পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান

"পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান" পোষ্টে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালিঞ্জিং নির্মাণ প্রকল্প পদ্ম সেতু প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান
চলুন যেনে নেওয়া যাক পদ্ম সেতু সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।

ভূমিকা

বাংলাদেশ একটি নদী মাতৃক দেশ। অবকাঠামোগত উন্নয়ন হলো অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করে উন্নয়নের গতি, লক্ষ্যে পৌছাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। আরামদায়ক নৌপথ মানুষের জীবনমান উন্নত করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা পালন করে। 

এরই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য পদ্ম সেতু নির্মাণ অবকাঠামোগত উন্নয়নের অন্যতম মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে। পদ্ম সেতু এখন আমাদের শুধু স্বপ্ন নয়, সত্যি। পদ্ম সেতু আমাদের জীবনের বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসবে। পুরোবিশ্বে আমাদের মর্যাদা দিন দিন বেড়ে যাবে। 

এর সাথে সাথে দেশের কৃষির বহুমুখীকরণ ও শিল্পায়নে গতির সঞ্চার লাভ করবে। বর্তমানে পদ্ম সেতু নির্মাণের কাজ বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং কাজ প্রকল্প হিসেবে বিবেচিত।

পদ্ম সেতু কি

পদ্ম সেতু বাংলাদেশবাসীর জন্য একটি গর্বের বিষয়। পদ্ম সেতু একটি বহুমুখী সড়ক ও রেল সেতু। এই সেতুর মাধ্যমে লৌহজং, মুন্সিগঞ্জের সাথে শরিয়তপূর ও মাদারীপূর এক সাথে মিলিত হবে। যার ফলে দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সাথে উত্তর-পূর্ব অংশের মিলন হবে। 

পদ্ম সেতুতে রয়েছে দুই স্তর বিশিষ্ট ষ্টিল ও কংক্রিট নির্মিত ট্রাস ব্রিজটির ওপরের স্তরে রয়েছে চার লেনের সড়ক পথ এবং নিচের স্তরটিতে রয়েছে একটি একক রেলপথ। পদ্ম-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা নদীর ওপরে ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যরে ৪১টি স্পান রয়েছে এবং সেতুটি ৬.১৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ১৮.১০ মিটার প্রস্থ পরিকল্পনায় নির্মিত দেশের একটি বড় সেতু।

পদ্ম সেতু সম্পর্কে ১০টি বাক্য

  1. বাংলাদেশের সবচেয়ে দীর্ঘতম সেতুর নাম হলো পদ্ম বহুমুখী সেতু।
  2. পদ্ম বহুমুখী সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫০ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার।
  3. পদ্ম সেতুতে মোট ৪২টি পিলার এবং ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের মোট ৪১টি স্প্যান ব্যবহার করা হয়েছে।
  4. পদ্ম সেতুতে ২টি স্তর রয়েছে যার উপরের আছে ৪ লেনের সড়ক পথ ও নিম্নের অংশে রয়েছে রেলপথ।
  5. মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্ম বহুমুখী সেতু উদ্ধোধন করেন ২৫ শে জুন ২০২০ খ্রিস্টাব্দে।
  6. পুরো বিশ্বে মধ্যে ১২২ তম দীর্ঘ সেতু হলো বাংলাদেশের পদ্ম সেতু।
  7. ৭ই ডিসেম্বর ২০১৪ সালে প্রথম স্বপ্নের পদ্ম সেতু পরিকল্পনার নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং ১৬ই ডিসেম্বর ২০২২ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়।
  8. মুন্সিগঞ্জ জেলার মাওয়া এবং শরীয়তপুর জেলার জাজিরাকে পরস্পর একসাথে যুক্ত করেছে।
  9. পদ্ম সেতু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান হলো চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি।
  10. যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি ও অর্থনৈতিক দিক বৃদ্ধি জন্য অত্যন্ত ভূমিকা পালন করছে পদ্ম সেতু।

পদ্ম সেতু উদ্বোধনের তারিখ

প্রায় দুই যুগ আগে বাংলাদেশের যে সেতুর পরিকল্পনা শুরু হয়েছিল, সেই পদ্ম সেতুর উদ্ধোধনের মধ্যে দিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ রাজধানী ঢাকা সহ বাকি অংশের সঙ্গে সড়ক পথগুলি যুক্ত হয়। পদ্ম সেতুটি ২০২২ সালের ২৫ জুন তারিখ উদ্ধোধন করা হয়। 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে মাওয়া প্রান্ত গিয়ে নিজেই টোল প্রদান করে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্ম সেতু আরোহন করেন যার মধ্যে দিয়ে পদ্ম সেতুটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয়। বেলা ১২টার দিকে মাওয়া প্রান্তে একটি উদ্ধোধনী ফলক উম্মোচন করেন।

পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত

পদ্ম সেতু আমাদের স্বপ্নের সেতু। পদ্ম সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১৮.১০ মিটার। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে এ সেতুর নির্মাণ কাজ ২০২১ সালে শেষ হয়ে যায়। পদ্ম সেতুটি মুন্সিগঞ্জের সাথে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর জেলার সংযুক্ত হয়।

পদ্ম সেতুর টোল ও আয়

সেতু মন্ত্রণালয় টোলের হার প্রস্তাব করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ২৮ এপ্রিল ২০২২ সালে প্রস্তাব পাঠায়। পরে ১৭মে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পরিবহনের জন্য আলাদা আলাদা ভাবে টোলের হার নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। যমুন ব্যাংক পদ্ম সেতুর টোল আদায়ে জন্য সহায়তা করছে। 

পদ্ম সেতু নির্মাণে আনুমানিক খরচ হয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। ধরা হয়েছে যে ২০২২ সালে এই সেতু দিয়ে বাংলাদেশের প্রায় ২৩ জেলায় প্রতিদিন ২১ হাজার ৩০০ টি যানবাহন চলাচল করবে যা ২০২৫ সাল পর্যন্ত বেড়ে দাঁড়াবে ৪১ হাজার ৬০০। 

সব যানবাহন থেকে টোল বাবদ যা টাকা আয় হবে তা দিয়ে সেতুর ব্যয় তুলতে সাড়ে ৯ বছর সময় লাগতে পারে। বিশ্বব্যাংক জানায়, আগামী ৩১ বছরে মধ্যে যোগাযোগ খাতে পদ্ম সেতু মাধ্যমে আয় হবে ১৮.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা নির্মাণ খরচের ৫.৫ গুন। 

তাছাড়াও সামাজিক অগ্রগতি ও অর্থনীতিতে প্রায় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যোগ হবে। পদ্ম সেতু তৈরীর ফলে দুই পারে নদী শাসনের মাধ্যমে যে জমি রক্ষা হয়েছে তা প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। সেতুটি তৈরীর মাধ্যমে বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ইন্টারনেট লাইন গিয়ে সাশ্রয় করবে ২৪০০ কোটি টাকা। 

ফেরি চলাচল না হওয়ার কারনে সাশ্রয় হবে প্রায় ৩৬০০ কোটি টাকা। চুক্তি মোতাবেক সেতু কর্তৃপক্ষকে আগামী ৩৫ বছরে ৩৬ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করতে হবে। সেতু কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছেন যে টোল থেকে আদায়কৃত টাকা অধিকাংশ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করা হবে এবং বাকি যা থাকবে সেই অর্থ দিয়ে সেতুর রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।

পদ্ম সেতুর অর্থনৈতিক গুরত্ব

অবকাঠামোগত উন্নয়নই হলো অর্থনৈতিক উন্নয়নের গুরুত্বপূর্ন উপাদান। পদ্ম সেতু মির্নাণে আমাদের অবকাঠামোগত উন্নয়নের অন্যতম মাইলফলক হিসেবে কাজ করে। এই পদ্ম সেতু আমাদের সকলের চিন্তার জগতকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যাবে। এমনকি আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলেও আমাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করবে। কৃষি ও শিল্পায়নে গতি উন্নত করবে। 

প্রধান মন্ত্রীর মাধ্যমে ২০০১ সালের ৪ই জুলাই পদ্ম সেতু নির্মাণে ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। তারপর নানা পটপরিবর্তনের জন্য স্থগিত রাখা হয় পদ্ম সেতু বহুমাখী সেতু প্রকল্পের কাজ। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা আসার পর সেতু তৈরীর কাজ পূর্ণরায় শুরু করা হয়। এই সময় বিশ্ব ব্যাংক সেতু নির্মানের ঘোষণা দেন। 

সেতু নির্মাণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটি উপকরণ হলো স্টিল ও সিমেন্ট। আমাদের দেশেই খুবই ভালো মানের স্টিল ও সিমেন্ট তৈরী হচ্ছে। তাই পদ্ম সেতু নির্মাণে দেশের সবচেয়ে উচ্চ মানের উপকরণ ব্যবহার মনোবলকে আরো জাগিয়ে তুলেছে। পদ্মসেতু নির্মাণের ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলায় প্রায় ৩ কোটি মানুষের উপকার হবে। 

পদ্ম সেতুকে কেন্দ্র করে তৈরী নানা প্রকার শিল্প, পর্যটন কেন্দ্রই দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে গতি সঞ্চার করবে। গ্রাম ও শহরের মাঝে সেতুবন্ধন তৈরী হবে এই স্বপ্নের পদ্ম সেতুর মাধ্যমে।

পদ্মা সেতু খরচ কত

৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা খরচ হয় পদ্ম সেতু নিমার্ণে। এই খরচ এর মধ্যে অন্তভূর্ক্ত রয়েছে সেতুর অবকাঠামো তৈরী, নদী শাসন, ভূমি অধিগ্রহণ, পুনর্বাসন ও পরিবেশ, সংযোগ সড়ক, বেতন –ভাতা ইত্যাদি। 

আমাদের বাংলাদেশের অর্থ বিভাগের সঙ্গে সেতু বিভাগের চুক্তি অনুযায়ী পদ্ম সেতু তৈরীতে ২৯ হাজার ৮৯৩ কোটি ঋণ দেয় সরকার। যা ৩৫ বছরের মধ্যে ১ শতাংশ সুদ হারে সেটি পরিশোধ করবে সেতু কর্তৃপক্ষ।

উপসংহার

"পদ্মা সেতু সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান" পোস্ট সম্পর্কিত কোন মন্তব্যের জন্য নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন। 

ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url