বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪
"বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪" বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের দ্বারা পরিচালিত একটি আন্দোলন, যা সরকারি চাকরির কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে পরিচালিত হয়। এই কোটা সংস্কার আন্দোলন বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হয়।
এই আন্দোলন শুধু শিক্ষার্থীদের নয়, সমাজের সকল স্তরের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং দেশের নীতিনির্ধারকদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে, যা শেষ পর্যন্ত সরকারের নীতিগত পরিবর্তনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
ভূমিকা
২০২৪ সালে বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এই আন্দোলনটি মূলত সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে পরিচালিত হয়েছিল। ২০১৮ সালের কোটা আন্দোলনের মতোই, ২০২৪ সালের আন্দোলনও তরুণ সমাজ, বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে।
এই আন্দোলন বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা, চাকরির বাজার এবং রাজনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলেছে। এই আন্দোলন মূলত শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, যারা কোটা পদ্ধতির অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরে এর সংস্কারের দাবি জানিয়েছিল। তাদের মতে, বিদ্যমান কোটা ব্যবস্থা মেধাবীদের প্রতি অবিচার করছে এবং এর ফলে সমাজে বৈষম্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এই প্রেক্ষাপটে, আন্দোলনটি শুধু একটি রাজনৈতিক বা সামাজিক দাবি নয়, বরং একটি ন্যায্যতার জন্য সংগ্রামের প্রতীক হয়ে উঠেছিল। এর ফলে সরকারের উপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয় এবং দেশের সাধারণ মানুষও আন্দোলনকারীদের সমর্থনে এগিয়ে আসে।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ এর পটভূমি
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ এর পটভূমি ২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখা যায়।
- ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে নিয়োগের আশায় থাকা এবং সাধারণ শিক্ষার্থী জনগোষ্ঠী কোটা সংস্কারের দাবিতে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতৃত্বে বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি শুরু করে।
- ব্যাপক আন্দোলনের ফলে, সরকার প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৪৬ বছর ধরে চলা কোটা ব্যবস্থা বাতিল ঘোষণা করে। ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর, সরকার এক পরিপত্র জারি করে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে।
- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জারি করা সেই পরিপত্রে বলা হয় যে, ৯ম গ্রেড (পূর্বতন ১ম শ্রেণি) এবং ১০ম-১৩তম গ্রেডের (পূর্বতন ২য় শ্রেণি) পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা হবে এবং বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করা হবে।
- ২০২১ সালে, এই পরিপত্রের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অহিদুল ইসলামসহ সাতজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন। ২০২৪ সালের ৫ জুন, বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই পরিপত্র বাতিল করে রায় দেন।
- রায় প্রকাশিত হওয়ার পর, ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে একত্রিত হন। প্রথমদিকে, ঈদ ও গ্রীষ্মকালীন ছুটির কারণে আন্দোলন পিছিয়ে যায়। কিন্তু ছুটি শেষে আন্দোলন পুনরায় শুরু হলে এটি ব্যাপক আকার ধারণ করে।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশসহ অন্যান্য সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে যোগ দেন।
- শিক্ষার্থীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে "বাংলা ব্লকেড" নামে অবরোধ কর্মসূচি পালন শুরু করেন।
- আন্দোলন চলাকালীন, ১০ জুলাই মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে হাইকোর্টের রায়ে আপিল বিভাগ চার সপ্তাহের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করে। শিক্ষার্থীরা আদালতের রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জানায় যে, আন্দোলনের সাথে আদালতের কোনো সম্পর্ক নেই এবং তারা সরকারের কাছে কোটা সমস্যার চূড়ান্ত সমাধান চান।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ এর মূল দাবি
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের মূল দাবি ছিল বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির সংস্কার ও মেধার ভিত্তিতে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। আন্দোলনকারীরা চাইছিলেন যে, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে কোটার পরিবর্তে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা হোক, যাতে চাকরিপ্রার্থীদের মধ্যে যোগ্যতা ও মেধার মূল্যায়ন সঠিকভাবে করা হয়।
তাদের প্রধান দাবিগুলো ছিল:
- মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ: সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান নিশ্চিত করা, যাতে প্রকৃত মেধাবীরা চাকরি পেতে পারেন।
- কোটা পদ্ধতির সংস্কার: বিদ্যমান কোটা পদ্ধতির পুনর্মূল্যায়ন এবং প্রয়োজনে তা হ্রাস বা বাতিল করা।
- সামাজিক ন্যায়বিচার: কোটা পদ্ধতির মাধ্যমে সৃষ্ট বৈষম্য দূর করা এবং সমান সুযোগ নিশ্চিত করা।
- স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া: সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা।
এই দাবিগুলো পূরণের জন্য শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন ও বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন এবং সরকারের প্রতি তাদের দাবি জানাতে থাকেন।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ এর ঘটনা প্রবাহ
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনা প্রবাহ ২০২৪ এর একটি সংক্ষিপ্তসার নিম্নরূপ:
- ৫ জুন, ২০২৪, হাইকোর্ট, ২০১৮ সালে সরকারের কোটা বাতিলের সিদ্ধান্তকে অবৈধ ঘোষণা করে।
- ৬ জুন, ২০২৪ থেকে আন্দোলনকারীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন শুরু করে, যার মধ্যে প্রধান কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।
- ৯ জুন, ২০২৪ এ সরকার হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে আবেদন করে।
- ১০ জুন ২০২৪ এ শিক্ষার্থীরা তাদের দাবির পূরণে সরকারকে ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয় এবং এরপর আন্দোলনে বিরতি ঘোষণা করে।
- ৩০ জুন-৬ জুলাই ২০২৪ এর মধ্যে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও মহাসড়ক অবরোধের মত কর্মসূচি পালন করা হয়।
- ৭ জুলাই ২০২৪ থেকে "বাংলা ব্লকেড" নামে এক ধারাবাহিক কর্মসূচির সূচনা হয়, যা ৯ জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত চলতে থাকে।
- ১০ জুলাই ২০২৪ থেকে আন্দোলন আরো জোরালো হয়, যখন শিক্ষার্থীরা শাহবাগ অবরোধ করে এবং তাদের দাবির পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
- ১১ জুলাই ২০২৪ এ শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশি হামলা এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে, যা আন্দোলনকারীদের আরো উত্তেজিত করে তোলে।
- ১২ জুলাই ২০২৪ থেকে আন্দোলন রাজধানী ঢাকার বাইরে ছড়িয়ে পড়ে, এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে অংশ নিতে শুরু করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ছাত্রলীগের কর্মীদের সাথে সংঘর্ষ ঘটে এবং পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বলপ্রয়োগ করে।
- ১৩ জুলাই ২০২৪ এ রাজশাহীতে শিক্ষার্থীরা রেলপথ অবরোধ করে। ঢাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীরা সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করে যে, মামলার মাধ্যমে আন্দোলনে বাধা দেওয়া হচ্ছে।
- ১৪ জুলাই ২০২৪ তে ঢাকায় শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে।
- ১৫ জুলাই ২০২৪ এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়, যার ফলে অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়। শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে অপমানিত বোধ করে এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
- ১৬ জুলাই ২০২৪ এ কোটা সংস্কার আন্দোলনকালে বাংলাদেশে বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার ঘটনা ঘটে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এ ছাত্রলীগের হামলার ভয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনে আশ্রয় নেন। রাত ২টার দিকে ছাত্রলীগ সেখানে ঢুকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মারধর করে।
- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় এর মাদার বখশ হলের শিক্ষার্থীরা থালা বাজিয়ে আন্দোলন করলে ছাত্রলীগের কর্মীরা বিভিন্ন কক্ষে তল্লাশি চালান। বিকালে আন্দোলনকারীদের তোপের মুখে ক্যাম্পাস ছাড়েন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
- বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও মাদার বখশ হলের বিভিন্ন কক্ষে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটে। আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কক্ষে অভিযান চালিয়ে অস্ত্র ও মাদক জব্দ করেন।
- ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেরুল বাড্ডা ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। মিরপুর ১০-এ বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীদের ওপর যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীরা হামলা করেন।
- টাঙ্গাইল এ কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা হামলা চালায়, একজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হন।
- রংপুর এ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের সহিংসতায় একজন শিক্ষার্থী নিহত ও ১৫ জন আহত হন।
- চট্টগ্রাম এ ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে দুইজন নিহত হন, যার মধ্যে একজন শিক্ষার্থী ও একজন পথচারী।
- ঢাকা কলেজ এর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন যুবক নিহত হন।
- সহিংসতার কারণে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া ও রাজশাহীতে বিজিবি মোতায়েন করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করে এবং এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন সকল সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ বন্ধের নির্দেশ দেয়।
- ১৭ জুলাই ২০২৪ এ
- সরকার সকল মোবাইল কোম্পানীকে সকল ধরণের ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।
- ঢাকার রোকেয়া হল শাখার ছাত্রলীগ নেত্রীদের ছাত্রীরা বহিষ্কার করে এবং প্রাধ্যক্ষকে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে বাধ্য করে। এরপর অন্যান্য হলেও ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা দেওয়া হয়।
- সকাল ১০টার মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হলের নিয়ন্ত্রণ শিক্ষার্থীদের হাতে চলে যায়।
- সারা দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে।
- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়।
- বিকালে ছাত্ররা ‘গায়েবানা জানাজা ও কফিনমিছিল’ করে, পুলিশ এতে বাধা দেয়।
- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের আলোচনা ব্যর্থ হয় এবং প্রশাসনিক ভবনের ফটক তালা ঝুলিয়ে দেয়।
- সন্ধ্যায় পুলিশের গুলিতে ৬ জন আহত হয়।
- আন্দোলনকারীরা ১৮ জুলাই ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
- ১৮ জুলাই ২০২৪ এ
- সরকার সারাদেশে ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করে।
- আন্দোলনকারীদের সাথে আওয়ামিলীগ, ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়, অনেক শিক্ষার্থী আহত হয়।
- দুপুর ২টায় পুলিশের গুলিতে নর্দান ইউনিভার্সিটির ২ শিক্ষার্থী নিহত হয়।
- দুপুর ৩টায় মাদারীপুর কলেজের এক শিক্ষার্থী পুলিশের ধাওয়ায় মারা যায়।
- সরকারের নির্দেশে ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেওয়া হয় এবং রাতে সব ইন্টারনেট সেবা বিচ্ছিন্ন করা হয়।
- ১৯ জুলাই ২০২৪ এ
- সারাদেশে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয় এবং ঢাকার সাথে সারাদেশের ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখা হয়।
- সকাল ১০টায় রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কালো কাপড় বেঁধে প্রতিবাদ জানান।
- ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পুলিশের সাথে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে কমপক্ষে ৫৬-৬৬ জনের মৃত্যু হয়।
- সরকার সারাদেশে কারফিউ জারি করে এবং সেনা মোতায়েন করে।
- কারফিউর মধ্যে আন্দোলনের প্রতিনিধিদের সাথে সরকারের মন্ত্রীদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
- ২০ জুলাই ২০২৪ এ
- সারা বাংলাদেশে তৃতীয় দিনেও ইন্টারনেট বন্ধ থাকে। সেনাবাহিনী দেশের বিভিন্ন অংশে কারফিউ পালন করে। দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল রাখা হলেও পুনরায় কার্যকর করা হয়। রবিবার ও সোমবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়।
- ঢাকার যাত্রাবাড়ী, রামপুরা-বনশ্রী, বাড্ডা, মিরপুর, আজিমপুর ও মানিকনগরসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষ ঘটে। পুলিশ টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। সংঘর্ষে দুই পুলিশসহ অন্তত ১০ জন নিহত ও ৯১ জন আহত হন।
- ২১ জুলাই ২০২৪ এ
- চতুর্থ দিনেও সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ ও কারফিউ বলবৎ ছিল।
- আপিল বিভাগের রায়ে হাইকোর্টের রায় বাতিল করে সরকারি চাকরিতে মেধার ভিত্তিতে ৯৩% নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়।
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি পক্ষ '৯ দফা' দাবি নিয়ে শাটডাউন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
- ২২ জুলাই ২০২৪ এ
- পঞ্চম দিনে সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ ও কারফিউ বলবৎ ছিল। সাধারণ ছুটি আরও একদিন বাড়ানো হয়।
- প্রধানমন্ত্রীর সাথে ব্যবসায়ীদের বৈঠকে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরকে হামলা ও সহিংসতার জন্য দায়ী করে ‘আরও শক্ত অ্যাকশন’ নেওয়ার নির্দেশ দেন।
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম চার দফা দাবি নিয়ে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি স্থগিত করেন। দাবিগুলোর মধ্যে ইন্টারনেট চালু, ক্যাম্পাসগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রত্যাহার, আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তা ও কারফিউ প্রত্যাহার অন্তর্ভুক্ত।
- ২৩ জুলাই ২০২৪ এ
- ষষ্ঠ দিনে সারা দেশে ইন্টারনেট বন্ধ ছিল, তবে রাতের দিকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে সীমিত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হয়। কারফিউ চার দিন পরও বলবৎ ছিল, কিছু কিছু এলাকায় শিথিল করা হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কারফিউর মেয়াদ দুইদিন বাড়ানোর ঘোষণা দেয়।
- প্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ের পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কোটা সংক্রান্ত নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করে, যেখানে সরকারি চাকরিতে মেধাভিত্তিক ৯৩%, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনাদের জন্য ৫%, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর জন্য ১% ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য ১% কোটা নির্ধারণ করা হয়। ২০১৮ সালের প্রজ্ঞাপনও বাতিল করা হয়।
- ২৪ জুলাই ২০২৪ এ
- সীমিত পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হলেও মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ থাকে। সারাদেশে কারফিউ শিথিল অবস্থায় থাকলেও পঞ্চম দিনের মতো কার্যকর ছিল। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের মৃত্যুর ফলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১৯৭ জনে পৌঁছায়।
- ২৪ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন মামলায় পুলিশ ১,৭৫৮ জনকে গ্রেফতার করে।
- বিক্ষোভের সময় জাতিসংঘের লোগোসংবলিত যান ব্যবহারের কারণে জাতিসংঘ উদ্বেগ জানালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বিষয়টি ব্যাখ্যা করে জানান যে, যানগুলো জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল এবং লোগো ভুলে মোছা হয়নি।
- ১৯ জুলাই থেকে নিখোঁজ থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও রিফাত রশীদের খোঁজ ২৪ জুলাই পাওয়া যায়।
- ২৫ জুলাই ২০২৪ এ
- ব্রডব্যান্ডে ধীরগতির ইন্টারনেট চলছেএবং সরকার ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রেখেছে। মোবাইল ইন্টারনেটও এখনও চালু হয়নি।
- এদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীরা তাদের জন্য আটটি নির্দেশনা প্রদান করেন। এতে হতাহতদের তালিকা তৈরি, হামলাকারীদের চিহ্নিত করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও হল খুলে দেওয়ার দাবি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
- তারা আরও বলেন, আপিল বিভাগের রায়ের পর কোটা সংস্কার নিয়ে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে, তা আন্দোলনকারী ও অন্যান্য অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই করা হয়েছে। তারা মনে করেন, যথাযথ সংলাপের মাধ্যমে এবং সব পক্ষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।
- ২৬ জুলাই ২০২৪ এ
- কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের, বিশেষ করে নাহিদ ইসলামসহ তিন জনকে, সাদা পোশাকধারী ব্যক্তি দ্বারা তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক। এই ব্যক্তিরা নিজেদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে এবং তাদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
- এদিকে, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটককে ‘শহীদ রুদ্র তোরণ’ নামে নামকরণ করা হয়েছে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দ্বারা, যা আন্দোলনের প্রতি তাদের সমর্থনের প্রতীক।
- জাতিসংঘ এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, বিশেষ করে সরাসরি গুলি ব্যবহারের কারণে। এ ধরনের হস্তক্ষেপ এবং সহিংসতা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শঙ্কা তৈরি করে এবং এটি দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি গুরুতর হুমকি। এটি আরো একটি উদাহরণ যে, বিরোধী মতের ওপর সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর দমন নীতি কতটা প্রভাব ফেলছে।
- ২৭ জুলাই ২০২৪ এ
- বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে ডিবি (গোয়েন্দা শাখা) স্বীকার করেছে যে, নাহিদ ইসলামসহ তিন সমন্বয়ককে নিরাপত্তার স্বার্থে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীদের সহিংসতার সাথে সম্পৃক্ততা সম্পর্কে জানতে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। তবে, কেন তাদের পরিবারের কাছে না দিয়ে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হলো, তা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। ডিবি প্রধানের সাথে সাক্ষাতের চেষ্টা করলেও শিক্ষকদের সাথে দেখা করতে তিনি অস্বীকৃতি জানান।
- আন্দোলন ঘিরে সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর অভিযান চালায়, যার মধ্যে ঢাকায় ‘ব্লক রেইড’ অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিছু সময়ের জন্য কারফিউ শিথিল থাকলেও, সার্বিক পরিস্থিতি ছিল কঠোর নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা আটক নেতাদের মুক্তি, মামলা প্রত্যাহার এবং সহিংসতার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে আল্টিমেটাম দেয়।
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ থাকার পাশাপাশি, ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও ধীর গতিতে চলছিল, যা তথ্য আদান-প্রদান বাধাগ্রস্ত করেছে। এর পাশাপাশি, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে দ্বিতীয় শহীদ বেদি স্থাপন করে, যা আন্দোলনের প্রতি তাদের একাত্মতা প্রদর্শন করে।
- ২৮ জুলাই ২০২৪ এ
- কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক নুসরাতকে ভোরে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে, যার ফলে মোট ৬ জন সমন্বয়কারীকে আটক করা হলো। বেলা ৩টা থেকে মোবাইল ইন্টারনেট পুনরায় চালু করা হলেও ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটকসহ বিভিন্ন সেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
- বিকেল ৪টা থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের সমাবেশ ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ চলমান ছিল, যেখানে তারা আরিফ সোহেলসহ আটক সকল আন্দোলনকারীদের মুক্তির দাবি জানিয়েছেন।
- ২০২৪ সালের ২৮ জুলাই রাতে পুলিশি হেফাজতে থাকা ৬ সমন্বয়ক আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তবে, বাকি সমন্বয়কারীরা এই ঘোষণাকে জোরপূর্বক আদায় করা হয়েছে বলে দাবি করে এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
- আন্দোলনের অন্য সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, "ডিবি কার্যালয়ে জিম্মি করে নির্যাতনের মুখে যে লিখিত বক্তব্য পাঠ করানো হয়েছে, তা কখনোই জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।" তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ ৯ দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
- ২৯ জুলাই দেশের প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা আবারও রাজপথে নামার ঘোষণা দেয়। ২৮ জুলাই পর্যন্ত অন্তত ২১১ জন নিহত এবং ঢাকায় ৭ হাজার আহতের খবর পাওয়া যায়। ১২ দিনে দেশের ১৮ জেলায় অন্তত ২৫৩ শিক্ষার্থী গ্রেফতার করা হয়েছে।
- ২৯ জুলাই ২০২৪ এ
- কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল হয়ে উঠেছে। আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারীদেরকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী (ডিবি) আটক করে এবং জোর করে একটি বিবৃতি প্রদানে বাধ্য করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
- যদিও ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন-অর-রশিদ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন, তিনি দাবী করেছেন যে, আন্দোলনকারীরা নিজেদের নিরাপত্তার জন্যই এই বিবৃতি দিয়েছেন এবং তাদের দাবিগুলো মেনে নেওয়া হয়েছে বলে বিবৃতি দিয়েছেন।
- ২০২৪ সালের ২৯ জুলাই, বাংলাদেশের কোটা সংস্কার আন্দোলনে ৭৪ জন বিশিষ্ট নাগরিক জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত দাবি করেন। তাঁরা বলেন, গত এক শতাব্দীতে এত বড় হতাহতের নজির নেই এবং এর দায় প্রধানত সরকারের। প্রথম আলোর রিপোর্টে দেখা গেছে, নিহতদের বেশিরভাগই কম বয়সী শিক্ষার্থী। নিরাপত্তা বিশ্লেষক এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বিক্ষোভ দমনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাধারণত যুদ্ধক্ষেত্রে দেখা যায়।
- রাজধানীসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল করে। চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে সাউন্ড গ্রেনেড ও কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করা হয়। আরিফ সোহেল নামে এক শিক্ষার্থীকে ছয় দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়, যদিও ডিবি তার আটক থাকার কথা অস্বীকার করে।
- টিআইবি এই ঘটনাকে প্রতারণামূলক ও সংবিধান পরিপন্থি উল্লেখ করে নিন্দা জানায়। ডিবি কার্যালয়ে আটক সমন্বয়কারীদের খাওয়ার ছবি প্রকাশ করে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার হারুনুর রশীদ বলেন, তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলেন।
- হাইকোর্টে রিট আবেদনে আটক সমন্বয়কারীদের মুক্তি ও গুলি না করার নির্দেশনা চাওয়া হয়। বিচারপতিরা সমন্বয়কারীদের খাওয়ার ছবি প্রকাশ করাকে জাতির সঙ্গে মশকরা বলে মন্তব্য করেন।
- কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা ৩০ জুলাই লাল কাপড় মুখে ও চোখে বেঁধে ছবি তোলা এবং অনলাইনে প্রচার কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়।
- ৩০ জুলাই ২০২৪
- দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকায় অভিভাবকরা ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে 'মৌন অবস্থান' কর্মসূচি পালন করতে গেলে পুলিশ তাঁদের বাধা দেয়, ফলে তাঁরা কর্মসূচি পালন করতে ব্যর্থ হন।
- খুলনায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ৯ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন, যেখানে প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থী অংশ নেন। তাঁরা একটি মোড়ের চারটি সড়ক অবরোধ করে তাদের দাবির পক্ষে অবস্থান নেন।
- পঞ্চগড়ে শিক্ষার্থীরা আধুনিক সদর হাসপাতাল চত্বর থেকে মিছিল বের করলে পুলিশ বাধা দেয় এবং পাঁচজনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষকরা মুখে লাল কাপড় বেঁধে র্যালি ও সমাবেশ করেন, যেখানে প্রায় ২০০ শিক্ষক অংশ নেন।
- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা 'নিপীড়নের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর' ব্যানারে মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেন।
- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ নাগরিকরা সরকার ঘোষিত শোক দিবস প্রত্যাখ্যান করে কালো রঙের বদলে লাল প্রোফাইল ছবি ব্যবহার করে আন্দোলনকারীদের প্রতি সমর্থন জানান। কিছু মানুষ কালো প্রোফাইল ছবি দিয়েও শোক ও প্রতিবাদ প্রকাশ করেন।
- ৩১ জুলাই ২০২৪
- ‘হত্যা, গণগ্রেপ্তার, হামলা, মামলা ও গুমের’ প্রতিবাদে সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ (ন্যায়বিচারের জন্য পদযাত্রা) কর্মসূচি পালিত হয়। চট্টগ্রামে সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। মিছিলটি পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে এগিয়ে যায় এবং আদালত চত্বরেও প্রবেশ করে।
- এই প্রতিবাদের মধ্যে, বিকেল ৩টায় ১৩ দিন বন্ধ থাকার পর ফেসবুক এবং অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো পুনরায় খুলে দেওয়া হয়।
- ১ আগস্ট ২০২৪
- সরকার জামায়াত-শিবিরকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে।
- আবদুল্লাহ আল জুবায়েরের মা ফাতেমাতুজ জোহরার আবেদন: কারাবন্দী ছেলে আবদুল্লাহ আল জুবায়েরের মুক্তির জন্য তার মা ফাতেমাতুজ জোহরা আদালতে আবেদন করেন।
- জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রীর ছবি তার কার্যালয় থেকে সরিয়ে ফেলেন।
- নতুন কর্মসূচি: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন "প্রার্থনা ও ছাত্র-জনতার গণমিছিল" নামে একটি নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে।
- ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান: যশোরের এমপি আজিজুল হক ওবায়দুল কাদের ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।
- জাতিসংঘের সহযোগিতা চাওয়া: প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক সংঘাতের ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘের সহযোগিতা চান।
- ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঝুম বৃষ্টিতে ভিজে আন্দোলনে হতাহতদের স্মরণ করেন।
- ২ আগস্ট ২০২৪
- বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক, ডিবি হেফাজত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর জানিয়েছেন যে তাদের প্রকাশিত ভিডিও স্টেটমেন্ট স্বেচ্ছায় দেওয়া হয়নি। তারা বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে তাদের আটক রাখা হয়েছিল। আন্দোলন অব্যাহত রাখার কথা উল্লেখ করে তারা ছাত্র-নাগরিকদের মিথ্যা প্রচারণা ও দমন-পীড়নকে উপেক্ষা করে রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
- বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচির মধ্যে মোবাইল নেটওয়ার্কে ফেসবুক ও টেলিগ্রাম সাময়িকভাবে বন্ধ করা হয়েছিল।
- ঢাকার ধানমন্ডিতে শিল্পীসমাজ সরকারের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে সমাবেশ করেছে, তাঁরা লাল রঙের চিত্র অঙ্কন ও পারফরম্যান্স আর্ট পরিবেশন করেছেন।
- এছাড়া বিভিন্ন জায়গায় গণমিছিল ও বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেমন সাইন্স ল্যাব, উত্তরা, আফতাবনগর, চট্টগ্রাম, সিলেট, বগুড়া, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ও নোয়াখালী।
- সিলেটে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ২০ জন আহত হয়েছে।
- নরসিংদীতে ছাত্রলীগ-যুবলীগের হামলায় ১২ জন আহত হয়েছেন।
- খুলনায় বিক্ষোভকারীদের মিছিলে পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করেছে।
- ঢাকায় শিক্ষক ও নাগরিক সমাজের ডাকা দ্রোহযাত্রায় কয়েক হাজার মানুষ অংশগ্রহণ করেছে।
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ৩ আগস্ট সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল এবং ৪ আগস্ট থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে।
- ৩ আগস্ট ২০২৪
- ৩ আগস্ট ভোরে আহত এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনার প্রস্তাব দিলেও, আন্দোলনকারীরা তা প্রত্যাখ্যান করে।
- আফতাবনগরের ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে এবং রাজশাহীতে শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ করে।
- ঢাকার রবীন্দ্রসরোবরে সংগীতশিল্পীদের প্রতিবাদী সমাবেশের পর বিশাল মিছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যায়, যেখানে মো. নাহিদ ইসলাম বক্তব্য দেন।
- একদফা দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণা দেয়।
- চট্টগ্রামে শিক্ষামন্ত্রীর বাসা ও এক সংসদ সদস্যের কার্যালয়ে হামলা হয়।
- গাজীপুরের শ্রীপুরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে একজন নিহত হন।
- রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় দুই পুলিশ সদস্য বরখাস্ত হয়।
- সিলেটে আন্দোলনের কর্মসূচিতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে।
- ৪ আগস্ট ২০২৪
- রাজধানী ঢাকাসহ ৩৩টি জেলা ও মহানগরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ হয়েছে। বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ ও হামলায় অন্তত ২১৭ জন নিহত এবং ১৩০ জন আহত হয়েছেন। গাজীপুর, কুমিল্লা, চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতাদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে।
- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার রাতে গণভবনে সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, শিক্ষক ও কলেজের অধ্যক্ষদের সঙ্গে একটি মতবিনিময় সভা করেছেন। এই বৈঠকটি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে রাত ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত প্রায় তিন ঘণ্টা স্থায়ী হয়।
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিক্ষোভ কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম যেমন এএফপি, এপি, নিউইয়র্ক টাইমস, আল-জাজিরা, দ্য ইকোনমিক টাইমস, হিন্দুস্তান টাইমস এবং আনন্দবাজার পত্রিকা বিশদভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
- এএফপি উল্লেখ করেছে যে শিক্ষার্থীরা সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন ঘোষণা করেছে, যা শেখ হাসিনার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত চলবে।
- এপি জানিয়েছে, গত মাসের সংঘর্ষে দুই শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার পর শনিবার শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হয়েছে।
- নিউইয়র্ক টাইমস, আল-জাজিরা এবং অন্যান্য গণমাধ্যমও শিক্ষার্থীদের আন্দোলন, সহিংসতা এবং প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবির বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
- আজ সকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে শাহবাগে বিক্ষোভ শুরু হয়, যেখানে হাজারো বিক্ষোভকারী সরকারের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগান দেয়।
- বিক্ষোভের সময় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে আওয়ামী লীগ কর্মীদের ধাওয়া করা হয় এবং হাসপাতালের ভেতরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটে। দুপুর ১২টার দিকে বিক্ষোভকারীরা শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়।
- সরকারি নির্দেশে বেলা ১টার পর থেকে ফেসবুক, মেসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ ও ইনস্টাগ্রাম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন ও সংঘর্ষের ঘটনায় মোবাইল অপারেটরদের ফোর-জি ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ করা হয়েছে। তবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এখনো সচল রয়েছে।
- সন্ধ্যা ছয়টা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়েছে, যা ঢাকাসহ সব বিভাগীয় সদর, সিটি করপোরেশন, পৌরসভা, শিল্পাঞ্চল, জেলা ও উপজেলা সদরে কার্যকর হবে।
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে সংঘর্ষের ঘটনায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আজকের সংঘর্ষে ২৭ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে।
- সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর থানায় সন্ত্রাসী হামলায় ১৩ পুলিশ সদস্য নিহত হন। এনায়েতপুর থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাকসহ নিহতদের মধ্যে কুমিল্লার ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে থানার এক পুলিশ সদস্যও রয়েছেন।
- এছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ চলতেই থাকে এবং ছাত্র, পুলিশ, ছাত্রদল ও আওয়ামীলীগের নেতা কর্মীসহ অনেক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
৫ আগস্ট ২০২৪, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার দেশত্যাগ ও ছাত্র-জনতার বিজয়
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি মঙ্গলবার, ৬ আগস্ট ২০২৪ থেকে পরিবর্তন করে সোমবার ৫ আগস্ট ২০২৪ আনা হয়েছে। আন্দোলনকারীদের আজই ঢাকায় আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ জানিয়েছেন, সরকারের নির্যাতনের প্রতিবাদে ছাত্র-জনতা রাজপথে অবস্থান নেবে।
- রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় লাখো মানুষ মিছিল নিয়ে রাস্তায় নামে। যাত্রাবাড়ী, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বাড্ডা, উত্তরা, মিরপুরে বিক্ষোভ চলমান থাকে।
- সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান দুপুর ২টায় বক্তব্য দেবেন বলে জানানো হয় এবং জনগণকে ধৈর্য ধারণের অনুরোধ করা হয়।
- দুপুর দেড়টার দিকে সকালে বন্ধ করা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পুনরায় চালু করা হয়। মোবাইল ইন্টারনেট চালুর নির্দেশনাও বেলা পৌনে দুইটার দিকে জানা যায়।
- উত্তরা থেকে বনানীর দিকে অগ্রসর হয় আন্দোলনকারীদের একটি দল, যেখানে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের পাশাপাশি স্থানীয় মানুষও অংশ নেয়। তারা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে এগিয়ে যায় এবং বেলা দেড়টার দিকে বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পার হয়ে সামনের দিকে যায়।
- দুপুরের দিকে সেনা সদর দপ্তরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে জাতীয় পার্টির আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও মুজিবুল হক চুন্নু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আসিফ নজরুল, এবং বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাস উপস্থিত ছিলেন।
- বিকেলে (দুপুর ২টার বক্তব্য পিছিয়ে বিকেলে নেওয়া হয়) জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য দেবেন এবং সহিংসতা পরিহার করে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানানো হয়।
- বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দাবির মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেন এবং বেলা আড়াইটার দিকে সামরিক হেলিকপ্টারে করে ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে দেশ ছাড়েন।
- জানা যায়, হেলিকপ্টারটি ভারতের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। শেখ হাসিনা টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং বিভিন্ন সময়ে বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন। সাম্প্রতিক বিক্ষোভের প্রেক্ষিতে তিনি ৫ আগস্ট ২০২৪ এ পদত্যাগ করেন।
- সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জানান যে দেশে ক্রান্তিকাল চলছে এবং একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উত্তেজনার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন।
- জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান জনগণকে সহিংসতা পরিহার করে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়েছেন এবং সমস্ত হত্যা ও অন্যায়ের বিচার করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা হবে।
- তিনি আরও বলেন যে, সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। সেনাবাহিনী শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে এবং জনগণকে সহযোগিতা করতে আহ্বান জানানো হয়।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ এর ফলাফল
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের ফলাফল নিম্নরূপ:
- কোটা পদ্ধতির সংস্কার: আন্দোলনের ফলে কোটা পদ্ধতিতে পরিবর্তন আসে, মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও স্বচ্ছ ও ন্যায্য হয়।
- নতুন নীতিমালা প্রণয়ন: নতুন নীতিমালা তৈরি করা হয়, যা চাকরি ও শিক্ষাক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতির সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করে।
- তরুণ প্রজন্মের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি: আন্দোলনের ফলে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পায়।
- সরকারের পদত্যাগ: আন্দোলনের চাপের মুখে সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
- সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তন: আন্দোলন দেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন আনে, যা ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে।
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ এর সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব
বাংলাদেশে ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
সামাজিক প্রভাব
- ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির সৃষ্টি: আন্দোলনটি শিক্ষিত যুব সমাজের মধ্যে ন্যায্যতা এবং সমানাধিকারের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করেছে।
- যুবসমাজের একতা: শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে একতা এবং সহযোগিতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
- সমাজের পরিবর্তন: আন্দোলনের ফলে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ কোটা পদ্ধতির সুবিচার ও পুনর্বিবেচনার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেছে।
রাজনৈতিক প্রভাব
- সরকারের নীতিগত পরিবর্তন: আন্দোলনের চাপের মুখে সরকার কোটা পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা ও সংস্কার করতে বাধ্য হয় এবং পরবর্তিতে পদত্যাগ করে।
- রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি: তরুণ সমাজের মধ্যে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক পরিবেশে পরিবর্তন আনতে পারে।
কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪: আমাদের জন্য শিক্ষা ও উপলব্ধি
কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪ আমাদের জন্য অনেক শিক্ষা ও উপলব্ধি নিয়ে এসেছে। এ আন্দোলন শিক্ষার্থীদের মধ্যে সমতার দাবি এবং তাদের অধিকারের জন্য সংগ্রামের শক্তিশালী প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে।
- সংগঠনের শক্তি: এই আন্দোলন দেখিয়েছে, সংগঠিত ছাত্রসমাজ তাদের যৌক্তিক দাবি আদায়ে কতটা শক্তিশালী হতে পারে।
- সচেতনতা ও অধিকার: শিক্ষার্থীরা নিজেদের অধিকার এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে সচেতন হয়েছে এবং সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদ করেছে।
- প্রভাব: আন্দোলন প্রমাণ করেছে যে গণতান্ত্রিক দেশে জনগণের কণ্ঠস্বর কতটা প্রভাবশালী হতে পারে, যা সরকারের নীতিমালা ও সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনতে সক্ষম।
- নেতৃত্ব: ছাত্র নেতারা তাদের নেতৃত্বের ক্ষমতা ও কৌশল প্রমাণ করেছেন, যা ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
- শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ: শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের দাবি আদায় করতে সচেষ্ট ছিল, যা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের গুরুত্ব তুলে ধরেছে।
উপসংহার
বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪, বাংলাদেশের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে স্থান পেয়েছে। আন্দোলনটি দেশের শিক্ষিত যুবসমাজের মধ্যে ন্যায়বিচার, সমানাধিকার এবং মেধার মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে গভীর সচেতনতা সৃষ্টি করেছে।
এর ফলে সরকার কোটা পদ্ধতির সংস্কার করতে বাধ্য হয়েছে এবং পরবর্তিতে পদত্যাগ করেছে। এই আন্দোলন শুধু একটি বিশেষ দাবির প্রতি সীমাবদ্ধ না থেকে দেশের সামগ্রিক নীতিনির্ধারণ প্রক্রিয়ায় তরুণ প্রজন্মের সক্রিয় অংশগ্রহণের গুরুত্বকে তুলে ধরেছে।
ভবিষ্যতে এই ধরনের আন্দোলনগুলো দেশের সামাজিক উন্নয়ন ও রাজনৈতিক সংস্কারের পথে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে বলে আশা করা যায়।
"বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৪" পোস্ট সম্পর্কিত মন্তব্যের জন্য নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন।
ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো।
সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url