বিকাশের পিন পরিবর্তন করার নিয়ম এবং বিকাশ প্রতারণা মামলা করার নিয়ম

অনেক সময় বিভিন্ন কারনেই বিকাশ পিন নাম্বার পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। আবার অনেকেই বিভিন্ন প্রতারকের পাল্লায় পড়ে বিকাশ থেকে অনেক টাকা নষ্ট করে ফেলেন। "বিকাশের পিন পরিবর্তন করার নিয়ম এবং বিকাশ প্রতারণা মামলা করার নিয়ম" পোষ্টে মূলত বিকাশ সংক্রান্ত এসব সমস্যার সমাধান সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল।
বিকাশের পিন পরিবর্তন করার নিয়ম এবং বিকাশ প্রতারণা মামলা করার নিয়ম
চলুন যেনে নেওয়া যাক কীভাবে বিকাশের পিন পরিবর্তন করবেন এবং প্রতারিত হলে কি কি পদক্ষেপ নিবেন।

ভূমিকা

বাংলাদেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের (MFS) মধ্যে বিকাশ একটি প্রধান এবং বহুল ব্যবহৃত প্ল্যাটফর্ম। প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের লেনদেন কার্যক্রম, বিল পরিশোধ, রিচার্জ, এবং অন্যান্য আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে বিকাশ ব্যবহার করে। এর সহজ এবং নিরাপদ লেনদেন পদ্ধতির জন্য এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।

তবে, বিকাশ ব্যবহারকারীরা অনেক সময় প্রতারণার শিকার হন। প্রতারকরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করে বা প্রতারণা করে অর্থ হাতিয়ে নেয়। এজন্য বিকাশ পিন নিরাপত্তা এবং প্রতারণার ক্ষেত্রে কীভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। 

বিকাশ পিন পরিবর্তন করার নিয়ম এবং বিকাশ প্রতারণা মামলা করার নিয়ম জানা থাকলে ব্যবহারকারীরা তাদের অর্থ এবং তথ্য নিরাপদ রাখতে সক্ষম হবেন। এই ভূমিকার উদ্দেশ্য হল বিকাশ ব্যবহারকারীদের জন্য পিন পরিবর্তন করার সঠিক পদ্ধতি এবং প্রতারণার শিকার হলে কীভাবে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।

বিকাশের পিন

বিকাশ পিন (ব্যক্তিগত শনাক্তকরণ নম্বর) আপনার বিকাশ অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি ৫ ডিজিটের একটি নম্বর যা প্রতিবার লেনদেন করার সময় প্রয়োজন হয়। আপনি যদি আপনার পিন পরিবর্তন করতে চান বা পিন সংক্রান্ত অন্য কোনো সাহায্য প্রয়োজন হয়, তাহলে বিকাশের গ্রাহক সেবার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। 

বিকাশের হেল্পলাইন নম্বর 16247 অথবা তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে গিয়ে আরও তথ্য পেতে পারেন।

বিকাশের পিন নরাপত্তা

পিন নম্বরের নিরাপত্তা রক্ষার জন্য কিছু পরামর্শ:
  • কখনোই আপনার পিন নম্বর অন্য কারো সাথে শেয়ার করবেন না।
  • সহজে অনুমান করা যায় এমন সংখ্যা (যেমন: জন্মতারিখ) পিন হিসাবে ব্যবহার করবেন না।
  • পিন নম্বর কোথাও লিখে রাখবেন না।
  • অচেনা বা অজানা ডিভাইসে পিন প্রবেশ করবেন না।
  • আপনার বিকাশ পিন সবসময় গোপন রাখুন এবং কোনো সন্দেহজনক কার্যক্রম লক্ষ করলে সাথে সাথে বিকাশের গ্রাহক সেবার সাথে যোগাযোগ করুন।

বিকাশের পিন পরিবর্তন করার নিয়ম

বিকাশের পিন পরিবর্তনের জন্য বিকাশ অ্যাপস অথবা মোবাইল এ ডায়াল, এই দুই পদ্ধতিতেই করা যায়। এখানে মোবাইলে ডায়ালের মাধ্যমে বিকাশ পিন পরিবর্তনের নিয়ম বর্ণনা করা হল-
  • ডায়াল প্যাড এ আসার পর *২৪৭# দিয়ে ডায়াল করতে হবে।
  • এরপর ০৯ নাম্বার এর মাই বিকাশ এ প্রবেশের জন্য ৯ লিখে সেন্ড বাটনে ক্লিক করতে হবে।
  • এরপর Change Pin এর জন্য ৩ লিখে সেন্ট বাটনে ক্লিক করতে হবে।
  • বর্তমানে ৫ ডিজিটের যে পিনটি ব্যবহার করছেন, অর্থাৎ যে পিন নাম্বারটি আপনি পরিবর্তন করতে চাচ্ছেন, সেই পিন নাম্বারটি দিয়ে সেন্ট বাটনে ক্লিক করুন।
  • এরপর আপনি ৫ ডিজিটের নতুন পিন নাম্বার দিয়ে সেন্ড বাটনে ক্লিক করবেন।
  • নতুন পিন নাম্বারটি পুনরায় দিয়ে আবার সেন্ড বাটনে ক্লিক করুন।
  • এরপর Request is processed successfully ম্যাসেজ আসলে বুঝতে পারবেন যে আপনার পিন নাম্বার পরিবর্তন হয়ে গেছে।
  • তবে অনেক সময় Connection problem দেখাতে পারে। এক্ষেত্রে পুনরায় চেষ্টা করতে হবে।

বিকাশের পিন ভুলে গেলে করণীয়

বিকাশ অ্যাপ এ শুধু মাত্র পিন ভুলে গিয়ে থাকলে পিন পরিবর্তন করতে পারবেন। অথবা আপনি আগের পিন নাম্বারটি অ্যাপে না দিয়ে, শুরুতেই পিন পরিবর্তন করতে পারবেন। চলুন যেনে নেওয়া যাক কিভাবে আপনি বিকাশ অ্যাপ এ পিন পরিবর্তন করবেন।
  • প্রথমেই আপনি বিকাশ অ্যাপ টি ওপেন করুন। এখন এখানে পিন নাম্বারটি না দিয়ে "পিন ভুলে গেছেন?" অপশনে ক্লিক করুন।
  • এরপর লাইভ চ্যাট বা ১৬২৪৭ নাম্বারে কল করে একটি ৫ ডিজিটের অস্থায়ী পিন নাম্বার নিয়ে নিবেন। এক্ষেত্রে কাস্টমার কেয়ার এর কাছে আপনার ভোটার আইডি নাম্বার, একাউন্টের ব্যালেন্স এবং লেনদেন এর তথ্য দিতে হবে। এরপর "পিন রিসেট" বাটনে ক্লিক করতে হবে।
  • এরপর অস্থায়ী পিন নাম্বারটি দিয়ে কনফার্ম বাটনে ক্লিক করতে হবে।
  • এরপর আপনার পছন্দের পিন নাম্বারটি দিবেন। পুনরায় কনফার্মেশনের জন্য পিন নাম্বারটি দিবেন। এরপর কনফার্ম বাটনে ক্লিক করবেন।
  • এরপর আপনি আপনার নতুন পিন নাম্বার দিয়ে লগ ইন করতে পারবেন।

বিকাশ প্রতারণা

বিকাশ প্রতারণা একটি সাধারণ সমস্যা যা অনেকেই সম্মুখীন হন। প্রতারণার ধরনগুলো ভিন্ন হতে পারে, যেমন ভুয়া কল, ফিশিং মেসেজ, কিংবা জালিয়াতি লেনদেন। এখানে বিকাশ প্রতারণা এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:

বিকাশ প্রতারণার ধরন

ফিশিং কল/মেসেজ

প্রতারকরা আপনাকে ফোন কল বা মেসেজ পাঠিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য (যেমন: বিকাশ পিন) জানতে চায়।

ভুয়া অফার

মিথ্যা অফার বা পুরস্কারের লোভ দেখিয়ে অর্থ আদায় করা।

নকল বিকাশ অ্যাপ

অফিসিয়াল বিকাশ অ্যাপের পরিবর্তে ভুয়া অ্যাপ ইনস্টল করে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করা।

প্রতারণা প্রতিরোধে করণীয়

ব্যক্তিগত তথ্য গোপন রাখুন 

কখনোই আপনার বিকাশ পিন, পাসওয়ার্ড, বা OTP (ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড) অন্যের সাথে শেয়ার করবেন না।

অফিসিয়াল বিকাশ অ্যাপ ব্যবহার করুন

শুধুমাত্র অফিসিয়াল বিকাশ অ্যাপ স্টোর (Google Play Store/Apple App Store) থেকে ডাউনলোড করুন।

ফিশিং মেসেজ/কল এড়িয়ে চলুন 

সন্দেহজনক মেসেজ বা কলের জবাব দেবেন না এবং কখনোই তাদের দেয়া লিঙ্কে ক্লিক করবেন না।

লেনদেন যাচাই করুন

প্রতিবার লেনদেন করার সময় সঠিক নাম্বার এবং পরিমাণ যাচাই করুন।
অ্যাপের নিরাপত্তা ফিচার ব্যবহার করুন: বিকাশ অ্যাপে ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা ফেস আইডি সক্রিয় করুন যদি সম্ভব হয়।

বিকাশ প্রতারণা মামলা করার নিয়ম

বিকাশ প্রতারণা হলে, দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনি প্রতারণার শিকার হলে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করতে পারেন:

১. বিকাশ কাস্টমার কেয়ার এ অভিযোগ জানান

প্রথমেই বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে অভিযোগ জানান। অভিযোগ করার পদ্ধতি:
  • বিকাশ হেল্পলাইন 16247 এ কল করুন।
  • আপনার সমস্যার বিস্তারিত জানান।
  • প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করুন যেমন: লেনদেনের সময়, ফোন নম্বর, এবং প্রতারণার বিবরণ।
  • বিকাশ কাস্টমার কেয়ার প্রতিনিধি আপনার অভিযোগ রেজিস্টার করবেন এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

২. থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করুন

প্রতারণার শিকার হলে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা জরুরি। এর জন্য:
  • আপনার নিকটস্থ থানায় যান।
  • আপনার সমস্যার বিস্তারিত লিখিত আকারে থানায় জমা দিন।
  • থানার অফিসার আপনাকে একটি জিডি নম্বর দেবেন যা ভবিষ্যতের জন্য সংরক্ষণ করুন।

৩. বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ জানান

প্রতারণার শিকার হলে বাংলাদেশ ব্যাংকেও অভিযোগ জানাতে পারেন:
  • বাংলাদেশ ব্যাংকের কনজিউমার কমপ্লেইন ডিপার্টমেন্টের সাথে যোগাযোগ করুন।
  • আপনার সমস্যার বিস্তারিত লিখিত আকারে তাদের কাছে জমা দিন।
  • অভিযোগপত্রে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, লেনদেনের বিবরণ, এবং বিকাশের সাথে যোগাযোগের বিবরণ অন্তর্ভুক্ত করুন।

৪. সাইবার ক্রাইম ইউনিটে অভিযোগ জানান

ডিজিটাল প্রতারণার শিকার হলে সাইবার ক্রাইম ইউনিটেও অভিযোগ করতে পারেন:
  • সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অফিসে যান বা তাদের ওয়েবসাইটে যান।
  • আপনার সমস্যার বিস্তারিত লিখিত আকারে তাদের কাছে জমা দিন।
  • প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহ করুন যেমন: প্রতারণাকারীর ফোন নম্বর, লেনদেনের সময়, এবং প্রতারণার বিবরণ।

৫. আইনি সহায়তা নিন

প্রতারণার শিকার হলে একজন আইনজীবীর সাথে যোগাযোগ করে আইনি পরামর্শ নিন। তিনি আপনাকে প্রয়োজনীয় আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারবেন এবং মামলা দায়ের করতে সাহায্য করবেন।

সতর্কতামূলক পরামর্শ

  • অপরিচিত বা সন্দেহজনক ফোন কল বা মেসেজে কখনোই ব্যক্তিগত তথ্য শেয়ার করবেন না।
  • বিকাশ থেকে আসা মেসেজ সবসময় যাচাই করুন।
  • লেনদেন করার সময় সতর্ক থাকুন এবং পরিচিত বা বিশ্বাসযোগ্য সূত্র থেকে লেনদেন করুন।
  • এভাবে আপনি বিকাশ প্রতারণার শিকার হলে সঠিকভাবে ব্যবস্থা নিতে পারবেন এবং আপনার অভিযোগ নিবন্ধিত করতে পারবেন।

উপসংহার

বিকাশ ব্যবহারকারীদের জন্য পিন পরিবর্তন এবং প্রতারণা মামলা করার নিয়মগুলি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একটি সুরক্ষিত পিন নম্বর রক্ষা এবং নিয়মিত পরিবর্তন করা ব্যবহারকারীর অ্যাকাউন্টের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। 

অন্যদিকে, প্রতারণার শিকার হলে সঠিক সময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক। বিকাশ কাস্টমার কেয়ারে অভিযোগ জানানো থেকে শুরু করে থানায় জিডি করা, বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করা এবং সাইবার ক্রাইম ইউনিটের সহায়তা নেওয়ার মাধ্যমে প্রতারকদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

অতএব, বিকাশ ব্যবহারকারীদের নিরাপত্তার জন্য এসব নিয়ম জানা এবং অনুসরণ করা আবশ্যক। সচেতন ব্যবহার এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের সুফল উপভোগ করা যায়। সচেতনতা ও সঠিক জ্ঞানের মাধ্যমে প্রতিটি বিকাশ ব্যবহারকারী তাদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবেন।

"বিকাশের পিন পরিবর্তন করার নিয়ম এবং বিকাশ প্রতারণা মামলা করার নিয়ম" পোস্ট সম্পর্কিত মন্তব্যের জন্য নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন।

ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url