রাসেল ভাইপার সাপ কি, রাসেল ভাইপার কামড়ালে করনীয় কি
অনেকগুলো প্রাণঘাতী বিষধর সাপের মধ্যে অন্যতম সাপ হল রাসল ভাইপার সাপ। রাসেল ভাইপার সাপের কামড় অত্যন্ত বিপজ্জনক। তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা এবং প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে এর ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। "রাসেল ভাইপার সাপ কি, রাসেল ভাইপার কামড়ালে করনীয় কি" পোস্টে মূলত এই রাসেল ভাইপার সাপ সম্পর্কেই বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ভূমিকা
রাসেল ভাইপার সাপ একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ন প্রজাতি, যা দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষত ভারতীয় উপমহাদেশে ব্যাপকভাবে পাওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশে এই সাপের উপস্থিতি আগের থেকে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই সাপটি তার শক্তিশালী বিষ এবং আক্রমণাত্মক স্বভাবের জন্য পরিচিত, যা মানুষের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে।
রাসেল ভাইপার সাপ সাধারণত শুষ্ক ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে, খোলা মাঠ, ঝোপঝাড়, এবং কৃষি জমিতে বসবাস করে। বাংলাদেশে, বিশেষত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের জেলাগুলোতে এই সাপের উপস্থিতি বেশ লক্ষণীয়। এদের উপস্থিতি কৃষি জমি এবং গ্রামীণ এলাকায় বেশি দেখা যায়, যা স্থানীয় জনগণের জন্য একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।
রাসেল ভাইপার সাপের বিষ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং হিমোটক্সিক হওয়ায় এটি রক্তের কোষ এবং টিস্যুকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কামড়ানোর পর তীব্র ব্যথা, ফুলে যাওয়া, রক্তক্ষরণ, এবং রক্তের ঘনত্বের সমস্যা হতে পারে। সঠিক সময়ে চিকিৎসা না নিলে, এর বিষ প্রাণঘাতী হতে পারে। তাই রাসেল ভাইপার সাপের কামড় থেকে বাঁচতে এবং দ্রুত চিকিৎসা নিতে সচেতনতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।
রাসেল ভাইপার সাপের উপস্থিতি এবং এর বিষের প্রকৃতি সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান থাকা, স্থানীয় জনগণকে সতর্ক করা এবং জরুরি পরিস্থিতিতে করণীয় পদক্ষেপ সম্পর্কে অবহিত করা জনস্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
রাসেল ভাইপার সাপ (Russell's viper)
রাসেল ভাইপার (Russell's viper) একটি বিষাক্ত সাপ, যা ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। এটি অনেকগুলো প্রাণঘাতী বিষধর সাপের মধ্যে অন্যতম এবং মানুষের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
রাসেল ভাইপার সাপের বৈজ্ঞানিক নাম
রাসেল ভাইপার সাপের বৈজ্ঞানিক নাম Daboia russelii
রাসেল ভাইপার সাপের বৈশিষ্ট্য
রাসেল ভাইপার সাপের চেহারা
- রাসেল ভাইপার সাপ মাঝারি আকারের হয় এবং দৈর্ঘ্যে প্রায় ১-১.৫ মিটার পর্যন্ত হতে পারে।
- এর শরীর মোটা এবং শক্তিশালী।
- ধূসর বা বাদামী রঙের হয়।
- শরীরের ওপর বড় বড় গাঢ় গোলাকার বা ডিম্বাকৃতি দাগ থাকে।
রাসেল ভাইপার সাপের বসবাস
- রাসেল ভাইপার সাধারণত শুষ্ক ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ায় বসবাস করে।
- এদের মাঠ, বন, গ্রাম্য এলাকা এবং কৃষি জমিতে বেশি দেখা যায়।
রাসেল ভাইপার সাপ এর আচরণ
- এই সাপটি রাতের বেলায় বেশি সক্রিয় থাকে, তবে দিনের বেলাতেও দেখা যেতে পারে।
- সাধারণত আক্রমণাত্মক এবং তাড়াতাড়ি রেগে যায়।
- সাপটি ধূসর বা বাদামী রঙ এর হওয়ায় মাটির সাথে খুব সহজেই মিশে যায়। মানুষ সাপের নিকটে গেলে সাপটি বিপদ মনে করে আক্রমণ করে বসে।
- রাসেল ভাইপার সাধারণত নদীর স্রোত বা বন্যার পানিতে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হয়।
রাসেল ভাইপার সাপের বিষ
- রাসেল ভাইপারের বিষ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং হিমোটক্সিক (hemotoxic)।
- এই সাপের বিষ রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা প্রদান করে।
- বিষক্রিয়া দ্রুত ঘটে এবং এর ফলে ব্যথা, রক্তক্ষরণ এবং মাংসপেশীর ক্ষতি হয়।
রাসেল ভাইপার সাপ কোথায় থাকে?
শুষ্ক ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ
রাসেল ভাইপার সাধারণত শুষ্ক ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। এরা খোলা মাঠ, ঝোপঝাড়, এবং ঘাসযুক্ত এলাকায় বেশি দেখা যায়।
কৃষি জমি ও গ্রামীণ এলাকা
রাসেল ভাইপার সাপ কৃষি জমি এবং গ্রামীণ এলাকায় বাস করে। ধানের খেত, সরিষার খেত, এবং অন্যান্য ফসলের জমিতে এদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
মানুষের বসতিস্থল সংলগ্ন এলাকা
অনেক সময় মানুষের বসতিস্থলের কাছেও এদের দেখা যায়, বিশেষ করে যেখানে ঝোপঝাড় বা বর্জ্য জমা থাকে।
রাসেল ভাইপার সাপের ইতিহাস
রাসেল ভাইপার সাপের ইতিহাস এবং নামকরণ নিয়ে অনেক তথ্য রয়েছে যা এই সাপটিকে আরও অনেক জনপ্রিয় করে তুলেছে। রাসেল ভাইপার সাপ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে, যেমন ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেপাল, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, মায়ানমার, এবং ইন্দোনেশিয়ায় পাওয়া যায়। এই সাপটি ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যতম সাধারণ বিষাক্ত সাপগুলোর মধ্যে একটি।
রাসেল ভাইপার সাপের বৈজ্ঞানিক নাম Daboia russelii. "Daboia" শব্দটি হিন্দি থেকে এসেছে, যার অর্থ "দুর্ভাগ্য" বা "বিপদ"। এই সাপটির ইংরেজি নাম "Russell's viper" রাখা হয়েছে স্কটিশ প্রাণিবিজ্ঞানী প্যাট্রিক রাসেল (Patrick Russell)-এর নামে, যিনি ভারতের সাপ নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেছিলেন এবং এই সাপটি প্রথম বর্ণনা করেছিলেন।
প্যাট্রিক রাসেল ১৮ শতকে ভারতীয় উপমহাদেশে কাজ করার সময় এই সাপটি নিয়ে গবেষণা করেন এবং ১৭৯৬ সালে তার গবেষণাপত্রে এই সাপটি সম্পর্কে বর্ণনা করেন।
রাসেল ভাইপার সাপের বংশবিস্তার
রাসেল ভাইপার সাপের বংশবিস্তার প্রক্রিয়া এবং এর প্রজনন বৈশিষ্ট্যগুলি সম্পর্কে নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
প্রজনন প্রক্রিয়া
প্রজনন ঋতু
রাসেল ভাইপার সাধারণত প্রজনন ঋতুতে, যা সাধারণত শীতকালীন মাসগুলোতে (নভেম্বর থেকে জানুয়ারি) ঘটে।
সংযোগ এবং মিলন
প্রজনন ঋতুর সময়, পুরুষ সাপগুলি মেয়েদের প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং মিলনের মাধ্যমে সঙ্গম ঘটে। পুরুষ সাপগুলি মেয়েদের জন্য প্রতিযোগিতা করতে পারে এবং প্রায়ই একে অপরের সাথে লড়াই করে।
ডিম পাড়া এবং বাচ্চা
ভাইপার সাপের ডিম পাড়া
রাসেল ভাইপার ওভোভিভিপ্যারাস প্রজাতির, অর্থাৎ, এরা ডিম পাড়ে না বরং ডিম তাদের শরীরের ভিতরেই ফেটে যায় এবং বাচ্চা সরাসরি মায়ের দেহ থেকে বের হয়।
গর্ভধারণ এবং জন্ম
- রাসেল ভাইপার সাপের গর্ভধারণের সময়কাল সাধারণত ৬-৭ মাস হয়।
- একটি মেয়ে রাসেল ভাইপার একবারে প্রায় ২০-৪০টি বাচ্চা প্রসব করতে পারে। কিছু ক্ষেত্রে, এ সংখ্যা ৬০-৭০ পর্যন্ত হতে পারে।
- জন্মের সময় বাচ্চা সাপগুলি সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র হয় এবং তাদের জন্মের পর থেকেই নিজেদের যত্ন নিতে পারে।
বাচ্চা সাপের যত্ন
স্বতন্ত্র বাচ্চা
- বাচ্চা রাসেল ভাইপার সাপেরা জন্মের পর থেকেই স্বতন্ত্র হয় এবং শিকার করতে সক্ষম হয়।
- বাচ্চারা সাধারণত ছোট আকারের শিকার, যেমন পোকামাকড় এবং ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী শিকার করে খেতে শুরু করে।
পরিবেশগত প্রভাব
আবহাওয়ার প্রভাব
- আবহাওয়া এবং পরিবেশ রাসেল ভাইপার সাপের বংশবিস্তারের উপর প্রভাব ফেলে। শীতকাল এবং নির্দিষ্ট তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার মাত্রা প্রজনন প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
- আবাসস্থলের পরিবর্তন এবং খাদ্যের প্রাপ্যতা সাপের বংশবিস্তার প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে।
রাসেল ভাইপার সাপের বংশবিস্তার প্রক্রিয়া এবং তাদের বাচ্চা জন্মদান প্রক্রিয়া তাদের টিকে থাকার এবং প্রজাতি বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই সাপের প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে রাখা এবং সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে তাদের সংখ্যা সুষ্ঠুভাবে বৃদ্ধি পায় এবং প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে।
রাসেল ভাইপার সাপের ছবি
রাসেল ভাইপার সাপ বাংলাদেশ
বাংলাদেশে রাসেলস ভাইপার সাপকে চন্দ্রবোড়া বা উলুবোড়া বলে অনেকের কাছে পরিচিত। বাংলাদেশে এই সাপ অনেক আগেই প্রায় বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল বলে অনেকের ধারণা ছিল। তবে বিগত ১০ থেকে ১২ বছর আগে থেকে অর্থাৎ ২০১২-২০১৪ সাল থেকে কিছু কিছু মৃত্যুর ঘটনায়, এই সাপের উপস্থিতির প্রমান পাওয়া গিয়েছে। এই নিয়ে বাংলাদেশে গবেষণাও শুরু হয়ে গেছে।
রাসেল ভাইপার সাপ নিয়ে গবেষণা করছেন অধ্যাপক ফরিদ আহসান। তিনি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জোয়োলজি ডিপার্ট্মেন্ট এর অধ্যাপক। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল এর মধ্যে ২০ টি রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ের ঘটনা বিশ্লেষন করা হয়। জার্নাল অব দি এশিয়াটিক সোসাইাটি, বাংলাদেশে এই গবেষনাটি প্রকাশিত হয় ২০১৮ সালে।
গবেষণাতে বাংলাদেশের ১৭টি জালাতে রাসেল ভাইপার সাপের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। গবেষণা অনুযায়ী উত্তর অঞ্চল এবং উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের জেলাগুলোতে রাসেল ভাইপার এর উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে। গবেষণা অনুযায়ী রাজশাহী এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলাতে রাসল ভাইপার সাপের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি।
এছাড়াও অন্যান্য জেলাগুলোতেও এই সাপের উপস্থিতির সম্ভাবনা আছে বলে গবেষকদের ধারণা।অধ্যাপক ফরিদ আহসান এর মতে বাংলাদেশে রাসেল ভাইপার একেবারেই বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিলনা। অল্প কিছু সংখ্যক এই সাপ সবসময় ছিল। তবে বংশবিস্তারের মত উপযোগী পরিবেশ এবং খাবার না থাকার কারনে এই সাপের উপস্থিতি বোঝা যায়নি।
২০২৩-২০২৪ বছরগুলোতে এই সাপের উপস্থিতি বেশি পরিলক্ষিত করা যাচ্ছে। কারণ হিসাবে অধ্যাপক ফরিদ আহসান এর মন্তব্য হল, বছরে একই জমিতে একের অধিক ফসল এর চাষ। তাঁর গবেষনা মতে আগে জমিতে একবার বা দুইবার ফসল ফলানো হত এবং বাকি সময় জমি পরিত্যাক্ত পরে থাকত।
কিন্তু বর্তমানে জমিতে দুই থেকে তিনবার ফসল ফলানো হচ্ছে। ফলে এইসব জমিতে ইদুরের সংখ্যাও বাড়ছে। আর ইদুর হলে এই সাপের প্রধান খাদ্য। তাই এই কৃ্ষি জমিতেই এই সাপের বংশবিস্তার বেশি হচ্ছে। ফলে কৃ্ষকরা এই সাপের শিকার বেশি হচ্ছেন। আবার গবেষনা মতে বংলাদেশে ঘন ঝোপ এবং বন জংগলও কমে যাচ্ছে। ফলে এই সাপ এখন এই কৃ্ষি জমিতেই বেশি অবস্থান করছে।
ফরিদ আহসান এর গবেষনা মতে আরেকটি প্রধান কারণ হল বর্ষাকালে নদীর পানি বৃ্দ্ধি পাচ্ছে। ফলে ভারত এর নদ নদী থেকও এই সাপ বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। পদ্মা অববাহিকায় এই রাসেল ভাইপার সাপের উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে। সাধারণত এই সাপ কচুরিপানার উপর ভেসে ভেসে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে বলে ফরিদ আহসান এর গবেষনার ধারণা।
রাসেল ভাইপার কামড়ালে কি হয়?
রাসেল ভাইপার সাপের কামড় অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং এর বিষ শরীরে প্রবেশ করলে মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। রাসেল ভাইপার কামড়ানোর পর কী কী লক্ষণ দেখা দিতে পারে তা নিচে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হলো:
প্রাথমিক লক্ষণ
- তীব্র ব্যথা- কামড়ানোর স্থানে সঙ্গে সঙ্গে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়।
- ফুলে যাওয়া- কামড়ানোর স্থান দ্রুত ফুলে যায়।
- লালচে বা বেগুনি রঙ- কামড়ানোর স্থান লালচে বা বেগুনি রঙ ধারণ করতে পারে।
গুরুতর লক্ষণ
- রক্তক্ষরণ- কামড়ানোর স্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে, এমনকি শরীরের অন্যান্য অংশ থেকেও রক্তক্ষরণ হতে পারে (নাক, মুখ, মলদ্বার ইত্যাদি)।
- রক্তচাপ কমে যাওয়া- রক্তচাপ দ্রুত কমে যেতে পারে, যা শকের কারণ হতে পারে।
- শ্বাসকষ্ট- শ্বাসকষ্ট বা শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে।
- বমি বমি ভাব এবং বমি- বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে।
- রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা- বিষের কারণে রক্ত জমাট বাঁধতে সমস্যা হতে পারে, ফলে শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্তক্ষরণ শুরু হতে পারে।
দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব
- কিডনি বিকল- রাসেল ভাইপারের বিষ কিডনির ক্ষতি করতে পারে, ফলে কিডনি বিকল হতে পারে।
- টিস্যু নেক্রোসিস- কামড়ানোর স্থান এবং আশেপাশের টিস্যু নষ্ট হয়ে যেতে পারে (নেক্রোসিস)।
- সংক্রমণ- কামড়ানোর স্থানে সংক্রমণ হতে পারে।
রাসেল ভাইপার কামড়ালে করনীয়
রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ানোর পর দ্রুত এবং সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এর বিষ অত্যন্ত বিপজ্জনক হতে পারে। নিচে রাসেল ভাইপার কামড়ানোর পর করণীয় বিষয়গুলো বর্ণনা করা হলো:
শান্ত থাকা
আতঙ্কিত হওয়া যাবে না, শান্ত থাকতে হবে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে আশ্বস্ত করতে হবে। আতঙ্কিত হলে হৃদস্পন্দন ও রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়, ফলে বিষ দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে।
আক্রান্ত স্থান স্থির রাখা
কামড়ানো অঙ্গটি (হাত বা পা) যতটা সম্ভব স্থির এবং নিচু অবস্থানে রাখতে হবে, যাতে বিষ ধীরগতিতে ছড়ায়।
আক্রান্ত স্থানের যত্ন
- কামড়ানোর স্থানটি ধীরে ধীরে সাবান ও পানি দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।
- আক্রান্ত স্থানে কোনো ধরনের ব্যান্ডেজ, টুর্নিকেট, বরফ, বা সেঁক দেওয়া যাবে না।
- কামড়ানোর স্থানটি চুষে বিষ বের করার চেষ্টা করা উচিত নয়, এটি সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া
- যত দ্রুত সম্ভব নিকটস্থ হাসপাতালে বা চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছাতে হবে।
- চিকিৎসকদের জানাতে হবে যে সাপটি রাসেল ভাইপার ছিল।
হাসপাতালে পৌঁছানোর পর করণীয়
- চিকিৎসকরা রাসেল ভাইপারের বিষের জন্য নির্দিষ্ট অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করবেন।
- অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের পূর্বে এবং পরে চিকিৎসকরা বিভিন্ন পরীক্ষা করতে পারেন যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় বিষ কী পরিমাণে ছড়িয়েছে।
- আক্রান্ত ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণে রাখা হবে এবং রক্তচাপ, হৃদস্পন্দন, এবং অন্যান্য শারীরিক লক্ষণ মনিটর করা হবে।
- প্রয়োজনে, অন্যান্য চিকিৎসা যেমন ব্যথানাশক, অ্যান্টিবায়োটিক এবং তরল ব্যবস্থাপনা করা হবে।
যাত্রাপথে
- আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদের শুইয়ে রাখতে হবে এবং যতটা সম্ভব স্থির রাখতে হবে।
- আক্রান্ত ব্যক্তিকে প্রচুর পানি পান করতে উৎসাহিত করা যেতে পারে, তবে যদি তারা বমি বমি ভাব অনুভব করে, তাহলে তা বন্ধ রাখতে হবে।
রাসেল ভাইপার কামড়ানোর পর যা করা উচিত নয়
টুর্নিকেট বা ব্যান্ডেজ ব্যবহার করবেন না
এটি রক্ত সঞ্চালন বন্ধ করে দেয় এবং টিস্যুর ক্ষতি হতে পারে। যেহেতু রাসেল ভাইপার রক্ত পাতলা করে দেয় তাই জোরে বাধুনি দেওয়া যাবেনা। একটা গামছা বা ব্যান্ডেজ দিয়ে হালকা বাধুনি দেওয়া যেতে পারে।
চুষে বিষ বের করার চেষ্টা করবেন না
এটি কার্যকর নয় এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
অ্যালকোহল বা কফি পান করাবেন না
এগুলি শরীরের রক্তপ্রবাহ বাড়িয়ে দেয়, যা বিষের দ্রুত বিস্তার ঘটাতে পারে।
বিচলিত হবেন না
আতঙ্কিত হলে হৃদস্পন্দন বেড়ে যায় এবং বিষ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
রাসেল ভাইপার কামড় প্রতিরোধের উপায়
সাবধানতা অবলম্বন
- ঝোপঝাড় এবং খোলা জায়গায় চলাফেরার সময় সাবধান থাকতে হবে।
- বর্ষাকালে এই সাপ খাবারের জন্য লোকালয়ে চলে আসতে পারে। তাই রাতের বেলায় চলাফেরা করার সময় আলো নিয়ে চলাফেরা করতে হবে, হাতে একটি লাঠি রাখতে হবে এবং পা ঢেকে রাখার জন্য জুতা বা বুট পরিধান করতে হবে।
- খতে খামারে কাজ করার সময় বুট ব্যবহার করা। যেহেতু ৭০% কামড় পায়ে হয়ে থাকে, তাই পা সুরক্ষিত থাকলে অনেকাংশেই এই সাপের কামড় থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে।
- ঘরের আশেপাশে ঝোপঝাড় পরিষ্কার রাখা।
- রাতে ঘুমানোর সময় বিছানাতে ঘুমাতে হবে। মেঝেতে ঘুমানোর অভ্যাস পরিত্যাগ করতে হবে।
- ঘুমানোর সময় মশারি ব্যবহার করতে হবে।
- যারা রাতের বেলাতে জমিতে বা বাগানে পাহারা দেন তারা একটি মাচা করে তাঁর উপর বসে পাহারা দিতে পারেন।
- বাড়ি এবং খামার আলাদা রাখতে হবে। কোন ভাবেই মুরগী বা হাস ঘরের মধ্যে রাখা যাবেনা।
- গর্ত দেখলেই মাটি দিয়ে পূরণ করে দিতে হবে।
- পুকুরে জাল ফেলার পর সাথে সাথে জালে হাত না দেওয়া। আগে দেখতে হবে জালে মাছের সাথে সাপ চলে আসছে কিনা। এরপর হাত দিয়ে মাছ ধরতে হবে।
সচেতনতা বৃদ্ধি
- সাপ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং স্থানীয় জনগণকে সাপের কামড় থেকে বাঁচার উপায় সম্পর্কে জানানো।
- সাপের উপস্থিতি সম্পর্কে জানতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা।
- রাসেল ভাইপার সাপের কামড় অত্যন্ত বিপজ্জনক, তবে সঠিক সময়ে চিকিৎসা এবং প্রাথমিক চিকিৎসার মাধ্যমে এর ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। সবার উচিত সাপের কামড় সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
মন্তব্য
রাসেল ভাইপার সাপ সম্পর্কে সচেতনতা এবং সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি, বিশেষত যেখানে এদের বেশি দেখা যায়।
"রাসেল ভাইপার সাপ কি, রাসেল ভাইপার কামড়ালে করনীয় কি" পোস্ট সম্পর্কিত মন্তব্যের জন্য নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন।
ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো।
সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url