আমের উপকারিতা, অপকারিতা এবং আম সম্পর্কে ১০ টি বাক্য

বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফল হচ্ছে আম। পুরো আমের মৌসুম জুড়ে চলে বিভিন্ন আম খাবার উৎসব। তবে আমের উপকারিতা এবং অপকারিতা সম্পর্কে সবারই একটি সাধারণ ধারণা থাকা উচিত। এই পোষ্টে আমের উপকারিতা, অপকারিতা এবং আম সম্পর্কে ১০ টি বাক্য নিয়ে আলোচনা করা হল।
আমের উপকারিতা, অপকারিতা এবং আম সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
চলুন জেনে নেওয়া যাক আমের উপকারিতা, অপকারিতা এবং আম সম্পর্কে ১০ টি বাক্য।

আমের পরিচিতি

বর্তমানে আম একটি অতি জনপ্রিয় ফল। সকল বয়সী মানুষই আম খেতে অনেক পছন্দ করে থাকেন। এটি একটি রসালো, অর্ধবৃত্তাকার গ্রীষ্ম মৌসুমী ফল যা দেখতে হলুদ, সবুজ, লাল রঙের হয়ে থাকে। মূলত দক্ষিণ এশিয়াতেই সর্বপ্রথম আম উৎপাদন হয়। যার মাধ্যমে আস্তে আস্তে সকল দেশের মানুষ এই আমের সাথে পরিচিতি লাভ করে। 

এই আমটি অ্যানাকার্ডিয়েসিয়েই পরিবারের বিশেষ একটি ফল। আমের অনেক প্রকার জাত রয়েছে যেমন- হাড়িভাঙ্গা, হিমসাগর, কাটিমন, মিয়াজাকি, ফজলি, গোপালভোগ, ল্যাংড়া, গৌড়মতি, আশ্বিনা, বারি-৪, খিরসাপাত ইত্যাদি। ভারতীয় অঞ্চলে আমের উৎপত্তি নিয়ে নানা প্রকার প্রশ্ন থাকলেও আমের স্বাদ নিয়ে কেউ কখনই কোন প্রশ্ন তোলার সাহস করেনি। 

গ্রীষ্মকালে এই ফল সবথেকে বেশি পাওয়া যায়। আমের ভিতরে অনেক প্রকারের জাত রয়েছে। অনেক আমের জাত রয়েছে যা কাঁচা কিংবা পাকা যেকোনো অবস্থাতেই খাওয়া যায়। কাঁচা আম খেতে দারুণ মজা লাগে। কাঁচা আমে বিভিন্ন প্রকার মসলা মিশিয়ে খেতে অনেক মজা লাগে। কাঁচা কিংবা পাকা আমের জুস খেতেও অনেক মজা লাগে। 

আম গাছ সাধারণত ৩৫-৪০ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। আম গাছের আমের মুকুল বের হয় ডালের ডগা থেকে। আমের কচি পাতা দেখতে অনেক সুন্দর গাঢ় গোলাপির রংয়ের মত। গ্রামে অনেক মানুষ এই কচি পাতাকে ভর্তা বানিয়ে খেয়ে থাকে।

আমের উপকারিতা

আম সাধারণত গ্রীষ্মকালীন একটি ফল। মুখরোচক ফল হিসেবে আম কিন্তু অনেক জনপ্রিয় একটি ফল। স্বাদের দিক বিবেচনা করলে আম কাঁচা অবস্থায় টক এবং পাকা অবস্থায় প্রচুর মিষ্টি হয়ে থাকে। আম খেলে অনেক ধরণের উপকারিতা পাওয়া যায়। নিচে আমের উপকারিতা সম্পর্কে আলোচনা করা হল-

ক্যান্সার প্রতিরোধে আমের উপকারিতা

আমে রয়েছে নানা ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। তাছাড়াও আমে রয়েছে কোয়েরসেটিন, আইসোকোয়েরসেটিন,অ্যাস্ট্রাগ্যালিন, ফাইসেটিন, গ্যালিক এসিড ইত্যাদি। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলো মানুষের শরীরের প্রোস্টেট ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার ইত্যাদির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে। তাই ক্যান্সার নিরাময়ে আম গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আমের উপকারিতা

আমে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি, ফাইবার ও প্যাকটিন থাকে যা রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে।

ত্বকের যত্নে আম

মানুষের ত্বকের ভিতরে নানা প্রকার জীবাণু থাকে। আম, ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। বিশেষ করে শরীরের চামড়ায় যে ফুসকুড়ি বের হয় সেই ফুসকুড়ি দূর করে এবং ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

মেটাবলিজমে আমের উপকারিতা

মানুষের শরীরে ভিটামিনের প্রয়োজন রয়েছে। আমে যে পরিমান ভিটামিন আছে তাতে একজন মানুষের ভিটামিনের প্রয়োজন মিটাতে সাহায্য করে। আমে ফাইবার থাকে যা মানুষের শরীরের হজমে সহায়তা করে।

চোখের উপকার

আমে রয়েছে ভিটামিন ‘এ’ যা আমাদের রাতকানা রোগ থেকে মুক্তি দেয়। শরীরে ভিটামিন ‘এ’ এর চাহিদা পূরণে, আম বিশেষ ভাবে ভূমিকা পালন করে। প্রচুর পরিমানে আম খেলে চোখ ভালো থাকে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি

আমে নানা প্রকার ভিটামিন বিদ্যমান তার মধ্যে ভিটামিন ই, এ এবং ভিটামিন বি মানুষের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। আম খেলে ইনফেকশন জাতীয় সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

বেশি আম খেলে এর অপকারিতা

আম একটি লোভনীয় ও সুস্বাদু ফল। আম সকল মানুষই খেতে ভালবাসে। আম খেলে যেমন অনেক উপকারিতা রয়েছে কিন্তু এর পাশাপাশি অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে অনেক অপকারিতাও রয়েছে।

অ্যালার্জি বৃদ্ধি পেতে পারে

যাদের অ্যালার্জির সমস্যা রয়েছে তারা যদি মাত্রাতিরিক্ত মাত্রায় আম গ্রহণ করে তবে তাদের অ অ্যালার্জির পরিমান বেড়ে যাবে। আমে প্রোটিন ল্যাক্টোজের মতো উপাদান রয়েছে যা অ্যালার্জি বৃদ্ধির জন্য যথেষ্ট।

রক্তে শর্করার পরিমান বেড়ে যাওয়া

আম মিষ্টি ও সুস্বাদু ফল হওয়ায় এর ভেতর উচ্চ প্রাকৃতিক চিনি থাকার কারণে রক্তে শর্করার পরিমান বেড়ে যায়। চিকিৎসকের মতে, প্রাকৃতিক চিনিও, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য জীবনযাত্রার ব্যধির ক্ষেত্রে সাধারণ চিনির মতোই কাজ করে। আম খাওয়া ভালো তবে অতিরিক্ত আম খাওয়া শরীরের জন্য ঠিক না। এতে শরীরে শর্করার পরিমান বেড়ে যায়।

দ্রুত ওজন বৃদ্ধি

আমে প্রাকৃতিক শর্করার পরিমান বেশি থাকে যা মানুষের শরীরে ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। তাই শরীরের ওজন এর দিকে লক্ষ রাখতে হলে অবশ্যই আম পর্যাপ্ত পরিমানে খেতে হবে। বেশি আম খেলে শরীরের ওজন বেড়ে যাবে।

পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে

আমে গাজনযোগ্য কার্বোহাইড্রেট রয়েছে যা হজমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এবং ইরিটেবল বাওয়েল বাড়াতে পারে। যার ফলে পেটে নানা প্রকার সমস্যা দেখা দিতে পারে।

মহিলাদের প্রজননের সমস্যা

অতিরিক্ত আম খাওয়ার ফলে প্রজনন সম্পর্কিত হরমোনাল ব্যবস্থার পরিবর্তন, অনির্বাণ মাসিক চাপ এবং মাসিক সমস্যা ঘটতে পারে। এর সাথে সাথে আম বেশি খাওয়ার ফলে মহিলাদের প্রজনন সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে।

আম সম্পর্কে ১০ টি বাক্য

০১। তিনটি দেশ পাকিস্তান, ভারত ও ফিলিপাইন এর জাতীয় ফল হল আম।
০২। বাংলাদেশের ‘কানসাট আম বাজার’ এশিয়ার মধে ̈ সবচেয়ে বড় আমের বাজার।
০৩। ভারতে সকল প্রকার ফলের মধ্যে ̈ ‘আম’ জাতীয় ফলের স্বীকৃতি লাভ করেছে।
০৪। “ম্যাংগো” শব্দটির উৎপত্তি আসলে ভারতেই হয়েছিল যখন ব্রিটিশরা ১৫শ এবং ১৬শ শতাব্দীতে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে ব্যবসা শুরু করেছিল।
০৫। সংস্কৃত শব্দ ‘আম্র’ হতে বাংলা ভাষায় থাকা আম শব্দটি এসেছে।
০৬। সমগ্র বিশ্বে প্রতি বছর ৪৬ মিলিয়ন টন (প্রায়) আম উৎপাদন করা হয়।
০৭। সারা বিশ্বের মধ্যে ভারতে সবচেয়ে বেশি আম উৎপন্ন হয়ে থাকে।
০৮। পাঁচ হাজার বছর আগে ভারতে সর্বপ্রথম আম জন্মে।
০৯। যারা বৌদ্ধ ধর্ম অনুসারি তারা সকলেই আম গাছকে খুব পবিত্র গাছ মনে করেন।
১০। বাংলাদেশের সকল প্রকার আমের জগতে বর্তমানে রাজত্ব করছে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সেই সুস্বাদু বিখ্যাত আম।

মন্তব্য

আমের উপকারিতা, অপকারিতা এবং আম সম্পর্কে ১০ টি বাক্য - এই পোষ্টের বিষয়ে কোন মন্তব্য থাকলে নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। 

ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url