বাইনান্স একাউন্ট খোলার নিয়ম, বাইনান্স থেকে আয়
বাইনান্স একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং বাইনান্স থেকে আয় সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হলে আপনি সঠিক জায়গায় এসেছেন। বাইনান্স হলো বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ, যেখানে ব্যবহারকারীরা সহজেই বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে, বিক্রি করতে এবং ট্রেড করতে পারেন। এই পোস্টে, মূলত বাইনান্স একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং বাইনান্স থেকে আয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
চলুন যেনে নেওয়া যাক "বাইনান্স একাউন্ট খোলার নিয়ম, বাইনান্স থেকে আয়" সম্পর্কে বিস্তারিত।
১. ভূমিকা
বাইনান্স একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং বাইনান্স থেকে আয় বর্তমানে ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে সবচেয়ে আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম। যারা ক্রিপ্টো ট্রেডিং করতে চান, তাদের জন্য বাইনান্স একটি জনপ্রিয় ও বিশ্বস্ত প্ল্যাটফর্ম। বাইনান্সে ট্রেডিং শুরু করতে হলে প্রথমে আপনাকে একটি বাইনান্স একাউন্ট খুলতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি খুবই সহজ এবং কিছু ধাপ অনুসরণ করে আপনি দ্রুতই আপনার একাউন্ট খুলতে পারবেন।
বাইনান্স একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জানার পর, আপনি বাইনান্সের বিভিন্ন ট্রেডিং অপশন যেমন স্পট ট্রেডিং, মার্জিন ট্রেডিং, ফিউচার ট্রেডিং ইত্যাদি ব্যবহার করে আয় করতে পারবেন। বিশেষ করে, যারা নতুন ট্রেডার তাদের জন্য বাইনান্স একাউন্ট খোলার নিয়ম এবং বাইনান্স থেকে আয় করার পদ্ধতি সহজবোধ্য ও কার্যকরী।
২. বাইনান্স
বাইনান্স হলো বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম। এটি ২০১৭ সালে চ্যাংপেং ঝাও (CZ) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। বাইনান্স ইউজারদের জন্য একাধিক সুবিধা প্রদান করে থাকে, যার মধ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনা-বেচা, ট্রেডিং, স্টেকিং, লোনিং এবং আরও অনেক কিছু অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ব্যবহারকারীদের জন্য বাইনান্স প্ল্যাটফর্মটি, ক্রিপ্টোকারেন্সির এক বিশাল ভাণ্ডার এবং বিভিন্ন ট্রেডিং জুটি প্রদান করে থাকে।
২. বাইনান্স এর সুবিধা
২.১. নিরাপত্তা
বাইনান্স ব্যবহারকারীদের অর্থ এবং ডেটা নিরাপত্তার জন্য উন্নত সিকিউরিটি মেকানিজম ব্যবহার করে। এর মধ্যে মাল্টি-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন এবং কোল্ড স্টোরেজের মত নিরাপত্তা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
২.২. ব্যবহারকারীদের জন্য সহজ ইন্টারফেস
বাইনান্স এর ইন্টারফেস ব্যবহারকারীদের জন্য সহজ এবং ব্যবহার-বান্ধব। নতুন এবং অভিজ্ঞ ট্রেডারদের জন্য আলাদা মোড রয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের দক্ষতা অনুযায়ী প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে সহায়তা করে।
২.৩. বিস্তৃত ক্রিপ্টোকারেন্সি সমর্থন
বাইনান্স এ প্রায় সব ধরনের প্রধান ক্রিপ্টোকারেন্সি উপলব্ধ রয়েছে, যেমন বিটকয়েন, ইথেরিয়াম, লাইটকয়েন ইত্যাদি। এছাড়া ছোট এবং নতুন প্রজেক্টের কয়েনও ট্রেড করা যায়।
২.৪. বাইনারি অপশন ও ফিউচার ট্রেডিং
বাইনান্স ব্যবহারকারীদের জন্য ফিউচার এবং অপশন ট্রেডিং এর সুবিধা প্রদান করে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য অনেক বেশি মুনাফার সুযোগ তৈরি করে।
৩. বাইনান্স একাউন্ট খোলার নিয়ম
বাইনান্স একাউন্ট খোলা ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং শুরু করার জন্য একটি প্রয়োজনীয় ধাপ। বাইনান্স বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ প্ল্যাটফর্ম, যেখানে আপনি বিটকয়েন, ইথেরিয়াম এবং অন্যান্য বহু ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনা-বেচা করতে পারবেন। নিচে ধাপে ধাপে বাইনান্স একাউন্ট খোলার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
৩.১. বাইনান্স ওয়েবসাইটে প্রবেশ
প্রথম ধাপে, আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজারে বাইনান্স ওয়েবসাইট (www.binance.com) ওপেন করুন। বাইনান্সের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করার পর, পেজের উপরে ডানদিকে "Register" অথবা "Sign Up" বাটনটি দেখতে পাবেন।
৩.২. রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু
বাইনান্স একাউন্ট খোলার জন্য "Sign Up" বাটনে ক্লিক করার পর একটি নতুন পেজে আপনাকে আপনার ইমেইল অ্যাড্রেস অথবা মোবাইল নম্বর দিতে হবে। আপনি ইমেইল বা মোবাইল নম্বরের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
৩.৩. ভ্যারিফিকেশন
- ভ্যারিফিকেশনের জন্য প্রথমেই আপনার দেশ ঠিক করে দিতে হবে।
- এরপর আপনার পারসোনাল ইনফরমেশন গুলো দিতে হবে।
- এরপর আপনি আপনার ন্যাশনাল আইডি, পাসপোর্ট অথবা ড্রাইভিং লাইসেন্স এর যেকোন একটি অপশন সিলেক্ট করবেন।
- এরপর আপনি দুইটি অপশন পাবেন। একটি আপনার পিসি বা মোবাইল থেকে আপলোড করতে পারবেন অথবা আপনি সরাসরি ছবি তুলতে পারবেন। আপনার ভোটার আইডি, পাসপোর্ট বা ড্রাইভিং লাইসেন্স যেটিই আপনি দিতে চান এই দুইটির যেকোন একটি বেছে নিন এবং আপনার ডকুমেন্ট সাবমিট করুন।
- ডকুমেন্ট আপলোড হয়ে গেলে একটি QR কোড দিবে। সেটি মোবাইলের QR কোড স্ক্যানারের মাধ্যমে স্ক্যান করে নিতে হবে।
- স্ক্যান করলে একটি লিংক পাওয়া যাবে। সেই লিংক এ প্রবেশ করতে হবে। এখানে আপনার ছবি নিবে। বিভিন্ন এংগেল থেকে ছবি নেওয়া হবে। এরপর তারা এটি ভ্যারিফিকেশনের জন্য পাঠাবে। Under Review দেখাবে। রিভিউ শেষ হলে দুই দিনের মধ্যে আপনার মেইল এ নোটিফায় করা হবে।
৩.৪. ডিপোজিট এবং ট্রেডিং শুরু
একাউন্ট ভেরিফাই হওয়ার পর, আপনি আপনার বাইনান্স একাউন্টে ডিপোজিট করতে পারবেন এবং ট্রেডিং শুরু করতে পারবেন। বাইনান্সে আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনার জন্য বিভিন্ন পেমেন্ট মেথড ব্যবহার করতে পারবেন, যেমন ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার, ক্রেডিট/ডেবিট কার্ড, বা পিয়ার টু পিয়ার (P2P) ট্রেডিং।
৪. বাইনান্স থেকে আয়
বাইনান্স থেকে আয় করার অনেক উপায় রয়েছে। এটি শুধু ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিংয়ের জন্য নয় বরং বিভিন্ন প্যাসিভ ইনকামের সুযোগও প্রদান করে। নিচে বাইনান্স থেকে আয় করার কিছু জনপ্রিয় এবং কার্যকর উপায় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
৪.১. ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং
বাইনান্সের সবচেয়ে প্রচলিত আয় করার উপায় হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং। আপনি বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনে এবং উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে লাভ অর্জন করতে পারেন। বাইনান্সে স্পট ট্রেডিং, মার্জিন ট্রেডিং এবং ফিউচার ট্রেডিংয়ের মত বিভিন্ন ট্রেডিং অপশন রয়েছে, যার মাধ্যমে আপনি আপনার ট্রেডিং কৌশল অনুযায়ী ইনকাম করতে পারেন।
- স্পট ট্রেডিং: সহজভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনা-বেচা করা।
- ফিউচার ট্রেডিং: এখানে আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সির ভবিষ্যত মূল্য অনুমান করে লিভারেজ ব্যবহার করে বড় মুনাফা করতে পারেন।
- মার্জিন ট্রেডিং: আপনি লোন নিয়ে ট্রেড করতে পারেন, যা লাভের পরিমাণ বাড়াতে সহায়ক হয়।
৪.২. বাইনান্স স্টেকিং
বাইনান্স স্টেকিং হলো প্যাসিভ ইনকাম করার একটি চমৎকার উপায়। আপনি আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য স্টেক করে লাভ (রিওয়ার্ড) পেতে পারেন। স্টেকিং মূলত ব্লকচেইন নেটওয়ার্কে অংশগ্রহণ করে ব্লকগুলো ভ্যালিডেট করার বিনিময়ে রিওয়ার্ড পাওয়া।
বাইনান্সে বিভিন্ন ক্রিপ্টোকারেন্সির স্টেকিং সেবা রয়েছে এবং এর মাধ্যমে আপনি আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি হোল্ড করে বসে থাকলেও মুনাফা করতে পারবেন।
৪.৩. বাইনান্স সেভিংস
বাইনান্স সেভিংস আরেকটি প্যাসিভ ইনকাম করার উপায়। এখানে আপনি আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি সেভিংস প্ল্যানে লক করে রাখতে পারেন এবং এর বিপরীতে সুদ (ইন্টারেস্ট) আয় করতে পারেন। বাইনান্স সেভিংসে দুটি প্রধান ধরণ রয়েছে:
- Flexible Savings: যেখানে আপনি যে কোনো সময় টাকা উত্তোলন করতে পারবেন।
- Locked Savings: নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি লক করে রাখা হয় এবং এ ক্ষেত্রে উচ্চতর সুদ পাওয়া যায়।
৪.৪. বাইনান্স লার্ন অ্যান্ড আর্ন
বাইনান্সের লার্ন অ্যান্ড আর্ন প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে বিভিন্ন টিউটোরিয়াল এবং কোর্স সম্পন্ন করে বিনামূল্যে ক্রিপ্টো আয় করতে পারেন। বাইনান্স নিয়মিতভাবে বিভিন্ন শিক্ষামূলক কোর্স অফার করে, যেখানে অংশগ্রহণ করে এবং কিছু সহজ প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আপনি বিভিন্ন টোকেন বা কয়েন উপহার হিসেবে পেতে পারেন।
৪.৫. বাইনান্স অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম
বাইনান্স থেকে ইনকাম করার আরেকটি দারুণ উপায় হলো বাইনান্স অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম। এখানে আপনি বাইনান্সে নতুন ব্যবহারকারী নিয়ে আসার বিনিময়ে কমিশন আয় করতে পারেন। আপনার রেফারেল লিংকের মাধ্যমে নতুন ব্যবহারকারীরা বাইনান্সে যোগ দিলে এবং ট্রেডিং শুরু করলে আপনি তাদের ট্রেডিং ফি-এর একটি অংশ কমিশন হিসেবে পাবেন।
৪.৬. বাইনান্স মাইনিং
যদি আপনার শক্তিশালী কম্পিউটার থাকে, তবে আপনি বাইনান্স পুল ব্যবহার করে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করতে পারেন। মাইনিং হলো ব্লকচেইনে ট্রানজেকশন ভ্যালিডেট করার প্রক্রিয়া এবং এর মাধ্যমে মাইনাররা রিওয়ার্ড হিসেবে ক্রিপ্টোকারেন্সি পায়। বাইনান্স একটি মাইনিং পুল অফার করে, যেখানে ব্যবহারকারীরা সহজেই মাইনিং করে মুনাফা অর্জন করতে পারে।
৪.৭. বাইনান্স ফিউচার রেফারেল প্রোগ্রাম
বাইনান্সের ফিউচার রেফারেল প্রোগ্রাম একটি নতুন ফিচার যা ব্যবহারকারীদের ফিউচার ট্রেডিংয়ে অংশগ্রহণের জন্য উৎসাহিত করে। আপনি যদি আপনার পরিচিতদের ফিউচার ট্রেডিংয়ে আগ্রহী করতে পারেন, তাহলে তাদের ট্রেডিংয়ের জন্য আপনি কমিশন আয় করতে পারবেন।
৪.৮. লিকুইড সুয়াপ
বাইনান্স লিকুইডিটি সুয়াপ একটি সিস্টেম যেখানে আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সি লিকুইডিটি প্রোভাইডার হিসেবে কাজ করতে পারেন। এতে আপনি আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রদান করে লেনদেন কার্যক্রমকে সহায়তা করতে পারেন এবং এর বিনিময়ে রিওয়ার্ড পান।
৫. বাইনান্স থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং করে আয়
বাইনান্স থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং করে আয় করা হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারের ওঠানামা থেকে মুনাফা অর্জনের অন্যতম জনপ্রিয় উপায়। আপনি কম দামে ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনে বেশি দামে বিক্রি করে আয় করতে পারেন। বাইনান্স প্ল্যাটফর্মে বিভিন্ন ধরনের ট্রেডিং অপশন রয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের নিজেদের ট্রেডিং কৌশল অনুযায়ী মুনাফা অর্জন করতে সহায়তা করে।
এখানে শুধুমাত্র Sopot Trading ই একটু বিস্তারিত ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হল। বাকিগুলোর একটি ধারণা মার দেওয়া হল। চলুন ধাপে ধাপে বাইনান্সে ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিং করে আয় করার পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা যাক।
৫.১. বাইনান্স অ্যাকাউন্ট তৈরি এবং ভেরিফাই
বাইনান্স ট্রেডিং শুরু করার জন্য প্রথমে আপনাকে একটি বাইনান্স অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে এবং ভেরিফাই করে নিতে হবে। এ সম্পর্কে উপরে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
৫.২. ফান্ড ডিপোজিট করুন
বাইনান্সে ট্রেডিং শুরু করার জন্য প্রথমে আপনার একাউন্টে ফান্ড ডিপোজিট করতে হবে। আপনি ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার, ক্রেডিট কার্ড, বা পিয়ার টু পিয়ার (P2P) মাধ্যমে টাকা জমা করতে পারেন। ফান্ড ডিপোজিট করার পর আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে পারবেন।
৫.৩. স্পট ট্রেডিং
স্পট ট্রেডিং হলো বাইনান্সের সবচেয়ে সাধারণ এবং সহজ ট্রেডিং অপশন। এখানে আপনি বর্তমান বাজার মূল্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে এবং বিক্রি করতে পারেন। নিচে ধাপে ধাপে বাইনান্সে স্পট ট্রেডিং করার পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হলো:
- লগইন করার পর বাইনান্স ড্যাশবোর্ডে যান।
- উপরের নেভিগেশন মেনু থেকে “Trade” মেনুতে ক্লিক করুন।
- এরপর ড্রপডাউন মেনু থেকে “Spot” নির্বাচন করুন। এটি আপনাকে সরাসরি স্পট ট্রেডিং পেজে নিয়ে যাবে।
- স্পট ট্রেডিং পেজে ঢোকার পর আপনি অনেক তথ্য দেখতে পাবেন। এখানে বিভিন্ন সেকশন থাকবে যা ট্রেডিং করতে আপনাকে সহায়তা করবে:
- বাজার বিশ্লেষণ (Market Analysis): ডান পাশে একটি চার্ট থাকবে, যেখানে আপনি বিভিন্ন সময়ের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য ওঠানামা দেখতে পাবেন।
- অর্ডার বুক (Order Book): বাম দিকে আপনি ক্রিপ্টোকারেন্সির ক্রেতা ও বিক্রেতার অর্ডারগুলো দেখতে পাবেন।
- ট্রেডিং অপশন: নিচের দিকে বিভিন্ন অর্ডার টাইপ (Market, Limit, Stop-Limit ইত্যাদি) এর অপশন দেখতে পাবেন।
- স্পট ট্রেডিং করতে হলে আপনাকে একটি ট্রেডিং পেয়ার নির্বাচন করতে হবে।
- উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি বিটকয়েন (BTC) থেকে ইউএসডি (USDT) ট্রেড করতে চান, তাহলে ট্রেডিং পেয়ার হিসেবে BTC/USDT নির্বাচন করুন।
- বাইনান্সে বিভিন্ন ক্রিপ্টো পেয়ার উপলব্ধ আছে যেমন BTC/ETH, BTC/BNB ইত্যাদি।
- অর্ডার দেওয়া: স্পট ট্রেডিং-এ আপনি মূলত দুটি ধরনের অর্ডার দিতে পারেন:
- (ক) মার্কেট অর্ডার (Market Order)
- মার্কেট অর্ডার হলো ট্রেডিংয়ের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি, যেখানে আপনি বর্তমান বাজার মূল্যে সরাসরি ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে বা বিক্রি করতে পারবেন।
- যদি আপনি বাজার মূল্যে দ্রুত ক্রিপ্টো কিনতে চান, তাহলে "Buy" বোতাম ক্লিক করুন।
- আপনি যেকোনো পরিমাণ ক্রিপ্টো কিনতে বা বিক্রি করতে পারেন।
- (খ) লিমিট অর্ডার (Limit Order)
- লিমিট অর্ডার ব্যবহার করে আপনি নির্দিষ্ট মূল্য নির্ধারণ করতে পারেন। যখন আপনার নির্ধারিত মূল্য পৌঁছাবে, তখন অর্ডারটি পূর্ণ হবে।
- "Buy" বোতাম ক্লিক করে আপনি একটি লিমিট প্রাইস নির্ধারণ করতে পারেন।
- উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি বিটকয়েনের মূল্য ২৫,০০০ ইউএসডি এলে কিনতে চান, তাহলে লিমিট অর্ডার দিন এবং ২৫,০০০ নির্ধারণ করুন।
- (গ) স্টপ-লিমিট অর্ডার (Stop-Limit Order)
- স্টপ-লিমিট অর্ডার হলো একটি উন্নত অর্ডার টাইপ, যেখানে আপনি স্টপ এবং লিমিট প্রাইস নির্ধারণ করে ঝুঁকি ম্যানেজ করতে পারেন। এটি ট্রেডারদের ক্ষতি কমাতে এবং মুনাফা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে।
- একবার অর্ডার দেওয়ার পর, আপনি "Open Orders" এবং "Order History" সেকশন থেকে আপনার ট্রেডিংয়ের অর্ডারগুলো পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
- Open Orders: যেসব অর্ডার এখনো সম্পন্ন হয়নি, সেগুলো এখানে দেখতে পাবেন।
- Order History: আপনার পূর্বের ট্রেডগুলো এখানে দেখা যাবে।
- আপনার অর্ডার সফলভাবে সম্পন্ন হলে আপনার অ্যাকাউন্টে ক্রিপ্টোকারেন্সি জমা হবে। আপনি চাইলে তা হোল্ড করতে পারেন বা অন্য কোনো ক্রিপ্টোকারেন্সিতে কনভার্ট করতে পারেন।
- স্পট ট্রেডিংয়ে লাভ করতে হলে আপনাকে একটি সঠিক কৌশল প্রয়োগ করতে হবে। ক্রিপ্টো মার্কেটে দাম দ্রুত ওঠানামা করে, তাই আপনাকে বাজার বিশ্লেষণ করে সঠিক সময়ে কিনতে ও বিক্রি করতে হবে। কিছু জনপ্রিয় ট্রেডিং কৌশল হলো:
- ডে ট্রেডিং: যেখানে একই দিনে ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনে ও বিক্রি করে লাভ করা হয়।
- স্ক্যাল্পিং: স্বল্প সময়ের জন্য ট্রেড করা এবং দ্রুত ছোট লাভ অর্জন।
- Buy and Hold: কম দামে কিনে দীর্ঘ সময়ের জন্য ধরে রাখা এবং উচ্চ মূল্যে বিক্রি করা।
৫.৪. Margin Trading (মার্জিন ট্রেডিং)
মার্জিন ট্রেডিং হলো একটি উন্নত ট্রেডিং পদ্ধতি যেখানে আপনি লোন নিয়ে ট্রেড করতে পারেন। এর মাধ্যমে আপনি আপনার আসল বিনিয়োগের তুলনায় বড় পরিমাণ ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে বা বিক্রি করতে পারবেন। তবে, এতে ঝুঁকিও বেশি থাকে, কারণ যদি মূল্য আপনার বিপরীতে যায়, তবে লোন শোধ করতে সমস্যা হতে পারে।
৫.৪.১. কিভাবে কাজ করে
লিভারেজ ব্যবহার: বাইনান্সে ৩x বা ১০x পর্যন্ত লিভারেজ নিতে পারেন, যার মানে আপনার আসল বিনিয়োগের ৩ বা ১০ গুণ পর্যন্ত লোন নিয়ে ট্রেড করতে পারবেন।
- লং এবং শর্ট পজিশন
- লং পজিশন: যদি মনে করেন দাম বাড়বে, তাহলে লং পজিশন নিয়ে মুনাফা করতে পারেন।
- শর্ট পজিশন: যদি মনে করেন দাম কমবে, তাহলে শর্ট পজিশন নিন।
৫.৪.২. ঝুঁকি
মার্জিন ট্রেডিংয়ে ঝুঁকি বেশি, কারণ আপনি লোন ব্যবহার করছেন। যদি ট্রেড আপনার বিপরীতে যায়, তাহলে আপনাকে লিকুইডেশন (বিনিয়োগ হারানো) এর মুখোমুখি হতে হতে পারে।
৫.৫. P2P Trading (পিয়ার টু পিয়ার ট্রেডিং)
P2P ট্রেডিং হলো একটি সরাসরি লেনদেনের পদ্ধতি, যেখানে আপনি অন্য কোনো ব্যবহারকারীর কাছ থেকে সরাসরি ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে বা বিক্রি করতে পারেন। বাইনান্স এখানে কেবল একটি মাধ্যম হিসেবে কাজ করে।
৫.৫.১. কিভাবে কাজ করে
- ক্রেতা-বিক্রেতা সংযোগ: আপনি একজন ক্রেতা বা বিক্রেতার সাথে সরাসরি লেনদেন করতে পারবেন।
- পেমেন্ট মেথড: বিক্রেতাকে টাকা পাঠানোর জন্য ব্যাংক ট্রান্সফার, মোবাইল ব্যাংকিং বা অন্যান্য পেমেন্ট পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন।
- Escrow System: বাইনান্স পেমেন্ট সফল হওয়া পর্যন্ত আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি নিরাপদে রাখে। যখন ক্রেতা পেমেন্ট নিশ্চিত করে, তখন বাইনান্স ক্রিপ্টোকারেন্সি ছেড়ে দেয়।
৫.৫.২. সুবিধা
- এখানে কোনো মধ্যস্থতাকারী নেই, তাই সরাসরি ব্যবহারকারীর সাথে লেনদেন করা সম্ভব।
- স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করে ক্রিপ্টো কিনতে বা বিক্রি করতে পারবেন।
৫.৬. Convert (কনভার্ট)
Convert হলো একটি সহজ অপশন যেখানে আপনি একটি ক্রিপ্টোকারেন্সিকে অন্য ক্রিপ্টোকারেন্সিতে রূপান্তর করতে পারেন। এটি মূলত ক্রিপ্টো ট্রেডিংয়ের একটি দ্রুত ও সরাসরি পদ্ধতি, যেখানে কোনো ট্রেডিং চার্ট বা জটিল অপশন নেই।
৫.৬.১. কিভাবে কাজ করে
- আপনি যদি একাধিক ক্রিপ্টো হোল্ড করেন এবং কোনো জটিলতা ছাড়াই তা অন্য ক্রিপ্টোতে রূপান্তর করতে চান, তাহলে এই অপশনটি ব্যবহার করতে পারেন।
- উদাহরণস্বরূপ, আপনি যদি BTC থেকে ETH-তে রূপান্তর করতে চান, তাহলে Convert অপশন ব্যবহার করে সরাসরি এক ক্লিকে ট্রেড করতে পারবেন।
৫.৬.২. সুবিধা
- দ্রুত এবং সহজ রূপান্তর।
- ট্রেডিং চার্ট বা জটিল ট্রেডিং অপশন নেই।
৫.৭. Block Trade (ব্লক ট্রেড)
Block Trade হলো বড় অংকের ক্রিপ্টো ট্রেডিং করার জন্য একটি বিশেষ পদ্ধতি। সাধারণত বড় প্রতিষ্ঠান বা হোল্ডাররা এই পদ্ধতি ব্যবহার করেন।
৫.৭.১. কিভাবে কাজ করে
- এখানে বড় অংকের ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে বা বিক্রি করতে পারবেন।
- সাধারণত সাধারণ ট্রেডিং পুলের বাইরে এই ট্রেড করা হয়, যাতে বড় ট্রেডের কারণে বাজার মূল্য ওঠানামা না করে।
৫.৭.২. সুবিধা
- বড় ট্রেডের জন্য এটি একটি উপযুক্ত পদ্ধতি।
- আপনি আপনার ট্রেড সরাসরি খোলা বাজারে না করে, ব্যক্তিগতভাবে করতে পারবেন।
৫.৮. Trading Bots (ট্রেডিং বট)
ট্রেডিং বট হলো স্বয়ংক্রিয় প্রোগ্রাম যা আপনার জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজার বিশ্লেষণ করে এবং অর্ডার প্লেস করে। এটি মূলত নির্দিষ্ট কৌশলের উপর ভিত্তি করে কাজ করে এবং আপনার পক্ষে ট্রেড পরিচালনা করে।
৫.৮.১. কিভাবে কাজ করে
- Grid Trading Bot: এই বটটি বাজারের ওঠানামার ভিত্তিতে ক্রিপ্টো কিনে ও বিক্রি করে। যখন দাম কমে, তখন কিনে এবং দাম বাড়লে বিক্রি করে।
- DCA Bot (Dollar-Cost Averaging): এটি একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর সমান পরিমাণে ক্রিপ্টো কিনে নেয়, যা দীর্ঘমেয়াদী লাভের জন্য একটি সাশ্রয়ী কৌশল।
৫.৮.২. সুবিধা
- স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেড করা যায়।
- আপনার নির্ধারিত কৌশল অনুযায়ী বট কাজ করবে, তাই আপনি ট্রেডিংয়ে কম সময় দিতে পারেন।
৫.৯. Copy Trading (কপি ট্রেডিং)
Copy Trading হলো একটি পদ্ধতি, যেখানে আপনি পেশাদার ট্রেডারদের ট্রেড কপি করতে পারবেন। আপনি একজন সফল ট্রেডারের ট্রেড কৌশল অনুসরণ করে আপনার পোর্টফোলিওতে লাভবান হতে পারেন।
৫.৯.১. কিভাবে কাজ করে
- একজন সফল ট্রেডারের ট্রেড কপি করার জন্য তাকে ফলো করুন।
- তার কৌশল অনুযায়ী আপনার অ্যাকাউন্টে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ট্রেড হবে।
৫.৯.২. সুবিধা
- যদি আপনি নতুন হন বা নিজে ট্রেডিংয়ে সময় দিতে না চান, তাহলে এটি একটি ভালো পদ্ধতি।
- অভিজ্ঞ ট্রেডারের সফল কৌশল অনুসরণ করে লাভবান হতে পারেন।
৫.১০. APIs (অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস)
APIs হলো একটি ইন্টারফেস, যা আপনার অ্যাকাউন্টে প্রোগ্রামেটিক অ্যাক্সেস দেয়। এর মাধ্যমে আপনি আপনার ট্রেডিং কৌশলগুলো স্বয়ংক্রিয় করতে পারবেন এবং তৃতীয় পক্ষের ট্রেডিং সফটওয়্যার বা অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করতে পারবেন।
৫.১০.১. কিভাবে কাজ করে
- আপনি যদি একজন ডেভেলপার হন বা অটোমেশন পছন্দ করেন, তাহলে API ব্যবহার করে আপনার ট্রেডিং পরিচালনা করতে পারেন।
- বিভিন্ন ট্রেডিং সফটওয়্যার ব্যবহার করে অটোমেটেড অর্ডার প্লেস করতে পারবেন।
৫.১০.২. সুবিধা
- স্বয়ংক্রিয় ট্রেডিং কৌশল পরিচালনা করতে পারবেন।
- একাধিক ট্রেডিং প্যারামিটার সেট করতে পারবেন যা সাধারণভাবে বাইনান্স প্ল্যাটফর্মে সম্ভব নয়।
৬. FAQ
৬.১. বাইনান্সে ক্রিপ্টো ট্রেড করে কিভাবে টাকা আয় করা যায়?
বাইনান্সে ক্রিপ্টো ট্রেড করে আয় করতে, প্রথমে আপনার একটি বাইনান্স একাউন্ট থাকতে হবে। এরপর আপনি স্পট, ফিউচার, মার্জিন ট্রেডিংয়ের মতো ট্রেডিং অপশনগুলো ব্যবহার করতে পারেন। মুনাফা অর্জনের জন্য কম দামে ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনে পরে বেশি দামে বিক্রি করে আয় করতে পারেন।
৬.২. ক্রিপ্টো স্পট ট্রেড করে কিভাবে আয় করা যায়?
ক্রিপ্টো স্পট ট্রেডিংয়ের মাধ্যমে আয় করতে, আপনাকে নির্দিষ্ট মূল্য অনুযায়ী ক্রিপ্টোকারেন্সি কিনতে হবে এবং যখন এর মূল্য বাড়ে, তখন তা বিক্রি করে লাভ করা যায়। স্পট ট্রেডিং হল সরাসরি মার্কেট প্রাইসে ক্রিপ্টো কেনা-বেচার প্রক্রিয়া।
৬.৩. ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে কিভাবে আয় করা যায়?
ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করার অনেক উপায় আছে, যেমন ট্রেডিং, স্ট্যাকিং, লেন্ডিং, এবং মাইনিং। আপনি আপনার ক্রিপ্টো হোল্ড করে রেখে স্ট্যাকিং করে সুদ অর্জন করতে পারেন, অথবা বিভিন্ন ট্রেডিং স্ট্র্যাটেজি ব্যবহার করে লাভ করতে পারেন।
৬.৪. বিনান্সে কিভাবে ফ্রি বিটকয়েন পাওয়া যায়?
বাইনান্সে ফ্রি বিটকয়েন পেতে, আপনি বাইনান্সের রেফারেল প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করতে পারেন, যেখানে নতুন ব্যবহারকারীদের আমন্ত্রণ করে আপনি বোনাস হিসেবে বিটকয়েন পেতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন প্রচারণা এবং বাইনান্স ফিউচার টুর্নামেন্টের মাধ্যমেও ফ্রি বিটকয়েন পাওয়া যায়।
৭. সমাপ্তি
আপনার মূল্যবান সময় দিয়ে আমাদের এই লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ! আশা করছি "বাইনান্স একাউন্ট খোলার নিয়ম, বাইনান্স থেকে আয়" শীর্ষক এই লেখা আপনার জন্য উপকারী হয়েছে। যদি আপনার কোনো মতামত বা প্রশ্ন থাকে, দয়া করে নিচের কমেন্ট বক্সে শেয়ার করুন। আপনার প্রতিক্রিয়া আমাদের উন্নতির পথকে আরও প্রশস্ত করবে।
ধন্যবাদ
সামরিন ইনফো।
সামরিন ইনফো এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url