রিজিক বৃদ্ধির দোয়া, রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত

প্রতিটি মানুষের জন্য আল্লাহ তাআলা নির্দিষ্ট পরিমাণ রিজিক নির্ধারণ করেছেন এবং তিনি বিভিন্ন উপায়ে মানুষের রিজিকের ব্যবস্থা করেন। "রিজিক বৃদ্ধির দোয়া, রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত" পোস্টে আমরা রিজিক বৃদ্ধির জন্য প্রাসঙ্গিক দোয়া, কোরআনের আয়াত এবং তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনাগুলি নিয়ে আলোচনা করব।
রিজিক বৃদ্ধির দোয়া, রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
চলুন যেনে নেওয়া যাক রিজিক বৃদ্ধির দোয়া, রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত সম্পর্কে বিস্তারিত।

ভূমিকা

ইসলামে রিজিক (জীবিকা) হল আল্লাহর একটি বিশেষ রহমত ও দান। প্রতিটি মানুষের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ রিজিক আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করেছেন এবং তিনি বিভিন্ন উপায়ে মানুষের রিজিকের ব্যবস্থা করেন। কোরআনে এবং হাদিসে রিজিক বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন দোয়া ও আমলের উল্লেখ পাওয়া যায়, যা আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থার প্রতিফলন।

আল্লাহর নিকট দোয়া করার মাধ্যমে এবং কোরআনের নির্দেশনা অনুসরণ করার মাধ্যমে একজন মুমিন তার জীবনে রিজিকের বরকত ও বৃদ্ধির আশা করতে পারেন।

রিজিক

রিজিক শব্দটি আরবি ভাষা থেকে এসেছে এবং এটি সাধারণত ইসলামী পরিভাষায় ব্যবহৃত হয়। এর মানে হলো জীবনের সমস্ত প্রয়োজনীয় উপকরণকে বোঝায় যা আল্লাহ তাঁর সৃষ্টির জন্য নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে খাদ্য, পানি, বস্ত্র, বাসস্থান এবং অর্থনৈতিক বা সম্পদ সব কিছুই অন্তর্ভুক্। রিজিক আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত এবং প্রত্যেক মানুষের জন্য নির্ধারিত মাত্রা অনুযায়ী প্রদত্ত।

রিজিকের ধারণা শুধুমাত্র অর্থ বা সম্পদ পর্যন্ত সীমাবদ্ধ নয় বরং এতে শান্তি, সুস্থতা, পরিবার, জ্ঞান ইত্যাদিও অন্তর্ভুক্ত থাকে। ইসলামে বিশ্বাস করা হয় যে রিজিক, আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত এবং তিনি প্রত্যেক মানুষের জন্য নির্দিষ্ট মাত্রায় রিজিক প্রদান করেন। 

মানুষকে তার রিজি্‌ হালাল ও সঠিক পথে অর্জন করতে উৎসাহিত করা হয় এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে বলা হয়, যে তিনি তাঁর সৃষ্টির জন্য যথেষ্ট রিজিক প্রদান করবেন।

রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত

রিজিক সম্পর্কে কোরআনে অনেক আয়াত রয়েছে যা আল্লাহর প্রদানকৃত রিজিক এবং তার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করে। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য আয়াত তুলে ধরা হলো:
রিজিক বৃদ্ধির দোয়া, রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
  • সূরা আল-বাকারাহ (২:২২):
"তিনি পৃথিবীকে তোমাদের জন্য বিছানা এবং আকাশকে ছাদ বানিয়েছেন এবং আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করে তার মাধ্যমে তোমাদের জন্য ফলমূলের রিজিকের ব্যবস্থা করেছেন। অতএব, তোমরা জেনে শুনে কাউকে আল্লহর সমকক্ষ দাঁড় করিও না।"
  • সূরা আল-বাকারাহ (২:১৫৫):
"আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি শুভ সংবাদ দাও ধৈর্যশীলগণকে।"
  • সূরা হুদ (১১:৬):
"পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী সকলের রিজিক এর দায়িত্ব আল্লাহরই। তিনি উহাদের স্থায়ী অস্থায়ী অবস্থিতি সম্বন্ধে অবহিত। সবই একটি সুস্পষ্ট কিতাবে লেখা আছে।"
  • সূরা বনি ইসরাঈল (১৭:৩০):
"নিশ্চই তোমার প্রতিপালক যার জন্য ইচ্ছা তার রিজিক বর্ধিত করেন এবং যার জন্য ইচ্ছা তা সীমিত করেন। তিনি তো তার বান্দাদের সম্বন্ধে সম্যক পরিজ্ঞাত, সর্বদ্রষ্টা।"
  • সূরা আশ-শুরা (৪২:২৭): 
"যদি আল্লাহ তাঁর সকল বান্দাকে প্রচুর রিযিক দিতেন, তবে তারা পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করত। কিন্তু তিনি যে পরিমাণ ইচ্ছা সে পরিমাণ নাযিল করেন। নিশ্চয় তিনি তাঁর বান্দাদের খবর রাখেন ও সবকিছু দেখেন।"
  • সূরা আর-রূম (৩০:৪০):
"আল্লাহই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তোমাদের রিজিক দান করেন, তারপর তোমাদের মৃত্যুবরণ করান এবং পরিশেষে তোমাদের পুনরুত্থিত করবেন। তোমাদের শরীকদের মধ্যে এমন কেউ আছে কি, যারা এ সব কাজের কোনো একটি করতে পারে? তারা যাদেরকে শরীক করে, আল্লাহ তা হতে পবিত্র, মহান।
  • সূরা আয-যারিয়াত (৫১:২২):
"আকাশে রয়েছে তোমাদের রিযিক এবং প্রতিশ্রুত সমস্ত কিছু।"
  • সূরা আয-যারিয়াত (৫১:৫৮):
"নিশ্চয় আল্লাহই সর্বোত্তম রিজিকদাতা এবং তিনি প্রবল, পরাক্রান্ত।"
  • সূরা আত ত্বালাক (৬৫:০৩):
"এবং তাঁকে তার ধারনাতীত উৎস থেকে দান করবেন রিজিক। যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভত করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। আল্লাহ তার ইচ্ছা পূরণ করবেনই। আল্লাহ সমস্ত কিছুর জন্য স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা।"
  • সুরা মুলক (৬৭:২১):
"এমন কে আছে, যে তোমাদেরকে জীবনোপকরণ দান করবেন, তিনি যদি তার জীবনোপকরণ বন্ধ করে দেন? বস্তুত তারা অবাধ্যতা ও সত্যবিমুখতায় অবিচল রয়েছে।"

এই আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায় যে, রিজিক আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত এবং তিনি প্রত্যেকের জন্য নির্ধারিত পরিমাণে রিজিক প্রদান করেন। এছাড়াও, মানুষকে সঠিক পথে রিজিক অর্জন করতে এবং আল্লাহর ওপর ভরসা রাখতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

রিজিক নিয়ে হাদিস

রিজিক সম্পর্কে হাদিসে অনেক আলোচনা করা হয়েছে। এখানে কিছু উল্লেখযোগ্য হাদিস তুলে ধরা হলো:
রিজিক বৃদ্ধির দোয়া, রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত_রিজিক নিয়ে হাদিস
  • ইবনু মাস্’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, সত্যবাদী ও সত্যবাদী হিসেবে স্বীকৃত আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ
"তোমাদের প্রত্যেকের জন্ম এভাবে হয় যে, তার মায়ের পেটে প্রথম চল্লিশ দিন সে শুক্ররূপে থাকে। এরপর তা পরবর্তী চল্লিশ দিন লাল জমাট রক্তপিন্ডে পরিণত হয়। তারপর তা পরবর্তী চল্লিশ দিনে মাংসপিন্ডে রূপ নেয়। তারপর আল্লাহ তা’আলা একজন ফেরেশতাকে চারটি বিষয় লিখে দেয়ার জন্য পাঠান। সে ফেরেশতা লিখে নেয় তার- (১) আমল (সে কি কি কাজ করবে), (২) তার মৃত্যু, (৩) তার রিযিক (জীবিকা) এবং (৪) সে সুখী হবে নাকি দুর্ভাগা হবে। এরপর আল্লাহ তার মধ্যে রূহ প্রবেশ করান। সে সত্তার কসম, যিনি ব্যতীত প্রকৃত আর কোন ইলাহ নেই! তোমাদের মধ্যে কেউ জান্নাতবাসীদের কাজ করতে থাকে, এমনকি তার ও জান্নাতের মধ্যে মাত্র এক হাত দূরত্ব থাকে, এমন সময় তার প্রতি তাকদীরের লিখা তার সামনে আসে। তখন সে জাহান্নামীদের কাজ করতে শুরু করে এবং জাহান্নামে প্রবেশ করে। আবার তোমাদের কেউ জাহান্নামীদের মতো কাজ করতে থাকে, এমনকি তার ও জাহান্নামের মধ্যে এক হাত দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে। এমন সময় তার তাকদীরের লিখা সামনে আসে, তখন সে জান্নাতীদের কাজ করতে শুরু করে এবং জান্নাতে প্রবেশ করে।" (সহীহ : বুখারী ৩২০৮, মুসলিম ২৬৪৩, আবূ দাঊদ ৪৭০৮, ইবনু মাজাহ ৭৬, তিরমিযী ২১৩৭, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬১৭৪, আহমাদ ৩৯৩৪)
এই হাদিস আমাদের শিক্ষা দেয় যে, মানুষের তাকদীর আল্লাহর হাতে এবং জীবনের কোনো পর্যায়ে তা পরিবর্তিত হতে পারে।
  • আবূ মূসা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, একদিন রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের মাঝে পাঁচটি বিষয়ের উল্লেখ করে, দাঁড়িয়ে বললেনঃ
১) আল্লাহ তা’আলা কখনো ঘুমান না।
২) ঘুমানো তাঁর জন্য শোভনীয়ও নয়।
৩) তিনি দাঁড়িপাল্লা উঁচু-নিচু করেন [সৃষ্টির রিজিক ও আমল নির্ধারণ করেন]।
৪) রাতের আমল দিনের আমলের আগে, আর দিনের আমল রাতের আমলের আগে তাঁর কাছে পৌঁছে যায়।
৫) আল্লাহ ও সৃষ্টিজগতের মধ্যে পর্দা হলো নূর (আলো)। যদি তিনি এ পর্দা সরিয়ে দিতেন, তবে তাঁর চেহারার নূর সৃষ্টিজগতের দৃষ্টির শেষ সীমা পর্যন্ত সবকিছুকেই জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে দিত।
(সহীহ : মুসলিম ১৭৯, ইবনু মাজাহ ১৯৬, আহমাদ ১৯৫৩০, সহীহ ইবনু হিব্বান ২৬৬, সহীহ আল জামি‘ ১৮৬০)

রিজিক এর বিষয়ে এই হাদিস থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহ কখনো রিজিক সংকুচিত করে তা কমিয়ে দেন, আবার কখনো তা বর্ধিত করে পাল্লা ভারী করেন। 

  • জাবির ইবন আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "যদি তোমরা আল্লাহর ওপর সঠিকভাবে ভরসা রাখো, তবে তিনি তোমাদেরকে সেইভাবে রিজিক দান করবেন যেমন তিনি পাখিদেরকে রিজিক দান করেন। তারা সকালে ক্ষুধার্ত অবস্থায় বের হয় এবং সন্ধ্যায় তৃপ্ত অবস্থায় ফিরে আসে।" - [তিরমিজি, হাদিস নম্বর: ২৩৪৪]
  • আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "আল্লাহ বলেন, 'হে আদম সন্তান, তোমরা আমার ইবাদতের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত কর, আমি তোমাদের হৃদয়কে সম্পদে পূর্ণ করবো এবং তোমাদের দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করবো। আর যদি তোমরা তা না কর, তবে তোমাদের হাতকে কর্মব্যস্ত করবো এবং তোমাদের দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেবো না।'" - [তিরমিজি, হাদিস নম্বর: ২৪৬৬]
  • আবুদ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ ’আয্‌যা ওয়াজাল্লা তাঁর সৃষ্টজীবের জন্য পাঁচটি বিষয় চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করে রেখেছেন এবং তা তাকদীরে লিখে দিয়েছেনঃ
১) তার আয়ুষ্কাল (জীবনকাল),
২) তার আমল (কর্ম),
৩) তার অবস্থান বা মৃত্যুস্থান,
৪) তার চলাফেরা (গতিবিধি),
৫) তার রিজিক (জীবিকা)।
(আহমাদ ২০৭২৯, ইবনু আবুল ‘আস্-এর তাহ্ক্বীকুস্ সুন্নাহ, ৩০৩)
  • ’আবদুল্লাহ ইবনু আবূ আওফা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে বললেন, "হে আল্লাহর রসূল! আমি কুরআনের কোন অংশ শিখে নিতে পারছি না। তাই আপনি আমাকে এমন কিছু শিখিয়ে দিন যা আমার জন্য যথেষ্ট হবে।"
উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, "তুমি এই দো’আটি পড়ো: ’আল্লাহ তা’আলা পবিত্র। সব প্রশংসা তাঁর। আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত আর কোন মা’বূদ নেই। আল্লাহ অতি বড় ও মহান। গুনাহ থেকে বাঁচার শক্তি ও ইবাদত করার তাওফীক আল্লাহর কাছেই।’"
তখন ঐ ব্যক্তি আরজ করলো, "হে আল্লাহর রসূল! এসব তো আল্লাহর জন্য। আমার জন্য কি?" উত্তরে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, "তোমার জন্য পড়বে: ’হে আল্লাহ! আমার ওপর রহম কর। আমাকে নিরাপদে রাখ। আমাকে হিদায়াত দান কর। আমাকে রিজিক দাও।’"
তারপর লোকটি নিজের দুই হাত দিয়ে এমনভাবে ইশারা করলো যেন সে পেয়েছে বলে বুঝালো। এটা দেখে রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, "এই ব্যক্তি তার দুই হাত কল্যাণ দিয়ে ভরে নিল।" (আবূ দাঊদ ৮৩২)
  • ইবনু ’আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দু’ সাজদার মধ্যে বলতেনঃ ’’আল্লা-হুম্মাগফিরলী ওয়ারহামনী ওয়া ’আ-ফিনী ওয়াহদিনী ওয়ারযুক্বনী’’- (অর্থাৎ- হে আল্লাহ! তুমি আমাকে মাফ কর। আমাকে রহম কর, হিদায়াত কর, আমাকে হিফাযাত কর। আমাকে রিযক্ব (রিজিক/রিযিক) দান কর)। (আবূ দাঊদ ৮৫০, তিরমিযী ২৮৪)

এই হাদিসগুলো থেকে বোঝা যায় যে, আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখা এবং সঠিক পথে চেষ্টা করা রিজিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। আল্লাহ তাঁর বান্দাদের রিজিকের দায়িত্ব নিয়েছেন এবং যারা তাঁর ইবাদত ও উপাসনা করে, তাদের রিজিকের পথে তিনি সহায়তা করেন।

রিজিক বৃদ্ধির দোয়া

রিজিক বৃদ্ধির জন্য ইসলামে অনেক দোয়া ও আমল রয়েছে। এখানে কিছু দোয়া তুলে ধরা হলো যা আপনি আপনার দৈনন্দিন জীবনে পাঠ করতে পারেন:
রিজিক বৃদ্ধির দোয়া, রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত

১. সূরা আল-ইখলাস (১১২:১-৪)

সূরা আল-ইখলাস বারবার পড়ার মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি হতে পারে।

২. সূরা ওয়াকিয়া পাঠ

প্রতি রাতে সূরা ওয়াকিয়া পাঠ করলে রিজিক বৃদ্ধি পায় বলে হাদিসে উল্লেখ আছে।

হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) যখন অন্তিম রোগশয্যায় শায়িত ছিলেন, তখন হজরত ওসমান (রা.) তাকে দেখতে গেলেন। এসময় তাদের মধ্যে নিম্নলিখিত কথোপকথন হয়:

হজরত ওসমান (রা.): আপনার অসুখটা কী?
হজরত ইবনে মাসউদ (রা.): আমার পাপসমূহই আমার অসুখ।
হজরত ওসমান (রা.): আপনার বাসনা কী?
হজরত ইবনে মাসউদ (রা.): আমার পালনকর্তার রহমত কামনা করি।
হজরত ওসমান (রা.): আমি আপনার জন্য কোন চিকিৎসক ডাকব কি?
হজরত ইবনে মাসউদ (রা.): চিকিৎসকই আমাকে রোগাক্রান্ত করেছেন।
হজরত ওসমান (রা.): আমি আপনার জন্য সরকারি বায়তুল মাল থেকে কোন উপঢৌকন পাঠিয়ে দেব কি?
হজরত ইবনে মাসউদ (রা.): এর কোন প্রয়োজন নেই।
হজরত ওসমান (রা.): উপঢৌকন গ্রহণ করুন, তা আপনার পর আপনার কন্যাদের উপকারে আসবে।
হজরত ইবনে মাসউদ (রা.): আপনি মনে করছেন, আমার কন্যারা দারিদ্র ও উপবাসে পতিত হবে। কিন্তু আমি এমন চিন্তা করি না। কারণ, আমি কন্যাদেরকে জোর নির্দেশ দিয়ে রেখেছি যে, তারা যেন প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করে।
আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, 'যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া পাঠ করবে, সে কখনও উপবাস করবে না।'
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি প্রতি রাতে সুরা ওয়াকিয়া তেলাওয়াত করবে তাকে কখনো দরিদ্রতা স্পর্শ করবে না।'

হজরত ইবনে মাসউদ (রা.) তার মেয়েদেরকে প্রত্যেক রাতে এ সুরা তেলাওয়াত করার আদেশ করতেন। (বাইহাকি: শুআবুল ঈমান-২৪৯৮)

৩. দোয়া ইউনুস

এই দোয়াটি বিভিন্ন সমস্যার সমাধান ও রিজিক বৃদ্ধির জন্য পাঠ করা যায়:

উচ্চারণ: "লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুন্তু মিনাজ্জালিমিন।"
অর্থ: "তুমি ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, তুমি পবিত্র, নিশ্চয়ই আমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত।"

৪. রাসুলুল্লাহ (সা.)- যে দোয়া পাঠ করতেন

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ব্যক্তি নবীজি (সা.)-কে রাতে এই দোয়া পাঠ করতে শুনলেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৫০০)

উচ্চারণ : আল্লাহুম্মাগফির লি জাম্বি, ওয়া ওয়াসসি লি ফি দারি, ওয়া বারিক লি ফিমা রাজাকতানি।
অর্থঃ হে আল্লাহ, আমার পাপ ক্ষমা করুন, আমার ঘর প্রশস্ত করে দিন এবং আপনি আমাকে যে রিজিক দান করেছেন তাতে বরকত দিন।

৫. বিসমিল্লাহ

প্রত্যেক কাজের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে উৎসাহিত করা হয়েছে, কারণ এতে বরকত ও রিজিকের বৃদ্ধি হয়।

৬. তসবিহ

উচ্চারণঃ ‘সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আজিম, আস্তাগফিরুল্লাহ।’
অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ পবিত্র, এবং সমস্ত প্রশংসা তাঁরই জন্য; আল্লাহ পবিত্র, যিনি মহান এবং উচ্চতম; এবং সমস্ত প্রশংসা তাঁরই জন্য, আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

এই দোয়াটি ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বরকতময়। প্রতিদিন সুবহে সাদিকের সময়ে ১০০ বার পাঠ করলে আয়-উপার্জনে বরকত লাভ হয়।

৭. তওবা-ইস্তিগফার

তওবা এবং ইস্তিগফার করার ফলে বান্দার রিজিক বৃদ্ধি পায়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন:

"এরপর আমি বলেছি: তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধি করবেন, তোমাদের জন্য উদ্যান সৃষ্টি করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন।" সূরা নূহ (১০-১২)

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত তওবা ও ইস্তিগফার করবে, আল্লাহ–তাআলা তাকে সংকট থেকে মুক্তির পথ দেখাবেন, তার সকল দুশ্চিন্তা দূর করবেন এবং এমন উৎস থেকে রিজিকের ব্যবস্থা করবেন যা সে কল্পনাও করতে পারেনি।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১৫১৮; ইবনে মাজাহ, হাদিস: ৩৮১৯; মুস্তাদরাকে হাকেম, খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৯১, হাদিস: ৭৬৭৭)

রিজিক বৃদ্ধির আমল

রিজিক বৃদ্ধির জন্য নিম্নলিখিত আমলগুলো করা যেতে পারে:
  • তওবা ও ইস্তিগফার: নিয়মিতভাবে তওবা করা ও আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করা রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম প্রধান মাধ্যম।
  • সালাত আদায়: নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা এবং তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া।
  • সৎ কাজ: সদকা, যাকাত ও দান-খয়রাত করা, কারণ দান করার ফলে আল্লাহ তাআলা রিজিক বৃদ্ধি করেন।
রিজিক বৃদ্ধির দোয়া, রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত
  • সুরা ওয়াকিয়াহ পাঠ করা: নিয়মিত সুরা ওয়াকিয়াহ পাঠ করা, হাদিসে এসেছে যে, এটি রিজিক বৃদ্ধিতে সহায়ক।
  • আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল (নির্ভরতা) রাখা: আল্লাহর উপর পূর্ণ বিশ্বাস ও নির্ভরতা রাখা এবং সকল কাজে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা।
  • আল্লাহর কাছে দোয়া করা: রিজিক বৃদ্ধির জন্য আল্লাহর কাছে নিয়মিত দোয়া করা। যেমন, "রব্বি ইন্নি লিমা আনযালতা ইলাইয়া মিন খাইরিন ফকীর" (সূরা আল-কাসাস, আয়াত: ২৪)।
  • হারাম থেকে বেঁচে থাকা: হারাম কাজ ও হারাম উপার্জন থেকে বেঁচে থাকা, কারণ হারাম রিজিক বরকতকে ধ্বংস করে।
  • পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা: পিতা-মাতার সেবা ও তাদের প্রতি সদাচরণ করা রিজিক বৃদ্ধির অন্যতম উপায়।
  • আল্লাহর নেয়ামতগুলোর জন্য শুকরিয়া আদায় করা: আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতগুলোর জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, কারণ শুকরিয়া আদায়ের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি হয়।
  • সুরা আল-মুলক পাঠ করা: নিয়মিত সুরা আল-মুলক পাঠ করা, হাদিসে এসেছে যে, এটি রিজিক বৃদ্ধিতে সহায়ক।
এই আমলগুলো নিয়মিতভাবে পালন করলে ইনশাআল্লাহ রিজিক বৃদ্ধির জন্য সহায়ক হবে।

মন্তব্য

"রিজিক বৃদ্ধির দোয়া, রিজিক সম্পর্কে কোরআনের আয়াত" পোস্ট সম্পর্কিত মন্তব্যের জন্য নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন।

ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url