থেকেই আমরা পাকিস্তানের অংশ নই আমরা স্বাধীন। মূলত সেই দিনই আমরা স্বাধীনতা লাভ করেছি। যার ফলে ২৬ শে মার্চকে স্বাধীনতা দিবস ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ২৬ শে মার্চে যে দেশ স্বাধীন হয়েছে তা কিন্তু নয়। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর যুদ্ধে জয়লাভ করে এবং অবশেষে ১৬ই ডিসেম্বর এ দেশ স্বাধীন লাভ করে।
২৬ শে মার্চ এর সংক্ষিপ্ত বক্তব্য
৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ, ৫৬ সালের সংবিধান বাস্তাবায়নের জন্য আন্দোলন, ৫৮ সালের মার্শাল বিরোধী আন্দোলন, ৬২ সালে শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ৬৬ সালের বাঙালির মুক্তির সনদ ৬ দফার আন্দোলন, ৬৯ সালের রক্তঝরা, ৭০ সালে ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনে নিরস্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন সমস্ত কিছুই বাঙালি জাতির গৌরবোজ্জল ইতিহাস।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি শাসনামলে দীর্ঘ ১২ বছরের বেশি সময় ধরে কারাগারের অভ্যন্তরে থাকে, বেশ কয়েকবার ফাঁসির কাষ্ঠের মুখোমুখি, অসংখ্যা মিথ্যা মামলায় কারাবরণ করার পরও এদেশের স্বাধীনতার আন্দোলনে প্রেরণা দিয়েছিলেন। তার অপরিসীম সাহস ও আকর্ষণ নেতৃত্ব পরাধীন বাঙালি জাতিকে সংগ্রামী হওয়ার অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিলেন।
সোহরাওয়াদী উদ্যানে ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ সেই ঐতিহাসিক বক্তব্যে বাঙালীদের কঠিন ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতার অর্জনের উদ্দেশ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে শক্তি ও সাহস যুগিয়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লক্ষ্য ছিল যে বাংলাদেশকে স্বাধীন করে গরীব-দুঃখী মেহনতি মানুষের মুখে হাসি ফোটানো।
তিনি জেল জুলুম শত দুঃখ কষ্ট যন্ত্রণা সহ্য করে হলেও বাংলা কৃষক শ্রমিক জনতার মুখে হাসি ফুটানোর জন্য চেষ্টা চালিয়েছেন। বাংলা, বাঙালি, বঙ্গবন্ধু এই তিনটি বিষয়কে বাংলার মানুষ এক বৃত্তে তিনটি চেতনার ফুল হিসেবে মনে করে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মানুষের মাঝে চিরদিন স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
২৬ শে মার্চ এর কবিতা
২৬ শে মার্চ দিনটি কখনই ভোলোর মতো নয়। এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। বাঙালিদের শত্রুর হাত থেকে মুক্তি করতে তিনি ২৬ শে মার্চ যুদ্ধের ঘোষণা দেন। তার ভাষণের ফলে লক্ষ লক্ষ বাঙালি ছাত্র, কৃষক-শ্রমিক সহ সকল বাঙালি মুক্তির জন্য যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। ২৬শে মার্চ নিয়ে অনেক লেখক লেখিকা সুন্দর সুন্দর কবিতা লিখেছেন।
এই সব কবিতার মাধ্যম দিয়ে কবিরা স্বাধীনতা দিবসকে মানুষের কাছে ফুটিয়ে তুলেছেন। নিম্নে কয়েকটি কবিতা দেয়া হল-
অস্ত্র সমর্পণ
হেলাল হাফিজ
মারণাস্ত্র মনে রেখো ভালোবাসা তোমার আমার।
নয় মাস বন্ধু বলে জেনেছি তোমাকে, কেবল তোমাকে।
বিরোধী নিধন শেষে কতোদিন অকারণে
তাঁবুর ভেতর ঢুকে দেখেছি তোমাকে বারবার কতোবার।
মনে আছে, আমার জ্বালার বুক
তোমার কঠিন বুকে লাগাতেই গর্জে উঠে তুমি
বিস্ফোরণে প্রকম্পিত করতে আকাশ, আমাদের ভালবাসা
মুহূর্তেই লুফে নিত অত্যাচারী শক্রর নি:শ্বাস।
মনে পড়ে তোমার কঠিন নলে তন্দ্রাতুর কপালের
মধ্যভাগ রেখে, বুকে রেখে হাত
কেটে গেছে আমাদের জঙ্গলের কতো কালো রাত!
মনে আছে, মনে রেখো
আমাদের সেই সব প্রেম- ইতিহাস।
অথচ তোমাকে আজ সেই আমি কারাগারে
সম্পর্ণ করে, ফিরে যাচ্ছি ঘরে
মানুষকে ভালোবাসা ভালোবাসি বলে।
যদি কোনোদিন আসে আবার দুর্দিন,
যেদিন ফুরাবে প্রেম অথবা হবে না প্রেম মানুয়ে মানুয়ে ভেঙে সেই কালো কারাগার
আবার প্রণয় হবে মারণাস্ত্র তোমার আমার।
এ লাশ আমরা রাখবো কোথায়
হুমায়ুন আজাদ
এ লাশ আমরা রাখবো কোথায় ?
তোমন যোগ্য সমাধি কই?
মৃত্তিকা বলো, পর্বত বলো
অথবা সুনীল-সাগর-জল
সব কিছু ছেঁদো, তুচ্ছ শুধুই!
তাইতো রাখি না এ লাশ আজ
মাটিতে পাহাড়ে কিম্বা সাগরে,
হৃদয়ে হৃদয়ে দিয়েছি ঠাঁই।
শহীদদের প্রতি
আসাদ চৌধুরী
তোমাদের যা বলার ছিল
বলছে কি তা বাংলাদেশ ?
শেষ কথাটি সুখের ছিল ?
ঘৃণার ছিল ?
নাকি ক্রোধের,
প্রতিশোধের,
কোনটা ছিল ?
নাকি কোনো সুখের
নাকি মনে তৃপ্তি ছিল
এই যাওয়াটাই সুখের।
তোমার গেলে, বাতাস যেমন যায়
গভীর নদী যেমন বাঁকা
স্রোতটিকে লুকায়
যেমন পাখির ডানার ঝলক
গগনে মিলায়।
সাঝেঁ যখন কোকিল ডাকে
কারনিসে কি ধুসর শাখে
বারুদেরই গন্ধস্মৃতি
ভুবন ফেলে ছেয়ে
ফুলের গন্ধ পরাজিত
স্লোগান আসে ধেয়ে।
তোমার যা বলার ছিল
বলছে কি তা বাংলাদেশ ?
স্বাধীনতা তুমি
শামসুর রহমান
স্বাধীনতা তুমি
রবিঠাকুরের অজর কবিতা, অবিনাশী গান।
স্বাধীনতা তুমি
কাজী নজরুল ঝাঁকড়া চুলের বাবরি দোলানো
মহান পুরুষ, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে কাঁপা-
স্বাধীনতা তুমি
শহীদ মিনারে অমর একুশ ফেব্রুয়ারির উজ্জল সভা
স্বাধীনতা তুমি
পতাকা-শোভিত শ্লোগান-মুখর ঝাঁঝালো মিছিল।
স্বাধীনতা তুমি
ফসলের মাঠে কৃষকের হাসি।
স্বাধীনতা তুমি
রোদেলা দুপুরে মধ্যপুকুরে গ্রাম্য মেয়ের অবাধ সাঁতার।
স্বাধীনতা তুমি
মজুর যুবার রোদে ঝলসিত দক্ষ বাহুল গ্রস্থিল পেশী।
স্বাধীনতা তুমি
অন্ধকারের খাঁ খাঁ সীমান্তে মুক্তিসেনার চোখের ঝিলিক।
স্বাধীনতা তুমি
বটের ছায়ায় তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থীর
শানিত কথার ঝলসানি-লাগা সতেজ ভাষণ।
স্বাধীনতা তুমি
চা-খানায় আর মাঠে-ময়দানে ঝোড়ে সংলাপ।
স্বাধীনতা তুমি
কালবৈশাখীর দিগন্তজোড়া মত্ত ঝাপটা।
স্বাধীনতা তুমি
শ্রানণে অকূল মেঘনার বুক
স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন।
স্বাধীনতা তুমি
উঠানে ছড়ানো মায়ের শুভ্র শাড়ির কাঁপন।
স্বাধীনতা তুমি
বোনের হাতের নম্র পাতায় মেহেদীর রঙ।
স্বাধীনতা তুমি বন্ধুর হাতে তারার মতন জ্বলজ্বলে এক রাঙা পোস্টার।
স্বাধীনতা তুমি
গৃহিনীর ঘন খোলা কালো চুল,
হাওয়ায় হাওয়ায় বুনো উদ্দাম।
স্বাধীনতা তুমি
খোকার গায়ের রঙিন কোর্তা,
খুকীর অমন তুলতুলে গালে
রৌদ্রের খেলা।
স্বাধীনতা তুমি
বাগানের ঘর, কোকিলের গান, বয়েসী বটের ঝিলিমিলি পাতা,
যেমন ইচ্ছে লেখার আমার কবিতার খাতা।
অপারেশন সার্চলাইট
বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাসে অপারেশন সার্চলাইট একটি ঘৃনিত কষ্টদায়ক ঘটনা হিসেবে পরিচিত। শেখ মুজিব ও ইয়াহিয়া আলোচনার আড়ালে বাঙালিদের স্বাধীনতার ইচ্ছা গুলোকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া, টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ করেন।
টিক্কা খান ও তার বাহিনীরা বাংলার মানুষকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার জন্য ২৫ শে মার্চ কালরাত্রে নিরস্ত্র, ঘুমন্ত বাঙালিদের উপর নৃশংস, বর্বর গনহত্যা চালায় যা বাংলার স্বাধীনতার ইতিহাসে ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে পরিচিত।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয় লাভ হওয়ার পরও পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী তারা তাদের ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নানা রকম ষড়যন্ত্র সৃষ্টি করে। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বিভিন্ন প্রকার আলোচনার নামে সময়ক্ষেপণ করে বাঙালিদের দমন করার চিন্তা ভাবনা করেছিলেন।
এর কারনে জেনারেল টিক্কা খান, মে.জে.খাদিম হোসেন ও রাও ফরমান আলী অপারেশন সার্চলাইটের চূড়ান্ত নকশা তৈরী করেন। ইয়াহিয়ার নির্দেশে ২৫শে মার্চ রাত প্রায় ১০ টার সময় ইতিহাসের সবচেয়ে লজ্জাকর ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ড চালায় বাঙালিদের উপর।
আর সেই রাতে প্রায় ৫০,০০০ লোক নিহত হন ঢাকায়। বঙ্গবন্ধুকে বন্দী করে পাকিস্তানে নিয়ে আসা হয়। মূলত বাঙালিকে চিরতরে শেষ করে দেয়ার জন্য পাকিস্তানি বাহিনীরা এ সামরিক অভিযান চালায় যার সাংকেতিক নাম হল “অপারেশন সার্চলাইট”।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের স্লোগান
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস দেশের গৌরবময় ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ২৬শে মার্চ, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে শুরু হয়েছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, যা ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৬ই ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের মাধ্যমে অর্জিত হয়।
এই দিনটি দেশের মানুষের কাছে শুধু একটি তারিখ নয়, বরং আত্মত্যাগ, বীরত্ব এবং স্বাধীনতার চেতনার প্রতীক। তাই স্বাধীনতা দিবসের স্লোগানগুলোও সেই সাহস ও চেতনার কথাই তুলে ধরে। স্বাধীনতা দিবসের স্লোগানগুলোতে রয়েছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কথা, দেশপ্রেমের উদ্দীপনা, মুক্তির আহ্বান, এবং জাতীয় ঐক্যের বার্তা।
কিছু বিখ্যাত স্বাধীনতা দিবসের স্লোগান নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
১. “জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু”
এই স্লোগানটি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে এবং এখনও বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী স্লোগান। এটি দেশের মানুষের জন্য মুক্তিযুদ্ধের অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিল। 'জয় বাংলা' বাংলাদেশের জাতীয়তাবোধ ও স্বাধীনতার প্রতীক। আর 'জয় বঙ্গবন্ধু' শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান।
২. “তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা”
এই স্লোগানটি বাংলাদেশের প্রকৃতিকে কেন্দ্র করে জাতীয় চেতনার কথা বলে। দেশের প্রধান নদীগুলোর নাম উল্লেখ করে এটি মানুষের মধ্যে একতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের আহ্বান জানায়।
৩. “যারা করেছে আত্মত্যাগ, স্মরণ করো সেই বীরদের”
মুক্তিযুদ্ধের বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এই স্লোগানটি ব্যবহার করা হয়। যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধারা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন স্বাধীনতার জন্য, তাদের আত্মত্যাগের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানায় এই স্লোগান।
৪. “স্বাধীনতা আমার অধিকার, কেড়ে নেবে কে?”
এই স্লোগানটি মুক্তির চেতনার কথা বলে। এটি স্বাধীনতার মর্ম ও আত্মমর্যাদার প্রতি সম্মান জানিয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানায়।
৫. “এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাংলার স্বাধীনতা আনলো যারা”
এই স্লোগানটি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানকে স্মরণ করিয়ে দেয়। এতে রয়েছে স্বাধীনতার মূল্যবোধ এবং দেশপ্রেমের উদ্দীপনা।
৬. “দেশের জন্য করব জীবন দান, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান”
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জাতীয় স্বার্থে জীবন উৎসর্গ করার অনুপ্রেরণা যোগায় এই স্লোগান। এটি স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গের অঙ্গীকারকে শক্তিশালী করে।
৭. “বাংলাদেশের স্বাধীনতা, চির অম্লান হোক”
স্বাধীনতার চেতনাকে চিরস্থায়ী এবং অম্লান রাখার আহ্বান জানানোর জন্য এই স্লোগান ব্যবহৃত হয়। এটি স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় ঐক্য ও গর্বকে প্রকাশ করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের স্লোগানগুলোতে দেশের গৌরবময় ইতিহাস ও জাতীয়তাবোধের প্রতিফলন ঘটে। এসব স্লোগান শুধুমাত্র ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর স্মারক নয়, বরং দেশের মানুষকে দেশের প্রতি দায়িত্বশীলতা, ঐক্য এবং আত্মত্যাগের জন্য উৎসাহিত করে।
উপসংহার
পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে, লক্ষ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীন দেশ পেয়েছি। এই স্বাধীনতার পিছনে লক্ষ লক্ষ মানুষের কষ্ট, ব্যথা বেদনা, দুঃখ লুকিয়ে রয়েছে। উপরোক্ত বর্ণিত "২৬ শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবস রচনা"- আলোচনাটি একজন মানুষকে স্বাধীনতা দিবস সম্পর্কে ভাল ভাবে জানতে সাহায্য করবে।
ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো।
সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url