১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস হল মুজিবনগর সরকার গঠনের স্মরণে বাংলাদেশে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদযাপন। দীর্ঘ ২৩ বছরের লড়াই- সংগ্রামের ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতির শ্রেষ্ঠ অর্জন হল স্বাধীন দেশ। গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার হচ্ছে সেই আশা-আকাক্ষারই সরাসরি ফসল, মহত্তম রূপ যা ১৯৭১ সালের মুজিবনগরে শপথ গ্রহণ করেছিল। 
১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস
আজকে আমরা জানবো ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস সম্পর্কে।

ভূমিকা

১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস এর অনুষ্ঠান দেশের ইতিহাসে একটি অপরিসীম তাৎপর্য বহন করে থাকে, কারন এই দিবসটি পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সূচনা করে। মেহেরপুর জেলার মুজিবনগর গ্রাম থেকে ‘মুজিবনগর’ নামটি এসেছে। 

শেখ মুজিবর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার পর পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে চাপিয়ে রাখার জন্য নৃশংস দমন-পীড়ন অত্যাচার শুরু করে। সেই সময় গ্রেফতার এড়ানোর জন্য শেখ মুজিবুর রহমান, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ এবং অন্যান্যদের সহ বাংলাদেশের নেতারা আন্ডারগ্রাউন্ডে যেতে বাধ্য হয়েছিল। 

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল তারা সকলে মুজিবনগরে সমাবেশ করে এবং অস্থায়ী সরকার গঠন করে যেটি মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত।

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবসের তারিখ

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস হলো ১৭ এপ্রিল। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ সময়কালে এই দিনে অর্থাৎ ১৭ এপ্রিলে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলা গ্রামের আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী সরকার হিসেবে আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ গ্রহণ করেন। যার ফলে পরের দিকে ঐ বৈদ্যনাথ তলাকেই ঐতিহাসিক মুজিবনগর হিসেবে নাম ঘোষণা করা হয়। 

তবে এর কিছু দিন আগে অর্থাৎ ১০ এপ্রিল স্বাধীন সার্বভৌম ভাবে বাংলাদেশ সরকার গঠন করা হয়। যার ফলে ১৭ এপ্রিল বৈদ্যনাথতলায় অস্থায়ীভাবে সরকার শপথ গ্রহণ করেন। সেই সময় মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেব দ্বায়িত্ব পালন করেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক জনপ্রশাসনবিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম।

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা

১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস এ তৎকালীন কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমা শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে বাগোয়ান ইউনিয়নের বৈদ্যনাথতলায় ভবেরপাড়া গ্রামের আম্রকাননে গঠন করা হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের প্রথম সরকার। 

মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সরকারের দক্ষ ও পারদর্শী নেতৃত্বর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে সম্মানজনক বিজয়ের মধ্য দিয়ে জাতি অজর্ন করে স্বাধীনতা। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ভারতবর্ষ ভাগ হওয়ার পর পূর্ববাংলা হিসেবে বর্তমান বাংলাদেশ পাকিস্তানে অন্তভুর্ক্ত হলেও ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের নাম অনুসারে এর নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান’। 

এই ভাবেই সময় অতিবাহিত হয় দীর্ঘ ২৩ বছর। এই দীর্ঘ সময় এর ভিতর পাকিস্তানী শাসন-শোষণে অতিষ্ট হয়ে উঠে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ। যার ফলে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানী শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে এবং দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে অবিস্মরণীয় ভাবে মহান বিজয় লাভ করে। 

যার ফলে তৈরী হয় এক স্বতন্ত্র স্বাধীন ও সার্বভৌম নতুন এক রাষ্ট্রের। এই নতুন রাষ্ট্রটি গোটা বিশ্বে পরিচিত লাভ করে ‘বাংলাদেশ’ হিসেবে। স্বাধীন সার্বভৌম দেশ অর্জনের পিছনে রয়েছে ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের অবদান ছিল অনেক।

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের ভয়াবহ গনহত্যার পর আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান নেতা তাজউদ্দীন আহমদ বাংলাদেশ সরকার গঠনের পরিকল্পনা গ্রহন করেন। প্রথমে আত্নরক্ষা, তারপর প্রস্তুতি এবং সর্বশেষ পাল্টা আক্রমন এ নীতিকে সাংগাঠনিক ভাবে পরিচালনার জন্য তিনি সরকার গঠনের চিন্তা করেন। যার ফলে ১৯৭১ সালের ৩১শে মার্চ মেহেরপুর সীমান্ত পার হয়ে তিনি ভারতে চলে যান। 

দিল্লীতে পৌছানোর পরে সেই সময় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে বৈঠকের আগে ভারতের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে তাজউদ্দীন আহমদের বেশ কয়েক দফা বৈঠক করেন এবং তিনি বাঙ্গালীদের স্বাধীনতার জন্য যে সব সাহায্য ও সহযোগিতা দরকার তা তাদেরকে বুঝিয়ে বলেন। 

সেই সময় তিনি বুঝতে পারেন যে, আওয়ামী একজন নেতা হিসেবে তিনি যদি সাক্ষাৎ করেন তাহলে সামান্য কিছু সহানুভূতি ছাড়া তেমন কিছু সাহায্য আশা করা যায় না। সরকার গঠন ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ঐ সরকারের শক্ত সমর্থন ছাড়া বিশ্বের কোন দেশ বাংলাদেশের প্রতি সাহায্যের জন্য কেউ এগিয়ে আসবে না। 

ফলে তিনি আওয়ামী লীগে থাকা শীর্ষ নেতাদের সাথে বৈঠক করে ২৬শে মার্চ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা ঘোষণার সময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের সূচনা হিসেবে মূল্যায়ন করেন। ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল দিল্লীতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাথে সাক্ষাৎকালে তিনি বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীন বাংলাদেশের সরকারের রাষ্ট্রপতি এবং নিজেকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে উপস্থাপন করেন। 

বাংলাদেশের স্বীকৃতি দান এবং স্বাধীনতা অর্জনের ক্ষেত্রে সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাস দেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। এই ভাবেই বাংলাদেশ সরকারের ধারণার সূচনা ঘটে। 

১৭ এপ্রিল মুজিবনগর দিবস এ মেহেরপুরের বৈদ্যনাথ তলার আম্রকাননে বিপ্লবী ও প্রবাসী সরকারের শপথগ্রহন শুধু আনুষ্ঠানিক শপথ গ্রহণ ছিল না বরং এই শপথ ছিল যুদ্ধ পরিচালনা ও পাক হানাদার বাহিনীকে দেশ থেকে তাড়ানোর জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত পথে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের শপথ। 

এই শপথ ছিল সাড়ে সাত কোটি বাঙ্গালীদের এই বিশাল জনযুদ্ধকে প্রতিটি বাঙ্গালীর জীবনযুদ্ধ হিসেবে গ্রহন করা ও শপথ। যার রক্তক্ষয়ী পথ বেয়েই অর্জিত হয়েছে এই পবিত্র স্বাধীনতা।

১০ এপ্রিল কি দিবস

১০ এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসের এক গৌরবোজ্জল দিন। বাংলাদেশের প্রবাসী সরকার যা মুক্তিযুদ্ধের কিছুদিনের মধ্যেই ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল এ গঠিত হয়। মূলত এটি মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। এটি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার। আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়েছিল এই প্রথম সরকার গঠনের পর। 

এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকেও অনুমোদন দেয়া হয়। ১৭ই এপ্রিল মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা (বর্তমান উপজেলা মুজিবনগর) গ্রামের আমবাগানে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার হিসেবে শপথ গ্রহণ করে ছিলেন। তারপর শেখ মুজিবর রহমান এই সরকারের রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত হয়। 

মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ বৈদ্যনাথতলার নামকরণ করেন ‘মুজিবনগর’। সেই সময় থেকে কলকাতায় থাকা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার ‘মুজিবনগর’ সরকার নামে পরিচিত হন। এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। 

১০ই এপ্রিল সরকার গঠন হওয়ার পর ১১ই এপ্রিল স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাজউদ্দীন আহমদ একটি বেতার ভাষণ দেন। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জনে সফলতা লাভ করে। যার ফলে ১০ই এপ্রিল বাংলাদেশের ইতিহাসে স্বরণীয় একটি দিন।

মুজিবনগর দিবসের তাৎপর্য

১৭ই এপ্রিল হলো ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস। এই দিনে ১৯৭১ সালের তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণ করেন। যা বাংলাদেশের জন্য স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে দিনটি ছিল অবিস্মরনীয় থাকার মতো একটি দিন। 

২৫শে মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরহ বাঙালি জাতির ওপর আক্রমন চালানোর পর পর ১০ এপ্রিল আনুষ্ঠানিকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। যার ফলে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত করেন সৈয়দ নজরুল ইসলামকে এবং সরকার প্রধান করা হয় তাজউদ্দীন আহমদকে অস্থায়ী সরকার হিসেবে।

শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আব্দুল মান্নান এবং স্বাধীনতাপত্র পাঠ করেন অধ্যাপক ইউসুফ আলী। মুজিবনগরে ১২ জন আনসার সদস্য বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামকে গার্ড অব অনার প্রদান করেন। 

১৫টি মন্ত্রণালয়ে ভাগ করা হয় মুজিবনগর সরকারকে এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় যুদ্ধরত অঞ্চলকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করে প্রত্যেক অঞ্চলে একটি করে সেক্টর কমান্ডার নিযুক্ত করেন। মুজিবনগর সরকারের সঠিক নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মাসে বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে জয় লাভ করেন। 

পরবর্তীতে বাংলাদেশের প্রথম সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে ফেরত আসেন। স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের ভিত্তি রচিত হয়েছিল ঐতিহাসিক মুজিবনগরেই। বঙ্গবন্ধু ঘোষিত স্বাধীনতাকে বাস্তবে রূপ দিতে তৎকালীন আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবন্দরা মুজিবনগরে এক সাথে মিলিত হয়েছিল। 

এই দিনে নতুন গঠিত বাংলাদেশ সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছি দেশ বিদেশের অনেক বিখ্যাত সাংবাদিক। এই সরকারের সকল কৃতিত্বের সূচনা হয়েছিল মুজিবনগরে শপথ গ্রহণের পর থেকে। এই সরকারের অধীনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রশাসন, প্রচারনা, কূটনীতি এবং যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছিল। 

স্বাধীনতার যুদ্ধের সময়কালে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছিল ভারত। তাছাড়াও সোভিয়েত ইউনিয়নসহ আরও অনেক রাষ্ট্র বিভিন্নভাবে সাহায্য-সহযোগিতা করেছিল।

দেশরত্ন শেখ হাসিনার নির্দেশে ‘মুজিবনগর দিবস’ এর যথাযথ মর্যাদা ও মূল্যায়ন করে আসছে। এই মুজিবনগর দিবসটির পথ হিসেবে বাঙালিদের সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠ করেন। বাংলাদেশ ও বাঙালিদের জন্য মুজিবনগর দিবসটির তাৎপর্য ও গভীরতা অপরিসীম। যা জাতি অত্যন্ত গর্বের সাথে স্বরণ করবে চিরকাল।

মুজিবনগর সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য কতজন

বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার মুজিবনগর সরকার বা প্রবাসী বাংলাদেশ সরকার নামে পরিচিত। মুজিবগর সরকারের মন্ত্রিসভা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম মন্ত্রীসভা। ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল এ সরকার গঠন করা হয়। ১৭ই এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা বৈদ্যনাথতলায় বর্তমান মুজিবনগর শপথ গ্রহণ করেন। 

সরকার প্রতিষ্ঠার সাথে সাথে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রবল রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের বিজয় নিশ্চিত হয়। ১২ জানুয়ারি ১৯৭২ সাল পর্যন্ত মন্ত্রিসভা কার্যকর ছিল।

মন্ত্রিসভার ১১ জন সদস্য ছিলেন। নিম্নে তাদের নামগুলো দেওয়া হল-
১। প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ।
২। রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান।
৩। উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।
৪। বাণিজ্য, শিল্প ও যোগাযোগমন্ত্রী এম মনসুর আলী।
৫। পররাষ্ট্র এবং আইন ও সংসদ মন্ত্রী খন্দকার মুশতাক আহমদ।
৬। স্বারাষ্ট্র এবং সাহায্য ও পুনর্বাসন মন্ত্রী আবুল হাসনাত মোহাম্মদ কামারুজ্জামান।
৭। যোগাযোগমন্ত্রী শেখ আবদুল আজিজ।
৮। খাদ্য ও কৃষি এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রি ফণী মজুমদার।
৯। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ।
১০। স্বাস্থ্য এবং শ্রম, সমাজ কল্যাণ ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রী জহুর আহমদ চৌধুরী।
১১। শিক্ষা ও সাস্কৃতিক মন্ত্রী এম ইউসুফ আলী।

মুজিবনগর সরকারের শপথ বাক্য পাঠ করান কে

দিনাজপুর থেকে নির্বাচিত ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির সদস্য ইউসুফ আলি প্রথমে মাইকটা নেন এবং তিনিই স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন যা বাংলাদেশের সংবিধান হিসাবে গ্রহণ করা হয়। এই ঘোষণাপত্রেই সর্বপ্রথম মুজিবনগর নামটি উচ্চারিত হয়। 

সেই সময় শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি ও সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপ-রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয়। অন্যান্য সদস্যদের শপথ বাক্য পাঠ করান অধ্যাপক ইউসুফ আলি। শপথ গ্রহণ করে সকলেই কলকাতাই ফেরত এসেছিলেন। 

কলকাতার আট নম্বর থিয়েটার রোডের বাড়িতে অস্থায়ী সরকার কাজ শুরু করেন। স্বাধীনতার অর্জনের পর ১৮ই ডিসেম্বর সরকারের সদস্যরা ফিরে গিয়েছিলেন তাদের সদ্য স্বাধীন দেশে।

মুজিবনগর সরকারের চারটি অবদান

মুজিবনগর সরকারের কারনে আজকে দেশ স্বাধীনতা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পিছনে মুজিবনগর সরকারের অবদান রয়েছে অনেক। নিম্নে চারটি অবদান দেওয়া হল-

১। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় গঠন করেছিল মুজিবনগর সরকার শাসনব্যবস্থার সময়।
২। সেই সময়ে মুজিবনগর সরকার বাংলাদেশকে ১১টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত করেছিল।
৩। মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য মুক্তিবাহিনী গঠন করেছিল মুজিবনগর সরকার।
৪। মুজিবনগর সরকার গঠনের পর থেকে অসংখ্যা মানুষ দেশকে মুক্তি লাভের জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে।

মুজিবনগর সরকার কোথায় শপথ গ্রহণ করেছিল

১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল গঠন করা হয় বাংলাদেশের প্রথম সরকার যা মুজিবনগর সরকার নামে পরিচিত। ১০ই এপ্রিল ১৯৭১ সালের মেহেরপুর জেলার বৈদ্যনাথতলা (বর্তমান উপজেলা মুজিবনগর) গ্রামের আম বাগানে এই মুজিবনগর সরকার প্রথম শপথ গ্রহন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 

পশ্চিম পাকিস্তানের কারাগারে বন্দি থাকার কারনে উপরাষ্ট্রপতি হিসেবে সৈয়দ নজরুল ইসলাম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তাজউদ্দীন আহমেদ।

উপসংহার

পরিশেষে আমরা বলতে পারি যে ১৭ এপ্রিল ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস এর গুরুত্ব অপরিসীম। মুজিবনগর দিবস সম্পর্কে কোন কমেন্ট করতে নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন।

ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url