টেনশন দূর করার উপায়, অতিরিক্ত টেনশন হলে কি করব

টেনশন হল মানসিক চাপ বা উদ্বেগ, যা জীবনের নানা পরিস্থিতিতে সৃষ্টি হয়। অতিরিক্ত টেনশন শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তাই টেনশন দূর করার উপায় জানা এবং তা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা অত্যন্ত জরুরি। এই পোস্টে টেনশন কী, এর ক্ষতি এবং অতিরিক্ত টেনশন হলে কি করা উচিত সে সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
টেনশন দূর করার উপায়, অতিরিক্ত টেনশন হলে কি করব
চলুন যেনে নেওয়া যাক "টেনশন দূর করার উপায়, অতিরিক্ত টেনশন হলে কি করব" সম্পর্কে বিস্তারিত।

ভূমিকা

টেনশন এক প্রকার মানসিক চাপ যা বিভিন্ন কারনে হয়ে থাকে। বর্তমানে মানুষের জীবনে টেনশন বা মানসিক চাপ একটি সাধারণ ও স্বাভাবিক সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন মানুষ চাকরি, পড়াশোনা, পারিবারিক দায়িত্ব, আর্থিক সমস্যা ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে মানুষ টেনশন বা চাপের সম্মুক্ষিণ হয়। টেনশন মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

এটি যদি সঠিক ভাবে প্রতিরোধ না করা যায় তাহলে আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর খুব খারাপ প্রভাব ফেলতে পারে।

অতিরিক্ত টেনশন হওয়ার লক্ষণ

আমরা অতিরিক্ত টেনশন হওয়ার লক্ষণ গুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করতে পারি যেমন- 
  1. শারীরিকভাবে 
  2. মানসিকভাবে 
  3. আচরণগতভাবে
এই লক্ষণগুলো নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো-

১। শারীরিক লক্ষণ

  • ধড়ফড় করা: অতিরিক্ত টেনশনের ফলে মানুষের হাটবিট বেড়ে যায় এবং অস্বাভাবিকভাবে বুক ধড়ফড়ানো শুরু করে।
  • মাথাব্যথা হওয়া: যখন কোন বিষয়ে অতিরিক্ত টেনশন করা হয় তখন প্রায়ই মাথা ব্যথা শুরু হয়।
  • হজম সমস্যা: অতিরিক্ত টেনশনের ফলে অনেক সময় বদহজম, অ্যাসিডিটি এবং বমি বমি ভাব হয়ে থাকে।
  • পেশীর টান বা ব্যথা অনুভব: অতিরিক্ত টেনশন এর ফলে বিশেষ করে ঘাড়, কাঁধ ও পিঠে ব্যথা অনুভব হয়।
  • ওজন হ্রাস: অতিরিক্ত টেনশনের ফলে আস্তে আস্তে শরীরের ওজন হ্রাস পেতে থাকে।
  • শ্বাস কষ্ট হওয়া : অনেক সময় অতিরিক্ত টেনশন করার ফলে শ্বাস কষ্টের সমস্যা দেখা দেয়।

২। মানসিক লক্ষণ

  • চিন্তা বেড়ে যাওয়া: অতিরিক্ত চিন্তার ফলে উদ্বেগ ও অস্বস্তির অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া।
  • অপেক্ষা করতে না পারা: অতিরিক্ত টেনশনের ফলে যে কোন বিষয়ে অপেক্ষা করতে অনেক কষ্টকর মনে হয়।
  • ভয়ের অনুভূতি হওয়া: অতিরিক্ত টেনশনের ফলে অযোক্তিক ভয় বা আশস্কা সৃষ্টি হয়ে থাকে।
  • মুড পরিবর্তন: অতিরিক্ত টেনশনের ফলে মানুষের মুড পরিবর্তন হতেই থাকে।

৩। আচরণগত লক্ষণ

  • এড়িয়ে চলা: অতিরিক্ত টেনশনের ফলে কোন কাজ বা মানুষের সাথে কথা বলার মতো মনোভাব হারিয়ে ফেলা।
  • খারাপ অভ্যাস বৃদ্ধি পাওয়া: অতিরিক্ত টেনশনের ফলে যারা ধূমপান, মদ্যপান বা ড্রাগ করে থাকে তা সেবনের মাত্রাটি বেড়ে যাওয়া।
  • কাজের ক্ষমতা কমে যাওয়া: অতিরিক্ত টেনশনের ফলে যে কোন কাজ করার মনোভাব বা ক্ষমতা কমে যাওয়া।
  • খাবার গ্রহণের আগ্রহ হ্রাস: অতিরিক্ত টেনশনের ফলে যে কোন খাবার গ্রহণ করতে মন না চাওয়া।
  • সামান্য বিষয়ে রেগে যাওয়া: অতিরিক্ত টেনশনের ফলে যে কোন ছোট বিষয়ে অতিরিক্ত রাগ সৃষ্টি হওয়া।

টেনশন দূর করার উপায়

টেনশন বা চাপ মানুষের জীবনের একটি আরেকটির সাথে অতপ্রোতভাবে জড়িত। বর্তমানে টেনশন ছাড়া ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন একটি ব্যাপার। মানসিক চাপ মানুষের শরীরে হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে থাকে। টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য কিছু উপায় নিম্নে আলোচনা করা হলো :
টেনশন দূর করার উপায়

১। মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম  

মানসিক চাপ দূর করতে মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম অত্যান্ত কার্যকরী ভূমিকা রাখে। মেডিটেশন এবং যোগব্যায়াম মানুষের মনকে শান্ত রাখে এবং মনোযোগ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। নিয়মিত মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম করলে মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক। 

কার্নেগী মেলন বিশ্ববিদ্যালয় এর এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, “ টানা ৩ দিন ২৫ মিনিট করে মেডিটেশন করলে তা হতাশা এবং দুশিন্তা অনেকখানিই দূর করতে সহায়তা করে।” নিয়মিত মেডিটেশন ও যোগব্যায়াম করলে মানুষ সাধারণত কম শারীরিক সমস্যা বা প্রদাহে ভোগেন।

২। শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম 

টেনশন কমানোর জন্য শ্বাস প্রশ্বাসের ব্যায়াম একটি প্রাচীন এবং কার্যকরী পদ্বতি। গভীরভাবে শ্বাস গ্রহণ করেন এবং আস্তে আস্তে শ্বাস ত্যাগ করেন। যার ফলে মানুষের মনকে শান্ত রাখে এবং শরীরের অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে তোলে যা টেনশন দূর করতে সাহায্য করে।

৩। পাওয়ার ন্যাপ বা পর্যাপ্ত ঘুম 

বর্তমানে সকল বয়সীদের না ঘুমিয়ে থাকার প্রবণতা বেশ লক্ষ করা যায়। প্রতিটি মানুষকে সুস্থ থাকতে হলে প্রতিদিন আট ঘন্টা ঘুমাতে হবে। পর্যাপ্ত ঘুম মানুষের Stress Looser কমাতে সাহায্য করে। তাই যখন খুন টেনশন হবে তখন একটু নিরিবিলি জায়গা দেখে পাওয়ার ন্যাপ নিয়ে নিতে হবে। এতে টেনশন অনেকটা দূর হবে।

৪। নিয়মিত ব্যায়াম 

নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর ও মন দুইটাই ভালো থাকে। শারীরিক ব্যায়াম আমাদের শরীরে এন্ডোরফিন হরমোনের নিঃসরণ বৃদ্ধি করে থাকে যা প্রাকৃতিকভাবে টেনশন কমাতে ব্যাপক সাহায্য করে। 

সকল প্রকার ব্যায়াম যেমন সাইকেল চালানো, হাঁটা, দৌড়ানো এবং যোগব্যায়াম এরমত শারীরিক কার্যকলাপ আমাদের মন ও শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে এবং সাথে সাথে টেনশন ও কমাতে সাহায্য করে।

৫। স্বাস্থ্যকর খাদ্যের অভ্যাস করা 

মানুষ সুষম খাদ্য গ্রহণের ফলে শরীর ও মন ভালো থাকে। বিভিন্ন প্রকার সবজি, ফল, প্রোটিন, এবং পানি সমৃদ্ধ খাবার টেনশন কমাতে সাহায্য করে থাকে। তবে অতিরিক্ত ক্যাফেইন এবং চিনি খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৬। প্রাণ খুলে হাসতে হবে 

নিয়মিত আমোদ প্রমোদ প্রাণ খুলে হাসার মাধ্যমে হৃদস্পন্দনের হার বাড়িয়ে দেয়। ২০১০ সালে প্রকাশিত আমেররিকান জার্নাল অফ কার্ডিওলজির তথ্যানুসারে প্রাণ খুলে হাসার ফলে দেহের সংবহনতন্ত্র বা বিভিন্ন নালীর কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই ঠোটের কোণে সব সময় এক চিলতে হাসি রাখতে হবে যার ফলে টেনশন অনেকাংশে দূর হয়।

৭। বন্ধুদের সাথে সময় কাটান 

মানুষ কখনই একাকি বসবাস করতে পারেনা। আর সব সময় একাকী থাকলে মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি হৃদযন্ত্রেরও ক্ষতি করতে পারে। তাই একাকি সময় অতিবাহিত না করে বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোর মাধ্যমে টেনশন অনেক কমে যায়।

৮। নির্ভুল হওয়ার চিন্তা বাদ দিতে হবে 

সব ধরনের কাজ যে নির্ভুল হওয়া লাগবে তা নয়। মানুষ ভুলের উর্ধে নয়। ভুল মানুষের হতেই পারে এটাই স্বাভাবিক। অতিরিক্ত খুঁতখুঁতে মনোভাব মানুষকে শেষ পর্যন্ত ব্যক্তি চরিত্রে শত্রুতার মনোভাব সৃষ্টি করে। তাই সব বিষয়ে শতভাগ নির্ভুল হওয়ার চিন্তা বাদ দিলে টেনশন অনেক কমে যাবে।

৯। বাস্তববাদী হতে হবে

ভবিষ্যতে কি ঘটতে পারে এ আশষ্কায় অনেকে অযথা চিন্তিত হয়ে পড়ে। এক্ষেত্রে আমাদের মনে রাখতে হবে জীবন মানেই কিছু না কিছু সমস্যা থাকবে এবং এমনও কিছু ঘটনা ঘটতে পারে যা জীবনে কখনও কাম্য নয়। তবে সব সমস্যার কিন্তু সমাধানের উপায় আছে। তাই সমস্যাকে নিয়ে টেনশন না করে সব সময় বাস্তববাদী হলে টেনশন অনেক কমে যাবে।

১০। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে হবে 

নিজেকে সব সময় কোন না কোন কাজের ভিতরে ব্যস্ত রাখতে হবে। সব সময় দুশ্চিন্তাকে মাথা থেকে দূরে রেখে ব্যস্ত থাকতে হবে। কথায় আছে “অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা” কথাটি শতভাগ সত্য। তাই টেনশন থেকে দূরে থাকলে হলে নিজেকে সব সময় কোন না কোন কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে।

অতিরিক্ত টেনশন হলে করণীয়

প্রতিটি মানুষের জন্য অতিরিক্ত টেনশন বা চাপ মানসিক ও শারীরিক ভাবে ভয়াবহ ক্ষতিকর। অতিরিক্ত টেনশন হলে কি করতে হবে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো।

১। দুশ্চিন্তা বা টেনশনকে প্রশ্রয় না দেওয়া 

মানুষের মস্তিস্কে যে কোন প্রকার নেতিবাচক চিন্তা বা দুশ্চিন্তা একবার ঢুকলে সেটা আরও নেতিবাচক চিন্তা মাথায় আসে, যা শেষ পর্যন্ত মানুষকে পাগল করেই ছাড়ে। সেই জন্য প্রথম থেকেই কোন প্রকার নেতিবাচক চিন্তা আসলে সেটা নিয়ে অযথা না ভেবে সাথে সাথে অন্যদিকে মনোনিবেশ করতে হবে অথবা অন্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত করে ফেলতে হবে।

২। সামাজিক ভাবে মেলামেশা বাড়াতে হবে

সামাজিক মেলামেশা একজন মানুষকে দুশ্চিন্তা, অশান্তি, অস্থিরতা, মন খারাপ ইত্যাদি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অনেক সাহায্য করে থাকে। যেই সব মানুষের বন্ধুবান্ধব বেশি বা নানা ধরনের মানুষের সাথে মেলামিশা বেশি করে থাকে তাদের দুশ্চিন্তা বা টেনশন অনেকটাই কম থাকে। 

মাঝে মধ্যে সপ্তাহের কাজের ভিড়ে কিছুটা সময় রাখতে হবে বন্ধু কিংবা আত্নীয় স্বজন এর সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন সময় কাটানোর জন্য। প্রতিদিন নিজের জন্য কিছুটা সময় রাখতে হবে যেই সময়ে কোন প্রকার কাজ বা কোন প্রকার দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত থাকা যাবে না। 

মন যেই ভাবে সময় কাটাতে চাইবে সেই ভাবেই সময় কাটাতে হবে এতে করে একজন মানুষের অনেক টেনশন বা দুশ্চিন্তা থেকে দূরে থাকতে পারবে।

৩। ছোট খাটো বিষয়ে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানো 

জীবনের নানা কিছু সেটা হোক না সন্তানের পড়াশোনা, বাসার গৃহকর্মীর কাজ, জীবনসঙ্গীর সঙ্গে অথবা যে কোন কিছু সব কিন্তু আপনার চাহিদা বা প্রত্যাশার মতো হবে না। অনেক কিছু পাওয়ার সঙ্গে নানা কিছু না পাওয়াও থাকবে। আর এটাই স্বাভাবিক তাই আমাদের মনকে ছোটখাটো ব্যর্থতা গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত রাখতে হবে। 

ফলে অনেক কিছুই দেখা যাবে খুব সহজ হয়ে যাবে। এর সাথে সাথে আমাদের জীবনের ইতিবাচক দিকগুলো সেটা যত ছোটই মনে হোক না কেন তাতে মনোযোগ দিতে হবে যার ফলে মানসিক শক্তি পাওয়া যাবে। তাই আমাদের জীবনের ইতিবাচক বিষয়ের প্রতি এবং নিজের বা অন্যদের ব্যর্থতা বা ছোটখাটো ভুলগুলো যতোটুকু সম্ভব উপেক্ষা করে চলতে হবে।

কি খেলে অতিরিক্ত টেনশন দূর করা যায়

মানুষের জীবনে টেনশন হলো একটি দৈনন্দিন সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে কিছু খাদ্যাভাসের পরিবর্তন করতে পারলে অতিরিক্ত টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। এমন কিছু খাবার রয়েছে যা মানুষের মস্তিস্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধি, শরীরকে শিথিল এবং মনোভাব উন্নত করতে যথাযথ সাহায্য করে থাকে। নিম্নে কিছু খাবারের তালিকা নিয়ে আলোচনা করা হলো-
কি খেলে অতিরিক্ত টেনশন দূর করা যায়
  • মাছ: ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছগুলো যেমন: সালমন, টুনা, ম্যাকারেল এই সব মাছগুলো খেলে মানুষের মস্তিস্কের কার্যকারিতা উন্নত করতে এবং মানসিক চাপ হ্রাস করতে সাহায্য করে।
  • সবুজ শাক সবজি: ভিটামিন বি, ফোলেট এবং আয়রন সমৃদ্ধ সবজি যেমন: ব্রকলি, পালং শাক, কেল এই সকল সবজি খেলে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করতে সাহায্য করে থাকে।
  • বাদাম ও বীজ: বাদাম, আখরোট, চিয়া সিড, ফ্ল্যাক্সসিড এই খাদ্যে প্রচুর পরিমানে ওমেগা-৩ এবং ম্যাগনেসিয়াম আছে যা মানুষের শরীরকে শিথিল করতে এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে থাকে।
  • ফল: বেরি, কলা,আপেল ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর যা মানুষের শরীরের অক্সিডেটিভ স্ট্রেস হ্রাস করতে সাহায্য করে থাকে।
  • অ্যাভোকাডো: মস্তিস্কের কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য অ্যাভোকাডো খাওয়ার প্রয়োজনীয়তাও অনেক এতে পটাসিয়াম এবং মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে।
  • দুধ ও দই: দুধ ও গ্রীক দই প্রচুর পরিমানে প্রোবায়োটিকস থাকে যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করতে এবং মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে।
  • ডার্ক চকলেট: ডার্ক চকলেটে রয়েছে ৭০% এর উপরে কোকোয়াযুক্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা মানুষের মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে এবং মেজাজ উন্নত করে।
  • পূর্ণ শস্য: ওটস, ব্রাউন রাইস, কোয়ানোয়া যাতে কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ যা আস্তে আস্তে শক্তি সরবরাহ করে এবং মস্তিককে ভালো রাখে।
  • সবুজ চা: সবুজ চা বলতে গ্রীণ টিকে বুঝায় এত প্রচুর পরিমানে এল-থিয়ানাইন রয়েছে যা মানসিক চাপ ও মনকে শান্ত রাখতে সাহায্য করে।
  • এছাড়াও ভিটামিন বি কমপ্লেক্স যুক্ত খাবার ডিম, মাংস, ডার্কলিফি গ্রিসন, বীজ খাওয়া যেতে পারে এতে করে মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত এবং শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করবে। 
  • ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল জাতীয় খাবার গুলো এড়িয়ে চলতে হবে। কারন অতিরিক্ত ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল মানুষের টেনশন বাড়াতে পারে। 

টেনশন দূর করার ঔষধের নাম বা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির ঔষধ

টেনশন বা চিন্তা মানুষের থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কিছু ঔষুধ সেবন করলে মানুষের টেনশন বা চিন্তা দূর করা সম্ভব। সর্ব প্রথম টেনশন থেকে মুক্তির জন্য কি ঔষুধ খাওয়া উচিৎ তা আগে ডাক্তার বা মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের কাছে পরামর্শ নেওয়াটা বেশি জরুরি। নিম্নে টেনশন থেকে মুক্তির জন্য কিছু ঔষুধ এর নাম নিয়ে আলোচনা করা হলো:
  • Benzodiazepines
যেমন : Alprazolam (Xanax), Diazepam (Valium), Lorazepam (Ativan)
  • Selective Serotonim Reuptaka Inhibitors (SSRIs) 
যেমন : Fluoxetine (Prazac), Sertraline (Zoloft), Paroxetine (Paxil)
  • Serotonin- Norepinephrine Reuptaka Inhibitors (SNRIs) 
যেমন : Venlafaxime (Effexor), Duloxetine (Cymbalta).
  • Beta-Blockers
যেমন : Propranolol (Inderal)
  • Tricyclic Antidepressants (TCAs) 
যেমন : Amitriptyline, Nortripty line

উপরোক্ত ঔষুধগুলো সাধারণত কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয় এবং দীর্ঘমেয়াদী কার্যকর হয়ে থাকে।

তবে ঔষুধ ছাড়াও বিভিন্ন উপায়ে টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়া যায় যেমন: ব্যায়াম, মেডিটেশন, পর্যাপ্ত ঘুম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, সামাজিক সংযোগ, সৃজনশীল কার্যক্রম, সময় ব্যবস্থাপনা, পেশাদার সহায়তা ইত্যাদি নিয়মিত করলে মানুষের জীবনে টেনশন অনেক হ্রাস পায়।

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায়

দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির জন্য ইসলামিক অনেক উপায় রয়েছে। যা নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।

১। তাওয়াককুল (আল্লাহর ওপর ভরসা)

মহান আল্লাহর ওপর ভরসা রাখাই হলো তাওয়াককুল এবং নিজের সমস্ত কাজ ও সমস্যার সমাধান আল্লাহর হাতে সঁপে দেওয়া। ইসলাম ধর্মে তাওয়াককুলকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন, “যে আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট” (সূরা আত-তালাক, আয়াত-৩)। 

তাওয়াককুল এর মাধ্যমে আমরা আমাদের জীবনের সব সমস্যার সমাধানের জন্য আল্লাহর ওপর আস্থা রাখতে পারি। যার ফলে আমাদের মনোবল বৃদ্ধি হবে এবং এর সাথে সাথে দুশ্চিন্তা কমে যাবে।

২। দুআ ও ইস্তিগফার করা (ক্ষমা প্রার্থনা)

দুআ ও ইস্তিগফার এর মাধ্যমে মানুষের মানসিক চাপ কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। আমাদের উচিৎ আল্লাহর কাছে আমাদের সমস্যা ও দুশ্চিন্তা নিয়ে দুআ করা। কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব” (সূরা গাফির, আয়াত ৬০)। 

মূলত ইস্তিগফার বা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি মাধ্যম। ইস্তিগফার এর ফলে আল্লাহপাক আমাদের দুঃখ কষ্ট দূর করেন এবং আমাদের মনের শান্তি দেন।

৩। সালাত (নামাজ)

নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা মানসিক শান্তির একটি অন্যতম মাধ্যম। একমাত্র নামাজের মধ্যে দিয়ে আল্লাহর সাথে আমাদের সম্পর্ক মজবুত হয়ে থাকে এবং আমাদের মনের শান্তি বৃদ্ধি পায়। কোরআনে আল্লাহপাক বলেন, “নিশ্চয়ই নামাজ নিষ্ঠার সাথে প্রতিষ্ঠিত করা মুমিনদের উপর ফরজ করা হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ে” (সূরা আন-নিসা, আয়াত ১০৩)। তবে বিশেষ করে তাহাজ্জুদ নামাজ দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে। তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছ থেকে বরকত ও শান্তি পাই।

৪। তাফসির ও কুরআন পাঠ

কুরআন পাঠ করা এবং এর অর্থ ও তাফসির বোঝা টেনশন কমাতে সাহায্য করে থাকে। কুরআনে বলা হয়েছে, “আমি কুরআনে যা অবতীর্ণ করেছি তা মুমিনদের জন্য রহমত ও শেফা” (সূরা আল ইসরা, আয়াত ৮২)। তবে কিছু বিশেষ আয়াত আছে যেমন আল-ফাতিহা, সূরা ইয়াসিন, সূরা আল-ইখলাস ইত্যাদি প্রতিদিন পাঠ করলে আমাদের মনকে শান্ত করে এবং আল্লাহর রহমত পেতে সাহায্য করে।

৫। জিকির ও তাসবিহ

জিকির অর্থ হলো আল্লাহকে স্মরণ করা। প্রতিদিন জিকির করলে মানুষের মনের শান্তি এবং আল্লাহর সন্তষ্টি লাভ করা যায়। হাদিসে বলা হয়েছে, “তোমাদের হৃদয়কে প্রশান্তি দিবে” (মুসলিম শরীফ)। তবে কিছু বিশেষ জিকির যেমন- সুবহানাল্লাহ, আলহামদুল্লিাহ, আল্লাহ আকবর এবং লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এইগুলো নিয়মিত পাঠ করলে মনে অনেক শান্তি আসে।

৬। সদকা ও দান

বিভিন্ন প্রকার সদকা ও দান আমাদের মনে প্রশান্তি দেয় এবং আল্লাহর রহমত পেতে সাহায্য করে। কুরআনে আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা যা কিছু খরচ কর, আল্লাহ তা পূর্ণরূপে প্রতিদান দেবেন” (সূরা সাবা, আয়াত ৩৯)। দান করা যে শুধু গরীব মানুষদের সাহায্য করা না, এটি আমাদের মানসিক প্রশান্তিও বটে। আল্লাহর পথে দান করা আমাদের মনকে প্রশান্ত করে এবং আল্লাহর কৃপা প্রাপ্ত হতে সাহায্য করে।

৭। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন মানুষ শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকে। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাদ্যভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম, নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম মানুষকে টেনশন থেকে দূরে রাখে। হাদিসে বলা হয়েছে, “তোমাদের শরীরেরও তোমাদের উপর অধিকার আছে” (বুখারী শরীফ)।

এই সকল ইসলামিক প্রন্থাগুলো অনুসরণ করে চলতে পারলে মানুষের টেনশন বা দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব। তাই সব সময় আল্লাহর প্রতি ভরসা এবং ঈমান দৃঢ় রাখা আমাদের জন্য একান্ত প্রয়োজন।

টেনশন দূর করার দোয়া

মানুষের অতিরিক্ত টেনশন বা দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য ইসলামিক দোয়াগুলি অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে। নিম্নে কিছু বিশেষ দোয়া ও তাদের অর্থ সহ আলোচনা করা হলো:

১। দোয়া হযরত ইউনুস (আঃ) এর দোয়া

হযরত ইউনুস (আঃ) যখন মাছের পেটে আটকা পড়েছিলেন তখন তিনি এই দোয়াটি করেছিলেন। এই দোয়া মানুষের মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা কমাতে সাহায্য করে।

উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জোয়ালিমিন।

অর্থ : আপনার সত্তা ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই, আপনি পবিত্র; নিশ্চয় আমি যালিমদের অন্তর্ভুক্ত।

২। দোয়া ইস্তিগফার

এই দোয়াটি আমাদের পাপ মোচন করে এবং আল্লাহর রহমত প্রাপ্ত করে টেনশন বা দুশ্চিন্তা দূর করতে সাহায্য করে।

উচ্চারণ : আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি জাম্বিও ওয়া আতুবু ইলাইহি।

অর্থ : আমি মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি, যিনি ছাড়া কোন উপাস্য নেই, যিনি জীবিত ও চিরস্থায়ী এবং আমি তার কাছে তওবা করছি।

৩। সূরা ফাতিহা

সূরা ফাতিহা পড়া আমাদের প্রতিদিনের নামাজের অংশ এবং এই সূরাটি মানুষের মানসিক শান্তি দিতে সাহায্য করে।

উচ্চারণ : 
আলহামদু লিল্লাহির রব্বিল আ-লামি-ন।
আররহমা-নির রাহি-ম।
মা-লিকি ইয়াওমিদ্দি-ন।
ইয়্যা-কা না’বুদু ওয়া ইয়্যা-কা নাসতাই’ন।
ইহদিনাস সিরাতা’ল মুসতাকি’ম।
সিরাতা’ল্লা যি-না আনআ’মতা আ’লাইহিম গা’ইরিল মাগ’দু’বি আ’লাইহিম ওয়ালা দ্দ-ল্লি-ন।

অর্থ : সমস্ত প্রশংসা বিশ^জগতের প্রতিপালক আল্লাহরই। যিনি পরম করুণাময়, পরম দয়াময়। বিচার দিনের মালিক। আমরা তোমারই উপাসনা করি, তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। তুমি আমাদের চালিত করো সঠিক পথে। তাদের পথে, যাদের তুমি অনুগ্রহ দান করেছ। যারা ( তোমার) রোষে পতিত হয়নি, পথভ্রষ্ট হয়নি।

উপসংহার

মানুষ যতদিন বেঁচে থাকবে ততদিন মানুষের টেনশন থাকবেই। মানুষকেই টেনশন নিয়েই সারা জীবন বেঁচে থাকতে হবে। উপরোক্ত আলোচনা থেকে একজন মানুষ টেনশন থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য সঠিক দিক নির্দেশনা পাবে।

"টেনশন দূর করার উপায়, অতিরিক্ত টেনশন হলে কি করব" পোস্ট সম্পর্কিত মন্তব্যের জন্য নিচের কমেন্ট বক্সে কমেন্ট করতে পারেন।

ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url